আদালতে পেশ করা হল সুদীপ্ত সেন ও সঙ্গীদের,তিন মাসের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর নির্দেশ সেবির
গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক আমানতকারী। সারদা গোষ্ঠীতে তিন দফায় তিরিশ হাজার টাকা লগ্নি করেছিলেন তিনি। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের কেমিক্যাল মাঠ এলাকার বাসিন্দা ঊর্মিলা প্রামাণিক পরিচারিকার কাজ করতেন। প্রতারণার খবর সামনে আসতেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ঊর্মিলা প্রামাণিক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন আরও এক এজেন্ট লক্ষ্মণ ঘোড়োই। ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা সারদার এই এজেন্ট আমানতকারীদের ভয়ে শনিবার বিষ খান।
এই সময়: কাশ্মীরের সোনমার্গে ধরা পড়েছেন সুদীপ্ত সেন৷ আর সেই খবরে কাঁপুনি ধরেছে এ রাজ্যের বহু তাবড় রাজনীতিকদের হাড়ে৷ সুদীপ্ত সেন মুখ খুললে ফেঁসে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন শাসক এবং বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-নেত্রীই৷ কলকাতায় এনে পুলিশ যখন তাঁকে জেরা করবে, তখন তিনি কোন নেতার নাম করে বসবেন, সেই আতঙ্কই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে রাজনীতির কারবারীদের৷
ইতিমধ্যেই নানা মহলে শোনা যাচ্ছে, ফেরার হওয়ার আগেই সিবিআইকে লেখা এক দীর্ঘ চিঠিতে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বহু রাজনৈতিক নেতাকে নানা ভাবে টাকা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সুদীপ্ত৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং সারদা সংস্থার মিডিয়া গোষ্ঠীর পদত্যাগী সিইও কুণাল ঘোষকে যে প্রতি মাসে ১৬ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়া হত, তা-ও নাকি ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে৷ শাসক দলের আরও অনেক নেতা-মন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে সারদা গোষ্ঠীর অনুগ্রহ পেয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে নানা সূত্রে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের নেতারা যতই অস্বীকার করুন, জেলায় জেলায় যে তৃণমূলের বহু নেতা সারদার নানা ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিলেন, এজেন্ট এবং আমানতকারীরা তা খোলাখুলিই স্বীকার করছেন এখন৷ বহু জায়গায় সারদা এবং শাসক দলের অফিস পাশাপাশি রয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও আছে৷ উঠে এসেছে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নামও৷
একই ভাবে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন বিরোধী সিপিএম নেতাদের অনেকেও৷ সে কথা আঁচ করেই দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু আগেভাগেই ঘোষণা করেছেন তদন্তে যদি তাঁদের দলের কারও সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে দল যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷
সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন সারদার মতো বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল বাম আমলেই৷ তদন্তে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অন্য দিকে, সিপিএম নেতাদের পাল্টা দাবি, বাম সরকার এই সব সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই বিধানসভায় বিল এনেছিল৷ তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানোও হয়৷ কিন্ত্ত গত দু'বছরে তৃণমূল সরকার ওই বিলের ব্যাপারে কোনও তত্পরতা দেখায়নি৷ শাসক এবং বিরোধী দলের এই চাপানউতোরের মধ্যেও কিন্ত্ত রাজনীতিকদের আতঙ্ক চাপা পড়েনি৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদার যে গার্ডেন রিসর্ট রয়েছে, সেখানে মূলত শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের একটা বড় অংশের নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে পুলিশ নানা সূত্রে জানতে পেরেছে৷ এমনকি, অনেক আমলা এবং পুলিশ অফিসারেরও সেখানে অবাধ গতিবিধি ছিল বলেও জানা গিয়েছে৷
রাজ্যের ক্ষমতা দখলের আগেই অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে সারদা-সহ এই ধরনের আর্থিক সংস্থার ওঠাবসা ছিল৷ বিধানসভার ভোটের প্রচারে তৃণমূল এই সব সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার৷ কোথাও কোথাও এই সব সংস্থার কর্তা খোলাখুলি তৃণমূলের হয়ে প্রচারেও নেমে পড়েছিলেন৷ ভোটে জেতার পর এই ধরনের আর্থিক সংস্থার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শাসক দলের ঘনিষ্ঠতাও কারও নজর এড়ায়নি৷
এখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় দায় এড়িয়ে যেতে চাইছে তৃণমূল৷ একই অবস্থা সিপিএম-সহ বিরোধী শিবিরেরও৷ তদন্ত যদি ঠিক পথে এগোয়, যদি সরকারি প্রভাব না খাটানো হয়, তা হলে সুদীপ্তবাবুকে জেরা করলে অনেক রাঘব বোয়াল ফেঁসে যেতে পারেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
সেবি অবশ্য আগেই সারদার কার্যকলাপের ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিল বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই৷ সারদার নামে অভিযোগের কথা জানানোর পাশাপাশি সেই অভিযোগ নিয়ে তাদের বক্তব্যও রাজ্যকে জানিয়েছিল শেয়ারবাজার নিয়ামক সংস্থা৷
