চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেনের ছায়াসঙ্গী৷ সারদা-সাম্রাজ্যের অলিখিত নম্বর টু৷ তিনি দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ সারদা গোষ্ঠীর একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন রিসেপশনিস্ট হিসেবে৷ কর্ণধারের নজরে পড়ে যান৷ তার জেরেই রিসেপশনিস্ট থেকে একেবারে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর৷ এই দেবযানীকে সঙ্গে নিয়েই কাশ্মীরে পালান সুদীপ্ত৷ চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক, সারদা-সাম্রাজ্যের বাদশা, সুদীপ্ত সেনের সবথেকে আস্থাভাজনের নাম দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ সারদাকাণ্ডের পর থেকেই দু'জনে উধাও হয়ে যান৷ 


কে এই দেবযানী মুখোপাধ্যায়? ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানের বাসিন্দা বছর ২৭-এর দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে রিসেপশনিস্ট হিসেবে সারদা গোষ্ঠীর একটি সংস্থায় কাজ শুরু করেন দেবযানী৷ দ্রুত নজরে পড়ে যান সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের৷ তারপর থেকেই জেট গতিতে উত্থান৷ রিসেপশনিস্ট থেকে ২০১১ সালে সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, ডিরেক্টর হওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই সংস্থার সাড়ে চার হাজার শেয়ার দেবযানীর নামে করে দেওয়া হয়৷ গত সোমবার দেবযানীর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি৷ 
আগে ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানে থাকতেন দেবযানী৷ পরে ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে ফ্ল্যাট কেনেন৷ এছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় দেবযানীর ফ্ল্যাট রয়েছে বলে খবর৷ দক্ষিণ কলকাতায়, শহরের সবথেকে উঁচু বহুতলেও ফ্ল্যাট কিনেছেন দেবযানী৷ জানা গিয়েছে, এ সব ফ্ল্যাটগুলি দেবযানীকে উপহার দেন সুদীপ্ত সেন৷ 

সূত্রের খবর, অল্পি দিনের মধ্যেই সুদীপ্ত সেনের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন দেবযানী৷ আর্থিক লেনদেন-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজই তিনি সামলাতেন৷ সারদা গোষ্ঠীর মূল অফিস সল্টেলেকের মিডল্যান্ড পার্কে বেশিরভাগই মহিলা কর্মচারী৷ তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন দেবযানী৷ সারদা গোষ্ঠীর অলিখিত নম্বর টু৷ জানা গিয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতেন সুদীপ্ত সেন৷ তারপর গাড়ি করে দেবযানীকে বাড়ি ছেড়ে আসতেন সারদার কর্ণধার৷ 
রাজ্যের বাইরেও সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যেতেন দেবযানী৷ গত বছর ডিসেম্বরে বীরভূমে একটি রিসর্ট কেনে সারদা গোষ্ঠী৷ সেই রিসর্টের উদ্বোধনে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল দেবযানী ও সংস্থার এক অধিকর্তা মনোজ কুমার নাগেলকে৷ নাগেলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ 
জাহাজ ডুবছে দেখে দেবযানীকে সঙ্গে নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছিলেন চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেন৷ এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই আর দেবযনীকে দেখা যাচ্ছিল না৷ শেষমেশ দু'জনেই পুলিশের জালে৷ 

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35992-2013-04-23-16-32-45

নয়াদিল্লি: সারদার সঙ্গে জড়িত নেতা-মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবি এবার তৃণমূলের অন্দরেই৷ মঙ্গলবার সংসদ ভবনে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন তৃণমূলের সাংসদরা৷ উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সি৷ সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের সাংসদ শিশির অধিকারী দাবি তোলেন, সারদাকাণ্ডে যে সমস্ত নেতা মন্ত্রীদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের দল থেকে পদত্যাগ করা উচিত৷ কারণ এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে৷


এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষও৷ সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে না বললেও দলের অনেক সাংসদই শিশির অধিকারীর সঙ্গে সহমত৷ 
সারদাকাণ্ডে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার৷ একের পর এক নেতার সঙ্গে সারদার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠছে৷ এই পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে থেকেই সারদা-ঘনিষ্ঠদের পদত্যাগের দাবি তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়ালো বলেই মনে করছে রাজনৈতির মহল৷ 

