নয় ওটা হল পরিকল্পিত খুন।
রাশিয়ার মার্কসবাদের লৌহজবনিকা
যখন উঠেগেল তখন আর্কাইভ থেকে
উন্মোচিত হল মিত্রোখনিকের
তথ্যাবলী। তাতে জানাগেল কী বিপুল
পরিমান টাকা রাশিয়া ভারতের
কম্যুনিষ্ট পার্টিকে দিয়েছিল তবু
অনাহারে মরতে হল আদর্শবাদী
সুকান্তকে।
স্বাধীনতা নামে অধুনালুপ্ত দৈনিক
পত্রিকায় কিশোর বিভাগ পরিচালনার
দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুকান্তকে।
কর্মঠ প্রতিভাদীপ্ত ছেলেটি কী ভাবে
দিন কাটাত সেখবর কোন মহান কমরেড
কখনো তার কাছ থেকে নেয় নি। এদের
বিরুদ্ধে যখন কবি বিদ্রহ করার কথা
চিন্তা করেছিলেন ততদিনে পার্টি
সুকৌশলে তার জীবনিশক্তি হরণ করে
নিয়েছিল।
কবি বুদ্ধদেব বসু খুব কাছ থেকে
সুকান্তকে উপলব্ধি করেছিলেন তাই
তাঁর সুকান্ত প্রবন্ধে লিখেছিলেন
"সৈনিক পংক্তিতে বন্দি হলে,কোন
মতবাদের দাসত্ব স্বীকার করলে"।
সুকান্ত মার্ক্সবাদী পরিবেশে বড়ো
হয়েছিলেন তার পার্টির দাদারা
তাকে সবসময় উদ্বুগ্ধ করত পার্টির
আদর্শে কবিতা লিখতে।
শেষ জীবন প্রবন্ধে সুকান্তর দাদা
রাখালদাস ভট্টাচার্য্য লিখেছেন :-
সুকান্ত তখন স্বৃধীনতা পত্রিকায়
কিশোর সভা পরিচালনা শুরু করেছে।
একদিন ওর বৌদিকে সোল্লাসে জানাল
পার্টি ওয়ার্কাস হিসাবে আমাকে
মাসে তিরিশটাকা করে দেবে বলেছে।
সেই তিরিশটাকা দিয়ে কত কি
কল্পনার ফানুস ওরাচ্ছিল সুকান্ত। কাজ
করার মধ্যে খাওয়া,প্রয়োজনে ট্রামে
চেপে পরিশ্রম বাঁচানো খরচও ছিল সেই
পরিকল্পনার মধ্যে। মাস শেষ হলো
সুকান্ত বাড়ি ফিরল পাঁচটাকা হাতে
নিয়ে। হতাশায় মুখ কালো করে
বৌদিকে বল্ল .....দা বল্লেন তুমি তো
ঘরের ছেলে তোমাকে আর কি পয়সা
দেব!! পাঁচটাকা অন্তত সেবার
সুকান্তকে কিছু খাবার ব্যবস্থা
করেদিয়ে ছিল। কিন্তু পরের মাসে
সেটাও জুটল না। বিনিময়ে পেল পাঁচ
টাকার ট্রামের টিকিট যেটা ভাঙিয়ে
খাবার জোটানর উপায় ছিলনা। অর্থাৎ
পরিশ্রম একটু বাঁচলেও উপবাস কায়েম
থাকল। এসব জানতে পাওয়া যাবে
রাখলদাসের শেষ জীবন প্রবন্ধের 180
পাতায়।
পার্টির কমরেড দের চিকিৎসার জন্য 10
নং রওডন ষ্ট্রীটে নিজেদের রেড কিওর
হোম ছিল। সুকান্তকে সেখানে
কিছুদিন রাখা হয়েছিল। সেখানকার
পরিস্থিতি সুকান্ত নিজেই বর্ণণা
করেছেন "পরিবেশ ছিল মনোরম,পার্টির
হিরোদের সাথে সংযোগ আত্মতৃপ্তি
দিল,কিন্তু সে হাসপাতালের কোমল
শয্যা ছিল ওষুধ পথ্যহীন। একথা সুকান্ত
সমগ্র 345 পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ আছে।
রেড কিওর হোম থেকে সুকান্তকে নিয়ে
আসা হয় তার বাবার কাছে নারকেল
ডাঙায়। ঠিক হয় সেখানে পার্টির
ডাক্তার আসবে ইঞ্জেকশন দিতে কিন্তু
রোজই শুনি ডাক্তার আসে নি। কমরেড
দের এই রকম প্রবঞ্চনার কথা লেখা
আছে রাখাল ভট্টাচার্য্যের সুকান্তর
শেষ জীবন প্রবন্ধের 181 পৃষ্ঠায়।
হরপ্রসাদ মুখার্জির "লেলিন ভূমিষ্ঠ
রক্তে" 240 পৃষ্ঠা দেখুন কি লেখা আছে
:- "সুকান্তর সাথে দেখা করতে গেলে
সুকান্ত দুঃখ করে বল্ল কাল রাতে খাট
থেকে পরে গেছিলাম,সারা রাত
ঘুমাতে পারিনি। গরমে বড় কষ্ট হয়েছে
নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আমাকে একটা
টেবিল ফ্যান জোগার করে দিতে
পারবে"!!
পার্টির প্রতি মহভঙ্গ অনেক আগেই
হয়েছিল সুকান্তর বিশেষ করে কম্যুনিষ্ট
পার্টির ব্রিটিস সরকার কে
সহযোগীতা,স্বাধীনতা আন্দোলনের
বিরধীতা,বিপ্লবি দের পুলিশে ধরিয়ে
দেওয়া এসব তার ভাল লাগেনি তাই
তিনি বিদ্রোহের সুরে বলেছেন
"তাহলে বুঝব তোমরা মাশুষ নও, গোপনে
গোপনে দেশদ্রহীর পতাকা বও"।
মরার আগে সুকান্ত স্পষ্ট ভাষাতে
বন্ধুকে চিঠিতে লিখেছেন "আমার খবর?
শরীর মন দুটোই দূর্বল, অবিশ্রান্ত
আঘাতে আঘাতে মানুষ যে সময়
পৃথিবীর উপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে ঠিক
সেই সময় এসেছে আমার জীবনে"।
এই আঘাত সুকান্তকে কে বা কারা
দিয়েছিল?? টাটা বিড়লা??
আমেরিকা?? নাকি তারুই পার্টির
কমরেড দাদা ভাইরা?? কী মনে হচ্ছে
আপনাদের??
রাশিয়া থেখে টাকা আসত সেই
টাকায় বড় বড় ভবন তৈরী হত আর
সুকান্তর মত না খেতে পেয়ে ক্ষয় রোগে
কিম্বা যক্ষা অথবা নানারকম রোগে
ভুগে মরেছে গ্রাম বাংলার অসংখ্য
নির্বোধ কমরেড। তাদের আত্মত্যাগের
দৃষ্টান্ত দেখিয়ে নতুন প্রজন্মকে ঐ একই
লাইনে ফেলে নব প্রজন্মর ভবিষ্যত
ধ্বংশ করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক মৃত্যুকে
মহিমা দিয়ে বলেছে আত্ম ত্যাগ।
কিন্তু আমরা যা বিশ্লেষন করে দেখতে
পাচ্ছি তাহল সুকান্তর মৃত্য আত্ম ত্যাগ
নয় ওটা হল পরিকল্পিত খুন।
No comments:
Post a Comment