সোমবার কলকাতায় বণিকসভা ফিকির ও রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের এক আলোচনা চক্রের ফাঁকে উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, 'চিট ফান্ড নিয়ে আমার দফতরে অনেক আগেও অভিযোগ এসেছে৷ সেই অভিযোগ আমি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলিকেও জানিয়েছি৷' সারদার সম্পত্তি বাজেয়ান্ত করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরাতে রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী, কারণ এই সংক্রান্ত কোনও আইন রাজ্যে নেই৷ তবে রাজ্য চিঠি পাঠালেও কেন কেন্দ্রীয় প্রাইজ চিটস অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিমস (ব্যানিং) অ্যাক্ট ১৯৭৮ লাগু করছে না? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, এত দিনে পদক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় সরকার, তবে বিষয়টি নিয়ে আগেও তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শচীন পাইলটের সঙ্গে কথা বলেছিলেন৷
এ দিন বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের অনুষ্ঠানে সংস্থার সাধারণ সচিব ডি এস রাওয়াত স্পষ্ট ভাবে বলেন, 'এই ধরনের সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত৷ এই ধরনের কার্যকলাপ ঠেকানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব৷' অনুষ্ঠানে শ্রেয়ির ভাইস চেয়ারম্যান সুনীল কানোরিয়া সত্যম কম্পিউটারের প্রসঙ্গ তুলে মনে করিয়ে দেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করে কী ভাবে ম্যানেজমেন্ট বদল করে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করেছিল৷
সর্বোচ্চ আদালত৷ পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত মামলার বিরুদ্ধে আবেদন করেছে সাহারা৷ এ জন্য সাহারা
সংস্থা 'বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত' করার চেষ্টা করচে বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷
তিনি কোটি বিনিয়োগকারীকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত না দিলে, সাহারার দুই সংস্থা- সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্টের
সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবিকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই রায়ে বিরুদ্ধে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করার
আবেদন দাখিল করেছে সাহারা৷ এদিন সেবি শীর্ষ আদালতকে এ কথা জানায়৷ আর তাতেই সাহারার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ ও জে
এস খেহারের বেঞ্চ৷
এদিন আদালত অবমাননা মামলায় কোনও জবাবদিহি না করায় সাহারা ও সুব্রত রায়কে জোর ধমক দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এক সপ্তাহের মধ্যে সেবির দায়ের করা
এই মামলার জবাব দিতে সাহারাকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ৷ আগামী ২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত৷
শীর্ষ আদালতে এদিন সাহারার আইনজীবী বলেন, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরাতে সেবি সুব্রত রায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চাইছে৷ আর এই মামলায়
সুব্রত রায় কোনও পক্ষই নন৷ সুতরাং তাঁর সম্পত্তি কী করে বাজেয়াপ্ত হতে পারে৷ এর উত্তরে শীর্ষ আদালত বলেন, 'কে পক্ষ কে পক্ষ নয়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ
নয়৷ সুপ্রিম কোর্টে রায় বেরিয়ে যাওয়ার পরও কী করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে আপনার মক্কেল? এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননা৷ আর সুপ্রিম কোর্টের
নির্দেশের পরও কী করে টাকা ফেরানোর বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয় সেবির কাছে৷ এটাও আদালত অবমাননা৷ সাহারার উচিত একের পর এক ভুল
না করে বরং ভুলগুলি শোধরানো৷'
সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির সঙ্গে মোটেই সহযোগিতা করছে না সাহারা৷ এদিন সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে বলে যে ক'জন
বিনিয়োগকারীকে পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সকলকে ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ আর যাদের পাওয়া যাচ্ছে না, বা ভুয়ো বিনিয়োগকারী বলে মনে করা হচ্ছে
তাদের টাকা যেন সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়৷
গত ১৫ মার্চ সাহারার কর্ণধার সুব্রত রায় ও দুই ডিরেক্টর অশোক রায়চৌধুরী, রবিশঙ্কর দুবেকে গ্রেপ্তার বা আটক করার অনুমতি চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আর্জি
জানায় সেবি৷ এই মামলার শুনানিতেই সেবিকে ন্যায্য বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সেবির উপর চাপ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সাহারা
এক বিবৃতিতে জানায়, কাউকে আটক করার ক্ষমতাই নেই সেবির৷ ভিত্তিহীন খবর রটিয়ে মিডিয়ার সামনে সাহারার বদনাম করা হচ্ছে৷ গত ১০ এপ্রিল মুম্বইয়ে
সেবির দপ্তরে হাজিরা দেন সুব্রত রায়৷ ছোট বিনিয়োগকারীদের টাকা কীভাবে ফেরাতে চান, কী পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত সেবিকে জানাতে সুব্রত
রায়কে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷
সেবির অভিযোগ, অনিয়ম করে বাজার থেকে টাকা তুলেছে সুব্রত রায়ের দু'টি সংস্থা- সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্ট৷ গত বছর