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35986-2013-04-23-15-28-24


কাশ্মীরের হোটেলে হাতকড়া
এই সময়: বিমান বা ট্রেনে তিনি পারতপক্ষে উঠতেন না৷ কারণ, তাতে গতিবিধির প্রমাণ থাকে৷ গাড়িতে চলাফেরা করাই ছিল তাঁর কাছে নিরাপদ৷ অথচ সেই গাড়ির সূত্রেই অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন৷ সোমবার রাতে কাশ্মীরের সোনমার্গের একটি হোটেল থেকে কাশ্মীর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে৷ সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে ছিলেন সারদার দুই শীর্ষ কর্মী দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও অরবিন্দকুমার চৌহান৷ পুলিশ তাঁদেরও গ্রেফতার করেছে৷ কাশ্মীর পুলিশের আইজি এ জি মির জানান, দিল্লির বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে তাঁরা হোটেলে ঢুকেছিলেন৷ সুদীপ্তবাবুরা যে কাশ্মীরে আছেন সেই খবর তাঁরা কলকাতা পুলিশ মারফত পেয়েছিলেন৷ গান্ডেরওয়ালের পুলিশ সুপার শহিদ আহমেদ বলেন, 'ওই তিন জন পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট লাগানো গাড়িতে সোনমার্গে আসেন৷ নম্বর প্লেট দেখেই ওঁদের শনাক্ত করা হয়৷' সারদার কলকাতা অফিসের সর্বময় কর্ত্রী ছিলেন দেবযানী৷ অরবিন্দকুমার চৌহান ঝাড়খণ্ডে সারদার ব্যবসা সামলাতেন৷ গ্রেফতার হওয়ার সময় বিশাল সাম্রাজ্যের মালিকের পকেটে ছিল মাত্র হাজার বিশেক টাকা৷ 

সারদার গণেশ ওল্টানোর খবর চাউর হওয়ার আগে থেকেই বেপাত্তা সুদীপ্তবাবু৷ সারদা পরিচালিত সংবাদপত্র ও চ্যানেলগুলির বেতন বেশ কিছু ধরেই বন্ধ ছিল৷ এজেন্ট ও আমানতকারীরাও বিপর্যয়ের প্রহর গুনছিলেন৷ গত ১৬ এপ্রিল সুদীপ্তবাবুর নামে বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় পাঁচটি অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ নিজস্ব সংবাদ মাধ্যমের তরফেই ওই অভিযোগ দায়ের হয়৷ মঙ্গলবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, ১০ এপ্রিল ভোরে গাড়ি নিয়ে কলকাতা ছাড়েন সুদীপ্ত সেন৷ গাড়িতে চালক ছাড়াও দেবযানী ও অরবিন্দ ছিলেন৷ কলকাতা থেকে তাঁরা চলে যান রাঁচিতে৷ সেখানে গাড়ি ও চালক দু'জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়৷ যদিও পুলিশ সুদীপ্তবাবুর খোঁজ শুরু করে ১৭ এপ্রিল থেকে৷ তখন সারদাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তাল৷ ভাঙচুর শুরু হয়েছে সারদার বিভিন্ন দফতরে৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷ পুলিশ সুদীপ্তবাবুর খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে৷ জেরা শুরু হয় তাঁর ঘনিষ্ঠদের৷ সেই জেরাতেই পুলিশ সুদীপ্তবাবুর গাড়ির চালকের হদিস পায়৷ তাঁকে জেরা করেই জানা যায়, সুদীপ্তবাবু কলকাতা ছেড়ে রাঁচিতে গিয়েছিলেন৷ পুলিশ যখন রাঁচির কথা জানতে পারে, তখন অবশ্য তিনি আর রাঁচিতে নেই৷ উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তিনি থাকতে শুরু করেছেন৷ আগ্রা, দিল্লি, দেরাদুন, হরিদ্বার, হলদোয়ানি, ভাতিন্ডা, উধমপুর হয়ে তিনি সোমবার রাতে ভূস্বর্গের হোটেলে ওঠেন৷ তিনি বেছে নেন পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে৷ কারণ, সেই সব জায়গায় প্রচুর বাইরের লোক যায়৷ সন্দেহ করার সম্ভাবনাও তাই কম৷ কোথাও তিনি একদিনের বেশি থাকেননি৷ একমাত্র রাঁচিতেই দু'দিন ছিলেন৷ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, 'গাড়িতে চলাফেরার করার আরও একটা কারণ, প্লেনে উঠতে ভয় পেতেন সুদীন্তবাবু৷ অসম, ত্রিপুরা অথবা ছত্তিশগড়--সব জায়গাতেই গাড়িই ছিল তাঁর বাহন৷ বিদেশে তাঁর সংস্থা বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন করলেও দীর্ঘ বিমানযাত্রার ভয়ে তিনি সেখানে যাননি৷' 