অগস্টে এই দুই সংস্থায় টাকা রাখা তিন কোটি বিনিয়োগকারীকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে ১০ এপ্রিল সাহারা সেবির অফিস
থেকে বেরিয়ে জানায়, বিনিয়োগকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এবং সেবির কাছে ৫,১২০ কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে৷ যেটা সেবি
বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেয়নি এখনও৷ সুব্রত রায় সেদিন বলেছিলেন, 'সেবির আধিকারিকেরা কেবল আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পত্তি নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করে, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি৷ আমার ব্যক্তিগত কত সম্পত্তি আছে সেটাই যেন সেবির কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যার৷' সুব্রত রায় জানিয়েছিলেন, মোট পাঁচ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তাঁর৷
কলকাতা: ১৬৫ টি কোম্পানি৷ সেগুলির মাথায় অসংখ্য ডিরেক্টর৷ এমনকী বাড়ির রাঁধুনিকেও ডিরেক্টর বানিয়েছেন সুদীপ্ত সেন! সারদাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য এল৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো থেকে ডিরেক্টর বানানো-সবই মর্জিমতো করেছেন সারদা গোষ্ঠীর সম্রাট৷ হেমন্ত প্রধান নামে ওই রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশের সন্দেহ, সুদীপ্ত সেনের জালিয়াতির সাম্রাজ্যে এরকম ভুয়ো ডিরেক্টরের সংখ্যা কম নয়৷ শুধুমাত্র মানুষকে চমক দিতেই সারদা গোষ্ঠীর নামে কেন্দ্রের কাছে ১৬৫টি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিলেন তিনি৷
পুলিশের জালে হেমন্ত ধরা পড়তেই দাবি করেছেন, তাঁকে না জানিয়ে সংস্থার ডিরেক্টর করেছেন সুদীপ্ত সেন৷ পুলিশের দাবি, হেমন্তর মতোই এরকম নিজের ইচ্ছেমতো অসংখ্য ব্যক্তিকে ডিরেক্টর বানিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ এইসব ভুয়ো ডিরেক্টরদের খোঁজে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ৷
শুধু ডিরেক্টরের সংখ্যা নয়, সারদা গোষ্ঠী ব্যাঙের ছাতার মতো এক এক করে বাড়িয়ে গিয়েছে কোম্পানির সংখ্যাও৷ সাধারণ মানুষকে কোম্পানির সংখ্যা দেখিয়ে চমক দেওয়ার লক্ষ্যেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল৷ সূত্রের খবর, এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির নাম দেখিয়ে আইনের ফাঁক খোঁজারও অনবরত চেষ্টা করে গিয়েছেন সুদীপ্ত সেন৷
কিন্তু সংস্থা তৈরি করলেই হয় না৷ কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকে রেজিস্ট্রিকৃতও করতে হয়৷ মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, সারদা গোষ্ঠীর নামে ১৬৫টি সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ সারদা অ্যাড এজেন্সি থেকে অ্যাভিয়েশন, সারদা লেদার কমপ্লেকস সহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন ছিল৷ সারদার ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, অধিকাংশ রেজিষ্ট্রীকৃত কোম্পানির কোনও অস্তিত্বই নেই৷ কোনও কোম্পানির মূলধন হিসেবে দেখানো হয়েছে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা, কোনওটায় আবার নাম মাত্র ২ লক্ষ টাকা৷ জানা যাচ্ছে, সারদা রিয়ালিটি ইন্ডিয়া লিমিটেডের অ্যাকাউন্টেই সবথেকে বেশি টাকা পয়সা লেনদেন করা হত৷ এই কোম্পানিতেই মূলধনের পরিমাণও সবথেকে বেশি দেখানো হয়েছে৷ ৫৫ কোটি টাকা৷
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, অতিরিক্ত কোম্পানি খোলার দিকে এত ঝোঁক ছিল কেন সুদীপ্ত সেনের? শুধুই কী সাধারণ মানুষকে চমক দেওয়ার জন্য? নাকি, অন্য কোনও কারণও ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ৷ (ফাইল চিত্র)
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59/35994
চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেনের ছায়াসঙ্গী৷ সারদা-সাম্রাজ্যের অলিখিত নম্বর টু৷ তিনি দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ সারদা গোষ্ঠীর একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন রিসেপশনিস্ট হিসেবে৷ কর্ণধারের নজরে পড়ে যান৷ তার জেরেই রিসেপশনিস্ট থেকে একেবারে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর৷ এই দেবযানীকে সঙ্গে নিয়েই কাশ্মীরে পালান সুদীপ্ত৷ চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক, সারদা-সাম্রাজ্যের বাদশা, সুদীপ্ত সেনের সবথেকে আস্থাভাজনের নাম দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ সারদাকাণ্ডের পর থেকেই দু'জনে উধাও হয়ে যান৷
কে এই দেবযানী মুখোপাধ্যায়? ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানের বাসিন্দা বছর ২৭-এর দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে রিসেপশনিস্ট হিসেবে সারদা গোষ্ঠীর একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেন দেবযানী৷ দ্রুত নজরে পড়ে যান সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের৷ তারপর থেকেই জেট গতিতে উত্থান৷ রিসেপশনিস্ট থেকে ২০১১ সালে সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, ডিরেক্টর হওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই সংস্থার সাড়ে চার হাজার শেয়ার দেবযানীর নামে করে দেওয়া হয়৷ গত সোমবার দেবযানীর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি৷
আগে ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানে থাকতেন দেবযানী৷ পরে ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে ফ্ল্যাট কেনেন৷ এছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় দেবযানীর ফ্ল্যাট রয়েছে বলে খবর৷ দক্ষিণ কলকাতায়, শহরের সবথেকে উঁচু বহুতলেও ফ্ল্যাট কিনেছেন দেবযানী৷ জানা গিয়েছে, এ সব ফ্ল্যাটগুলি দেবযানীকে উপহার দেন সুদীপ্ত সেন৷
সূত্রের খবর, অল্পি দিনের মধ্যেই সুদীপ্ত সেনের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন দেবযানী৷ আর্থিক লেনদেন-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজই তিনি সামলাতেন৷ সারদা গোষ্ঠীর মূল অফিস সল্টেলেকের মিডল্যান্ড পার্কে বেশিরভাগই মহিলা কর্মচারী৷ তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন দেবযানী৷ সারদা গোষ্ঠীর অলিখিত নম্বর টু৷ জানা গিয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতেন সুদীপ্ত সেন৷ তারপর গাড়ি করে দেবযানীকে বাড়ি ছেড়ে আসতেন সারদার কর্ণধার৷
রাজ্যের বাইরেও সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যেতেন দেবযানী৷ গত বছর ডিসেম্বরে বীরভূমে একটি রিসর্ট কেনে সারদা গোষ্ঠী৷ সেই রিসর্টের উদ্বোধনে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল দেবযানী ও সংস্থার এক অধিকর্তা মনোজ কুমার নাগেলকে৷ নাগেলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
জাহাজ ডুবছে দেখে দেবযানীকে সঙ্গে নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছিলেন চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেন৷ এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই আর দেবযনীকে দেখা যাচ্ছিল না৷ শেষমেশ দু'জনেই পুলিশের জালে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35992-2013-04-23-16-32-45
নয়াদিল্লি: সারদার সঙ্গে জড়িত নেতা-মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবি এবার তৃণমূলের অন্দরেই৷ মঙ্গলবার সংসদ ভবনে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন তৃণমূলের সাংসদরা৷ উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সি৷ সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের সাংসদ শিশির অধিকারী দাবি তোলেন, সারদাকাণ্ডে যে সমস্ত নেতা মন্ত্রীদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের দল থেকে পদত্যাগ করা উচিত৷ কারণ এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে৷
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষও৷ সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে না বললেও দলের অনেক সাংসদই শিশির অধিকারীর সঙ্গে সহমত৷
সারদাকাণ্ডে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার৷ একের পর এক নেতার সঙ্গে সারদার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠছে৷ এই পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে থেকেই সারদা-ঘনিষ্ঠদের পদত্যাগের দাবি তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়ালো বলেই মনে করছে রাজনৈতির মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35986-2013-04-23-15-28-24
সারদার গণেশ ওল্টানোর খবর চাউর হওয়ার আগে থেকেই বেপাত্তা সুদীপ্তবাবু৷ সারদা পরিচালিত সংবাদপত্র ও চ্যানেলগুলির বেতন বেশ কিছু ধরেই বন্ধ ছিল৷ এজেন্ট ও আমানতকারীরাও বিপর্যয়ের প্রহর গুনছিলেন৷ গত ১৬ এপ্রিল সুদীপ্তবাবুর নামে বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় পাঁচটি অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ নিজস্ব সংবাদ মাধ্যমের তরফেই ওই অভিযোগ দায়ের হয়৷ মঙ্গলবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, ১০ এপ্রিল ভোরে গাড়ি নিয়ে কলকাতা ছাড়েন সুদীপ্ত সেন৷ গাড়িতে চালক ছাড়াও দেবযানী ও অরবিন্দ ছিলেন৷ কলকাতা থেকে তাঁরা চলে যান রাঁচিতে৷ সেখানে গাড়ি ও চালক দু'জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়৷ যদিও পুলিশ সুদীপ্তবাবুর খোঁজ শুরু করে ১৭ এপ্রিল থেকে৷ তখন সারদাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তাল৷ ভাঙচুর শুরু হয়েছে সারদার বিভিন্ন দফতরে৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷ পুলিশ সুদীপ্তবাবুর খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে৷ জেরা শুরু হয় তাঁর ঘনিষ্ঠদের৷ সেই জেরাতেই পুলিশ সুদীপ্তবাবুর গাড়ির চালকের হদিস পায়৷ তাঁকে জেরা করেই জানা যায়, সুদীপ্তবাবু কলকাতা ছেড়ে রাঁচিতে গিয়েছিলেন৷ পুলিশ যখন রাঁচির কথা জানতে পারে, তখন অবশ্য তিনি আর রাঁচিতে নেই৷ উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তিনি থাকতে শুরু করেছেন৷ আগ্রা, দিল্লি, দেরাদুন, হরিদ্বার, হলদোয়ানি, ভাতিন্ডা, উধমপুর হয়ে তিনি সোমবার রাতে ভূস্বর্গের হোটেলে ওঠেন৷ তিনি বেছে নেন পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে৷ কারণ, সেই সব জায়গায় প্রচুর বাইরের লোক যায়৷ সন্দেহ করার সম্ভাবনাও তাই কম৷ কোথাও তিনি একদিনের বেশি থাকেননি৷ একমাত্র রাঁচিতেই দু'দিন ছিলেন৷ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, 'গাড়িতে চলাফেরার করার আরও একটা কারণ, প্লেনে উঠতে ভয় পেতেন সুদীন্তবাবু৷ অসম, ত্রিপুরা অথবা ছত্তিশগড়--সব জায়গাতেই গাড়িই ছিল তাঁর বাহন৷ বিদেশে তাঁর সংস্থা বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন করলেও দীর্ঘ বিমানযাত্রার ভয়ে তিনি সেখানে যাননি৷'