কী ভাবে ধরা পড়লেন সুদীপ্তবাবু? 

রাঁচিতে গিয়ে পুলিশ হোটেলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়, সুদীপ্তবাবু সপার্ষদ এখানে এসেছিলেন৷ হোটেল থেকেই পাওয়া যায় তাঁদের সাদা রঙের স্করপিও গাড়ির নম্বর৷ রাঁচি থেকে বাকি পথটা গাড়ি চালান অরবিন্দই৷ কোনও ভাড়া করা চালক ছিল না৷ পুলিশ গাড়ির নম্বর পাঠিয়ে দেয় অন্য রাজ্যের পুলিশের কাছে৷ খোঁজ নেওয়া বিভিন্ন টোল প্লাজায়৷ সেই সব প্লাজায় সুদীপ্তবাবুর গাড়ির নম্বরের খোঁজ মেলে৷ কিছু টোল প্লাজায় সিসি টিভির ফুটেজও মেলে৷ তাতে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সারদার নাটের গুরু রয়েছেন উত্তর ভারতেই৷ 

সুদীপ্তবাবু কিন্ত্ত পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেষ্টার কসুর করেনি৷ কারণ, তাঁর নিজের ফোন থেকে পরিচিতদের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ করেছিলেন ১৪ এপ্রিল৷ তখন তিনি বলেছিলেন, তাঁর গন্তব্য হতে চলেছে নেপাল৷ এটা আসলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করারই ফিকির৷ ততদিনে সুদীন্ত বুঝে ফেলেছেন তাঁর সাম্রাজ্য পতনের মুখে৷ ১৫ এপ্রিল সারদার অধীনস্থ সংস্থাগুলির বন্ধ করে দেওয়ার যে মেল পাঠিয়েছিলেন সুদীপ্তবাবু, তা আসে অন্যের মেল থেকে৷ এটাও পুলিশকে অন্ধকারে রাখার জন্যই৷ তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মেলটি সম্ভবত পাঠিয়েছিলেন দেবযানী৷ 

কলকাতা থেকে উত্তর ভারত পরিক্রমার সময় তিনি গাড়ি পাল্টাননি৷ সাদা স্করপিও গাড়ি ছিল তাঁর সঙ্গী৷ পথে বিভিন্ন জায়গায় তেল ভরতে হয়েছে৷ মেটাতে হয়েছে বিলাসবহুল হোটেলের বিলও৷ কিন্ত্ত কোথাও তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেননি৷ বিভিন্ন নামের ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তুলেছেন৷ নগদে মিটিয়েছেন যাবতীয় বিল৷ ফলে, ধরা পড়ার সময় তাঁর পকেটে হাজার বিশেক টাকার বেশি মেলেনি৷ 

ধ্বংসের আঁচ সুদীপ্তবাবু বেশ কিছুদিন ধরেই পাচ্ছিলেন৷ তার প্রমাণ সিবিআইকে লেখা চিঠি৷ ৬ তারিখ পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি জানান, কে কে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন৷ কী ভাবেই বা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন৷ এঁরা সবাই সাধারণ লোক নন, বহু কেউকেটা লোকও ছিল তাঁর তালিকায়৷ একই চিঠি পাঠানো হয় সেবি ও আরবিআই-সহ কুড়ি-পঁচিশটি সংস্থার কাছে৷ এমনকী আত্মহত্যার হুমকি দিয়েও সহানুভূতি কুড়োতে চেয়েছেন৷ ১৫-১৬ এপ্রিলের পর তিনি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন৷ সবটাই ছিল আগে থেকে ছক কষা৷ আটঘাট বেঁধেই তিনি এগোচ্ছিলেন৷ 