কী ভাবে ধরা পড়লেন সুদীপ্তবাবু?
রাঁচিতে গিয়ে পুলিশ হোটেলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়, সুদীপ্তবাবু সপার্ষদ এখানে এসেছিলেন৷ হোটেল থেকেই পাওয়া যায় তাঁদের সাদা রঙের স্করপিও গাড়ির নম্বর৷ রাঁচি থেকে বাকি পথটা গাড়ি চালান অরবিন্দই৷ কোনও ভাড়া করা চালক ছিল না৷ পুলিশ গাড়ির নম্বর পাঠিয়ে দেয় অন্য রাজ্যের পুলিশের কাছে৷ খোঁজ নেওয়া বিভিন্ন টোল প্লাজায়৷ সেই সব প্লাজায় সুদীপ্তবাবুর গাড়ির নম্বরের খোঁজ মেলে৷ কিছু টোল প্লাজায় সিসি টিভির ফুটেজও মেলে৷ তাতে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সারদার নাটের গুরু রয়েছেন উত্তর ভারতেই৷
সুদীপ্তবাবু কিন্ত্ত পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেষ্টার কসুর করেনি৷ কারণ, তাঁর নিজের ফোন থেকে পরিচিতদের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ করেছিলেন ১৪ এপ্রিল৷ তখন তিনি বলেছিলেন, তাঁর গন্তব্য হতে চলেছে নেপাল৷ এটা আসলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করারই ফিকির৷ ততদিনে সুদীন্ত বুঝে ফেলেছেন তাঁর সাম্রাজ্য পতনের মুখে৷ ১৫ এপ্রিল সারদার অধীনস্থ সংস্থাগুলির বন্ধ করে দেওয়ার যে মেল পাঠিয়েছিলেন সুদীপ্তবাবু, তা আসে অন্যের মেল থেকে৷ এটাও পুলিশকে অন্ধকারে রাখার জন্যই৷ তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মেলটি সম্ভবত পাঠিয়েছিলেন দেবযানী৷
কলকাতা থেকে উত্তর ভারত পরিক্রমার সময় তিনি গাড়ি পাল্টাননি৷ সাদা স্করপিও গাড়ি ছিল তাঁর সঙ্গী৷ পথে বিভিন্ন জায়গায় তেল ভরতে হয়েছে৷ মেটাতে হয়েছে বিলাসবহুল হোটেলের বিলও৷ কিন্ত্ত কোথাও তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেননি৷ বিভিন্ন নামের ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তুলেছেন৷ নগদে মিটিয়েছেন যাবতীয় বিল৷ ফলে, ধরা পড়ার সময় তাঁর পকেটে হাজার বিশেক টাকার বেশি মেলেনি৷
ধ্বংসের আঁচ সুদীপ্তবাবু বেশ কিছুদিন ধরেই পাচ্ছিলেন৷ তার প্রমাণ সিবিআইকে লেখা চিঠি৷ ৬ তারিখ পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি জানান, কে কে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন৷ কী ভাবেই বা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন৷ এঁরা সবাই সাধারণ লোক নন, বহু কেউকেটা লোকও ছিল তাঁর তালিকায়৷ একই চিঠি পাঠানো হয় সেবি ও আরবিআই-সহ কুড়ি-পঁচিশটি সংস্থার কাছে৷ এমনকী আত্মহত্যার হুমকি দিয়েও সহানুভূতি কুড়োতে চেয়েছেন৷ ১৫-১৬ এপ্রিলের পর তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন৷ সবটাই ছিল আগে থেকে ছক কষা৷ আটঘাট বেঁধেই তিনি এগোচ্ছিলেন৷
বসে ছিল না পুলিশও৷ সুদীপ্তবাবুকে গ্রেপ্তার করতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই নির্দেশ পাওয়ার পর পুলিশও আটঘাট বেঁধেই এগোচ্ছিল৷ টোল প্লাজা থেকে পাওয়া গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় দল পাঠিয়ে জাল বিছায় পুলিশ৷ ইতিমধ্যে সুদীপ্তবাবুরা শ্রীনগর থেকে ৫০ কিমি দূরে সোনমার্গে পা রেখেছেন বলে বিধাননগর পুলিশের কাছে খবর আসে৷ বিধাননগর পুলিশ সেই খবর জানিয়ে দেয় গান্ডেরওয়াল পুলিশকে৷ পাঠানো হয় তাঁদের ছবিও৷ সোনমার্গের স্নো ল্যান্ড হোটেলে তাঁরা উঠেছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট (ডব্লিউ বি ২২ ইউ ৬৭৪২) লাগানো গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল হোটেলের পার্কিংয়ে৷ কাশ্মীর পুলিশের তাই দুইয়ে দুইয়ে চার করতে কোনও অসুবিধা হয়নি৷
পুলিশের একটি সূত্রের অনুমান, যে দেবযানীর আঁচলে তিনি বিশাল সাম্রাজ্যের চাবি বেঁধে দিয়েছিলেন, তাঁরই ছোট্ট একটি ভুল পুলিশকে অনেক সুবিধা করে দিয়েছে৷ সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে তিনি পালিয়ে বেড়ালেও আত্মসমর্পণের রাস্তা খুঁজছিলেন৷ আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, 'কয়েকদিন ধরেই দেবযানীর পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন৷ ওঁকে একপ্রকার নজরবন্দি করে রেখেছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ সোমবার রাতেও দেবযানী মোবাইল থেকে আমাকে ফোন করেছিলেন৷ তখনও আত্মসমর্পণের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে৷' ভুল ছিল এটাই৷ কারণ, পুলিশ দেবযানী-সহ তিন জনের মোবাইলের উপর নজর রাখছিল৷ আড়ি পাতা হচ্ছিল তাঁদের ঘনিষ্ঠদের মোবাইলের উপরেও৷ কিন্ত্ত অজ্ঞাতবাস-পর্বে তিন জনেরই মোবাইল বন্ধ ছিল৷ শেষ মুহূর্তে দেবযানী মোবাইল চালু করায় পুলিশের কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়৷
ব্যস, বদলে গেল ঢাকুরিয়ার বনেদি মুখোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ের লাইফস্টাইল৷ ঢাকুরিয়ার ১ নম্বর মুখার্জিপাড়া লেনের একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে বাবা-মা আর বোনকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন ৪৮, ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের ফ্ল্যাটে৷ ব্যক্তিত্ব, চৌকস কথাবার্তা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা-- সব মিলিয়ে সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন সহকর্মীদের কাছে৷ এক সময়ের সহকর্মীরা বলছেন, 'যাঁকে মাথায় করে রাখছেন স্বয়ং মালিক, তাঁকে গুরুত্ব দেবে না কোন মূর্খ?'
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে হঠাত্ই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন দেবযানী৷ তার আগে মাস দুয়েক অফিসে গেলেও পাঁচতলায় নিজের চেম্বারে আর যেতেন না৷ বসতেন একতলায় ব্যাঙ্কিং বিভাগেই৷ সহকর্মীদের এখন মনে হচ্ছে, অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করেই কোম্পানি বন্ধ করেছেন মালিক, যার সবটাই জানতেন দেবযানী৷ তিনি শেষ দু' মাসে ব্যাঙ্কিং বিভাগে বসে কত টাকা লোপাট করেছেন, সেটাই এখন তাঁর সহকর্মীদের জেরা করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ৷ শেষ তিন মাস বেতন না পাওয়া সারদার হেড অফিসের এই কর্মীরা ইতিমধ্যে বিধাননগর সিটি পুলিশের কাছে জবানবন্দিও দিয়েছে৷ সেই শান্ত-নম্র মেয়েটা এত বড় চক্রে জড়িত, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মুখার্জি পাড়ার বাসিন্দারা৷ তাঁরা ওই পরিবারকে এখনও যথেষ্ট সম্ভ্রমের চোখে দেখেন৷ কেননা ওঁদের পরিবারের নামেই তাঁদের পাড়ার রাস্তা৷ এখনও ওই বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় পাত পেড়ে খেতে যান প্রতিবেশীরা৷ সেই বাড়ির মেয়ের ছবি কাগজে বেরিয়েছে এত বড় প্রতারণার কারিগর হিসেবে, তাতে হতভম্ব প্রতিবেশীরা৷ পাড়ার এক ভদ্রমহিলা বলছিলেন, 'শেষ দু'বছর শুধু খাওয়ানোই নয়, গরিবদের কম্বল আর কাপড়ও বিতরণ করেছেন ওঁরা৷ দেবযানী কোম্পানির বড় কর্ত্রী হওয়ায় সেই-ই নাকি এই খরচা দিয়েছে বলে শুনেছিলাম৷ এখন বুঝতে পারছি, সবই গরিবের চুরি করা পয়সায়৷'
দেবযানীর নতুন ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা খুব বেশী কারও সঙ্গে মিশতে দেখেননি তাঁকে৷ ওই আবাসনের এক মহিলা বলেন, ভদ্র-শিক্ষিত-রুচিশীল পরিবার বলতে যা বোঝায়, পরিবারটি তেমনই৷ তবে দেবযানীর গতিবিধি নিয়ে এখন সন্দেহ হচ্ছে প্রতিবেশীদের৷ কেননা, সকালে অফিস গেলেও মাঝে-মধ্যেই দেবযানী বাড়ি ফিরতেন অনেক রাতে৷ আবাসনের সামনে গাড়ি তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত৷ তবে ওই পর্যন্তই৷
সংস্থার কর্মীরা দেবযানী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তুলেছেন সুদীপ্তর কথাও৷ একেবারে কর্পোরেট কায়দায় অফিস চালানো দেবযানীকে মাঝে মাঝে স্যরকে মৃদু বকুনি দিতেও দেখেছেন ঘনিষ্ঠরা৷ মনীষীদের নাম করে দিন শুরু করা, অতি সাধারণ ভাবে নিজেকে তুলে ধরা সেই সুদীপ্ত সেন যে এত বড় প্রতারক, তা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন এত দিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা৷ তাঁরা স্তম্ভিত, তাতে দেবযানীও সামিল থাকায়৷
চিটফান্ড কেলঙ্কারি নিয়ে চাপের মুখে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই অবস্থায় সারদার দুর্নীতি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল তৃণমূলের অন্দরেই। সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সাংসদ ভবনে বৈঠকে বসে তৃণমূলের সংসদীয় কমিটি। সেখানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সামনে ক্ষোভ উগড়ে দেন দলের অনেকে।
শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি সারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে একাধিক সাংসদের। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক দল। তা না হলে নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। ফলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এখনও কোনও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বহু দলীয় কার্যালয়ে হামলা হতে পারে। আশঙ্কা এমনও।
গতকাল দলের কেউ জড়িত নন এই দাবি করে সাধারণ মানুষদের ঘারেই প্রতারণার দায় চাপান মুখ্যমন্ত্রী। মদন মিত্রর মতো নেতা মন্ত্রীরা সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। ভুঁইফোড় সংস্থাটির নানা অনুষ্ঠানের সারদার পাশে থাকার কথাও বলেছেন তিনি। সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বহু অনুষ্ঠানের শোভা বাড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে দলের বহু নেতারা সারদার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। তাঁরা মানুষকে সারদার প্রতি আনুগত্য দেখাতে ও সারদায় প্রকল্প নিতে বলতেন বলে অভিযোগ।
প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষোভের মাত্রা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ভাঙচুর চালাচ্ছেন প্রতারিত গ্রাহকরা। হামলার শিকার হচ্ছেন সারদার গোষ্ঠীর এজেন্টরাও। সারদা গোষ্ঠীর মতো ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রবিবার পথে নেমেছিল কংগ্রেস ও সিপিআইএম।
সারদা গোষ্ঠীতে লগ্নি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার আমানতকারী। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে কোটি কোটি টাকা তুলে বিপদে পড়েছেন সারদার অসংখ্য এজেন্ট। ইতিমধ্যেই আত্মঘাতী হয়েছেন কয়েকজন এজেন্ট এবং আমানতকারী। রবিবারও দিনভর সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন অভিস এবং এজেন্টদের ওপর হামলা হয় রাজ্যজুড়ে।
শিলিগুড়ির সাউদিঙি এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট উদয় চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালান আমানতকারীরা। মারধর করা হয় উদয় চৌধুরীকেও। আমানতকারীদের থেকে প্রায় দেড়কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। পরে পুলিস গিয়ে উদ্ধার করে উদয় চৌধুরীকে।
কোচবিহারের মাথাভাঙা শহরে সারদা গোষ্ঠীর বন্ধ অফিসে ভাঙাচুর চালান আমানতকারীরা। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অফিস সিল করে দেয় পুলিস।
বর্ধমানের রবীন্দ্রপল্লী ও কালনাগেট এলাকা থেকে দুই সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিস। অভিযোগ, শনিবার রাতে মাধব দাস ও জয়ন্ত চৌধুরী নামে দুই এজেন্ট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় মানুষ দুজনকে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। রবিবার তাদের গ্রেফতার করে পুলিস।
বর্ধমানের মেমারি থেকে এক চিটফান্ড সংস্থার ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে পুলিস। ধৃতের নাম জয়ন্ত দাস। সারদাকাণ্ডের পর আমানতকারীরা তাঁর কাছে জমা টাকা চাইতে গেলে ঝামেলা বাধে। পরে পুলিস গিয়ে জয়ন্ত দাসকে গ্রেফতার করে।
সোনারপুর থানার নরেন্দ্রপুরে গ্রীন ব্যাঙ্ক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা গ্রাহকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করে। গ্রাহকদের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছিল না সংস্থাটি। সংস্থার এজেন্ট পরিতোষ পাণ্ডা পলাতক। রবিবার তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আমানতকারীরা।
সোনারপুরেরই এপি নগরে সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ভাঙচুর চালান এজেন্ট ও গ্রাহকরা। সোনারপুর থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।
বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দমদমে তৃণমূল কংগ্রেসের হামলার মুখে পড়লেন সারদা গোষ্ঠীর আমানতকারী এবং এজেন্টরা। আড়াই নম্বর গেটে সারদার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পর, রবিবার সকালে এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে একটি ডেপুটেশন জমা দেন আমানতকারী এবং এজেন্টরা। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা যশোর রোড অবরোধ করেন। আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর আড়াই নম্বর গেটের দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এজেন্ট-আমানতকারীদের মারধর করে বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় সারদা গোষ্ঠীর কার্যালয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। তাঁদের অভিযোগ, আমানতকারীদের টাকা আত্মসাত করে সংস্থার আধিকারিকরা অফিস বন্ধ রেখে পালিয়ে গিয়েছেন।
শেখ শাহাজাদা নামে এক এজেন্টের অধীনে প্রায় আশি জন সাব-এজেন্ট সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এক কোটি আশি লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। টাকা ফেরত দিতে না পারায় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মারধরের হাত থেকে বাঁচতে পুরুলিয়ায় নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন তিলক পাল নামে সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্ট। রবিবার দুপুরে কয়েকজন আমানতকারী তাঁকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে আচমকা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে। গণরোষের হাত থেকে বাঁচতে থানায় ঢুকে পড়েন ওই এজেন্ট। পরে আমানতকারীদের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিস তাঁকে আটক করে।
সারদাকাণ্ডের প্রতিবাদে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে রবিবার সুজন চক্রবর্তী ও কান্তি গাঙ্গুলির নেতৃত্বে মিছিল করে সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা।
সারদার মতো চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে এবার পথে নামল কংগ্রেস। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে পথ অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। মিছিলও করেন তারা। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের গ্রেফতারির দাবি জানানোর পাশাপাশি গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানানো উঠেছে।
সারদা গ্রুপের কর্ণধার ও তাঁর দুই শাকরেদকে ৪ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করল গান্ডেরবাল সেশন আদালত। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে আজই ২ টো ১৫ বা ৩ টে ৪৫ এর দুটি ফ্লাইটের একটিতে তাঁদের কলকাতা আনা হবে। তবে দুটিই দিল্লির কানেকটিং ফ্লাইট হওয়ায় রাজধানীতে কিছুক্ষণের জন্য নামবেন তাঁরা। দুই ক্ষেত্রেই আজ সন্ধের মধ্যে কলকাতায় আনা হবে তাঁদের। আইন অনুযায়ী কলকাতায় পৌঁছনোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের আদালতে পেশ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার পুলিসের জালে ধরা পড়েন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা সারদা গোষ্ঠীর দুই উচ্চপদস্থ কর্তা দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ সিং চৌহানও। গতকালই কাশ্মীরের সোনমার্গের একটি হোটেল থেকে পুলিশের জালে ধরা পরেন সারদা গ্রুপের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুদীপ্ত সেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন অপর পলাতক ডিরেক্টর দেবযানী মুখার্জি।
সারদা চিট ফান্ডের কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ১৬ এপ্রিল থেকেই গা ঢাকা দেন সুদীপ্ত সেন এবং সারদা চিট ফান্ডের একাধিক কর্তারা।
সূত্রে খবর, ধৃত অরবিন্দ সিং চৌহান সারদা গ্রুপের অন্যতম ডাইরেক্টর। দেবযা
আদালতে পেশ করা হল সুদীপ্ত সেন ও তাঁর সঙ্গীদের। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে এই ধৃতদের গান্ডেরবাল জেলা সেশন জাজের আদালতে পেশ করা হল। এরপর ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লি হয়ে তাঁদের আনা হবে কলকাতায়। আজই সুদীপ্তদের কলকাতায় আনা হবে৷ গান্ডেরবাল আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, বুধবার পুলিসের জালে ধরা পড়েন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা সারদা গোষ্ঠীর দুই উচ্চপদস্থ কর্তা দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ সিং চৌহানও। গতকালই কাশ্মীরের সোনমার্গের একটি হোটেল থেকে পুলিশের জালে ধরা পরেন সারদা গ্রুপের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুদীপ্ত সেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন অপর পলাতক ডিরেক্টর দেবযানী মুখার্জি।
সারদা চিট ফান্ডের কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ১৬ এপ্রিল থেকেই গা ঢাকা দেন সুদীপ্ত সেন এবং সারদা চিট ফান্ডের একাধিক কর্তারা।
সূত্রে খবর, ধৃত অরবিন্দ সিং চৌহান সারদা গ্রুপের অন্যতম ডাইরেক্টর। দেবযানী দেবী বহু দিন ধরেই সুদীপ্ত বাবুর ছায়াসঙ্গী। সারদা গ্রুপের প্রতারণার যাবতীয় তথ্য, হিসেব নিকেশ নখদর্পনে ছিল তাঁর। পুলিসের তথ্য অনুযায়ী চিটফান্ড কেলেঙ্কারির বিপদ আঁচ করে মার্চের শেষেই গা ঢাকা দিয়ে দেন দেবযানী।
তিন মাসের মধ্যে সারদার সমস্ত আমানতকারীকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবি। সেবির তরফে প্রকাশিক এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আমানতকারীর টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সমস্ত শেয়ার বাজারে সারদা গোষ্ঠীর প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোরাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরে পাওনা টাকা মেটানোর দাবি তুলছেন সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টরাও।
তিন মাসের মধ্যে সারদার সমস্ত আমানতকারীকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দিল সেবি। সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণায় এপর্যন্ত সর্বস্বান্ত হয়েছেন রাজ্যের কয়েক লক্ষ মানুষ। মঙ্গলবার একটি নির্দেশিকায় সেবি বলেছে,তিন মাসের মধ্যে সমস্ত আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে হবে।
সারদা গোষ্ঠীর সমস্ত বিনিয়োগ স্কিম তিন মাসের মধ্যে বন্ধ করতে হবে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সমস্ত শেয়ার বাজারে সারদা গোষ্ঠী ও সুদীপ্ত সেনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
তবে আশঙ্কায় এজেন্ট ও আমানতকারীরা। সোনমার্গে সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারির খবর পাওয়ার পর নতুন করে আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন এজেন্টরা। কিন্তু মনের কোণে আশঙ্কা থেকেই গেছে। টাকা আদৌ আছে না গেছে?