বসে ছিল না পুলিশও৷ সুদীপ্তবাবুকে গ্রেপ্তার করতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই নির্দেশ পাওয়ার পর পুলিশও আটঘাট বেঁধেই এগোচ্ছিল৷ টোল প্লাজা থেকে পাওয়া গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় দল পাঠিয়ে জাল বিছায় পুলিশ৷ ইতিমধ্যে সুদীপ্তবাবুরা শ্রীনগর থেকে ৫০ কিমি দূরে সোনমার্গে পা রেখেছেন বলে বিধাননগর পুলিশের কাছে খবর আসে৷ বিধাননগর পুলিশ সেই খবর জানিয়ে দেয় গান্ডেরওয়াল পুলিশকে৷ পাঠানো হয় তাঁদের ছবিও৷ সোনমার্গের স্নো ল্যান্ড হোটেলে তাঁরা উঠেছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট (ডব্লিউ বি ২২ ইউ ৬৭৪২) লাগানো গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল হোটেলের পার্কিংয়ে৷ কাশ্মীর পুলিশের তাই দুইয়ে দুইয়ে চার করতে কোনও অসুবিধা হয়নি৷ 

পুলিশের একটি সূত্রের অনুমান, যে দেবযানীর আঁচলে তিনি বিশাল সাম্রাজ্যের চাবি বেঁধে দিয়েছিলেন, তাঁরই ছোট্ট একটি ভুল পুলিশকে অনেক সুবিধা করে দিয়েছে৷ সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে তিনি পালিয়ে বেড়ালেও আত্মসমর্পণের রাস্তা খুঁজছিলেন৷ আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, 'কয়েকদিন ধরেই দেবযানীর পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন৷ ওঁকে একপ্রকার নজরবন্দি করে রেখেছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ সোমবার রাতেও দেবযানী মোবাইল থেকে আমাকে ফোন করেছিলেন৷ তখনও আত্মসমর্পণের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে৷' ভুল ছিল এটাই৷ কারণ, পুলিশ দেবযানী-সহ তিন জনের মোবাইলের উপর নজর রাখছিল৷ আড়ি পাতা হচ্ছিল তাঁদের ঘনিষ্ঠদের মোবাইলের উপরেও৷ কিন্ত্ত অজ্ঞাতবাস-পর্বে তিন জনেরই মোবাইল বন্ধ ছিল৷ শেষ মুহূর্তে দেবযানী মোবাইল চালু করায় পুলিশের কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়৷ 

দেবযানী ম্যাডামের কথায় ওঠাবসা করতেন 'স্যর'
সুদীপ্ত ও তাঁর ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী
এই সময়: ঢাকুরিয়ার দেবযানী মুখোপাধ্যায়ই 'স্যরের' প্রধান পরামর্শদাতা৷ জালিয়াতিতে সুদীপ্ত সেন যদি শীর্ষে থাকেন, তা হলে তাঁর প্রধান বুদ্ধিদাতা সিটি কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী 'ম্যাডাম' দেবযানীই৷ দীর্ঘ দিন তাঁদের সঙ্গে সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কে সারদার হেড অফিসে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করা এক সহকর্মী বলছেন, 'ম্যাডামকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্তই নিতেন না স্যার৷ এমনও দিন গেছে, যখন দেবযানী অফিসে উপস্থিত না থাকায় জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্যর ফোন করে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন৷' অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে সামান্য রিসেপশনিস্ট হিসেবে ওই সংস্থায় কাজ করতে এসেছিলেন দেবযানী৷ তবে কয়েক মাসের মধ্যেই 'জহুরি' সুদীপ্তর চোখ চিনে নিয়েছিল 'ম্যাডাম'কে৷ 

ব্যস, বদলে গেল ঢাকুরিয়ার বনেদি মুখোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ের লাইফস্টাইল৷ ঢাকুরিয়ার ১ নম্বর মুখার্জিপাড়া লেনের একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে বাবা-মা আর বোনকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন ৪৮, ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের ফ্ল্যাটে৷ ব্যক্তিত্ব, চৌকস কথাবার্তা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা-- সব মিলিয়ে সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন সহকর্মীদের কাছে৷ এক সময়ের সহকর্মীরা বলছেন, 'যাঁকে মাথায় করে রাখছেন স্বয়ং মালিক, তাঁকে গুরুত্ব দেবে না কোন মূর্খ?' 

মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে হঠাত্ই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন দেবযানী৷ তার আগে মাস দুয়েক অফিসে গেলেও পাঁচতলায় নিজের চেম্বারে আর যেতেন না৷ বসতেন একতলায় ব্যাঙ্কিং বিভাগেই৷ সহকর্মীদের এখন মনে হচ্ছে, অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করেই কোম্পানি বন্ধ করেছেন মালিক, যার সবটাই জানতেন দেবযানী৷ তিনি শেষ দু' মাসে ব্যাঙ্কিং বিভাগে বসে কত টাকা লোপাট করেছেন, সেটাই এখন তাঁর সহকর্মীদের জেরা করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ৷ শেষ তিন মাস বেতন না পাওয়া সারদার হেড অফিসের এই কর্মীরা ইতিমধ্যে বিধাননগর সিটি পুলিশের কাছে জবানবন্দিও দিয়েছে৷ সেই শান্ত-নম্র মেয়েটা এত বড় চক্রে জড়িত, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মুখার্জি পাড়ার বাসিন্দারা৷ তাঁরা ওই পরিবারকে এখনও যথেষ্ট সম্ভ্রমের চোখে দেখেন৷ কেননা ওঁদের পরিবারের নামেই তাঁদের পাড়ার রাস্তা৷ এখনও ওই বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় পাত পেড়ে খেতে যান প্রতিবেশীরা৷ সেই বাড়ির মেয়ের ছবি কাগজে বেরিয়েছে এত বড় প্রতারণার কারিগর হিসেবে, তাতে হতভম্ব প্রতিবেশীরা৷ পাড়ার এক ভদ্রমহিলা বলছিলেন, 'শেষ দু'বছর শুধু খাওয়ানোই নয়, গরিবদের কম্বল আর কাপড়ও বিতরণ করেছেন ওঁরা৷ দেবযানী কোম্পানির বড় কর্ত্রী হওয়ায় সেই-ই নাকি এই খরচা দিয়েছে বলে শুনেছিলাম৷ এখন বুঝতে পারছি, সবই গরিবের চুরি করা পয়সায়৷' 

দেবযানীর নতুন ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা খুব বেশী কারও সঙ্গে মিশতে দেখেননি তাঁকে৷ ওই আবাসনের এক মহিলা বলেন, ভদ্র-শিক্ষিত-রুচিশীল পরিবার বলতে যা বোঝায়, পরিবারটি তেমনই৷ তবে দেবযানীর গতিবিধি নিয়ে এখন সন্দেহ হচ্ছে প্রতিবেশীদের৷ কেননা, সকালে অফিস গেলেও মাঝে-মধ্যেই দেবযানী বাড়ি ফিরতেন অনেক রাতে৷ আবাসনের সামনে গাড়ি তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত৷ তবে ওই পর্যন্তই৷ 

সংস্থার কর্মীরা দেবযানী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তুলেছেন সুদীপ্তর কথাও৷ একেবারে কর্পোরেট কায়দায় অফিস চালানো দেবযানীকে মাঝে মাঝে স্যরকে মৃদু বকুনি দিতেও দেখেছেন ঘনিষ্ঠরা৷ মনীষীদের নাম করে দিন শুরু করা, অতি সাধারণ ভাবে নিজেকে তুলে ধরা সেই সুদীপ্ত সেন যে এত বড় প্রতারক, তা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন এত দিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা৷ তাঁরা স্তম্ভিত, তাতে দেবযানীও সামিল থাকায়৷