অবস্থা বেগতিক বুঝে ১০ এপ্রিল ভোরে কলকাতা ছাড়েন সুদীপ্ত সেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও সারদা গোষ্ঠীর পদস্থ আধিকারিক অরবিন্দ সিং চৌহান। পুলিসের চোখে ধুলো দিতে এই ক-দিনে তাঁরা উত্তর ভারতের এক শহর থেকে অন্য শহরে চষে বেরিয়েছেন। ধরা পড়ার ভয়ে কোথাও বেশিদিন থাকেননি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
সারদা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর মনোজ নাগেলকে গ্রেফতারের পরই পুলিস জানতে পারে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায় একসঙ্গে রয়েছেন। ১০ এপ্রিল ভোর চারটেয় কলকাতা ছাড়েন সুদীপ্ত সেন। স্করপিও গাড়িতে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দ সিং চৌহান ও গাড়ির চালক। ১২ এপ্রিল রাঁচি পৌঁছে
চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন তাঁরা। এ বার গাড়ি চালাতে শুরু করেন অরবিন্দ সিং চৌহান।
হরিদ্বার-দেরাদুনের মতো উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহরে ছিলেন তাঁরা। সব জায়গাতেই অরবিন্দ সিং চৌহানের নামে ঘর ভাড়া করা হয়। হোটেলের বিল মেটানো হয় নগদ টাকায়। কোনও জায়গাতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেননি সুদীপ্ত সেনরা। তিনজনের মোবাইল ফোনই ছিল বন্ধ। সোমবার রাতে জম্মু-কাশ্মীরের সোনমার্গে পৌঁছন তাঁরা। গ্রেফতারের সময় সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে উদ্ধার হয় কুড়ি হাজার টাকা।
সম্ভাব্য যে সব জায়গায় সুদীপ্ত সেন যেতে পারেন সে সব জায়গায় তাঁর ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ছবি পাঠায় পুলিস। তাঁদের সঙ্গে গাড়ি রয়েছে বলেও পুলিস জানতে পারে। সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে আটকের পর বিধাননগর পুলিসকে তাঁদের ছবি পাঠায় জম্মু-কাশ্মীর পুলিস। ছবি দেখে বিধাননগর পুলিস নিশ্চিত হওয়ার পরই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
নিজের ৪০ বছরের রাজনীতির জীবনে এমন `অপদার্থ` সরকার দেখেন নি। আজ দলের আইন অমান্য কর্মসূচীতে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই ভাষাতেই তোপ দাগলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করেন না। এভাবে কোনও সরকার চলতে পারে না। এতবড় অপদার্থ সরকার তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দেখেননি। আজ এভাষাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
চিটফান্ড ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত কমিশনে অনাস্থা জানাল কংগ্রেস । প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন, গরীব মানুষদের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে তাঁরা কমিশন মানবেন না।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। চিটফান্ড কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি সমেত বেশ কয়েক দফা দাবিতে আজ রাজ্য জুড়ে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। কলকাতাতেও চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। আলিপুরে ডিএম অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি অবিলম্বে চিটফান্ড কাণ্ডে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।
বাড়ির রাঁধুনিকে করে দিয়েছেন চিট ফান্ড সংস্থার অধিকর্তা। এমনই ভেল্কি জানতেন শঙ্কর সেন। না, সুদীপ্ত নয়, এই শঙ্কর নামেই পরিচিত ছিল এন্টালির হাজরা বাগানের এক যুবক। বর্তমানে যার পরিচয় সুদীপ্ত সেন।
এন্টালির হাজরাবাগানের এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন শঙ্কর সেন ও তাঁর পরিবারের অন্যান্যরা। এখন উঠে যাওয়া যোগেশচন্দ্র বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল শঙ্কর। সেই শঙ্করই যে আজকের সুদীপ্ত সেন, ছবি দেখার পর তা বুঝতে পেরেছেন প্রতিবেশিরা।
সেই সময় নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে শঙ্কর সেন নাকি একবছর জেলও খেটেছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শঙ্কর সেনের এই সুদীপ্ত সেন হয়ে ওঠার পথ যে খুব একটা মসৃণ ছিল না তা প্রথম থেকেই বোঝা গিয়েছিল।
পোষা গুণ্ডা ভয় দেখিয়ে জোর করে কম দামে জমি কিনে বিক্রি করা থেকে শুরু। আশির দশকে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতার স্নেহধন্য হয়ে পড়ে শঙ্কর। বাম আমলে জমির ও ফ্ল্যাটের অবৈধ ব্যবসা করার সময় সংযোগ হয় কয়েকজন পুলিস অফিসারের সঙ্গে। নয়া সরকার আসার আগে থেকেই পুরনো সংযোগ ফের চালু করে বিরোধীদের ঘনিষ্ঠ হন শঙ্কর। সেই সময় অবশ্য বদলে গিয়েছে নাম। তারপরেই রাজ্যে পরিবর্তন। রাজনীতির রথে ভর দিয়ে রাজ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঝড় তুলে দেওয়া।
Palash Biswas
No comments:
Post a Comment