THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA INDIA AGAINST ITS OWN INDIGENOUS PEOPLES

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Saturday, May 28, 2011

চুক্তি নয়, এখন আবার সিঙ্গুর নিয়ে ‘তথ্য’ দেবার কথা বলছে সরকার নিজস্ব সংবাদদাতা !মুখ্যমন্ত্রীর একরোখা সিদ্ধান্ত বিপদে ফেললো রোগীদেরই !

হামলা চলছেই  
শুক্রবার জামালপুরে সি পি আই (এম) আঞ্চলিক কমিটির দপ্তরে ভাঙচুর করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা

http://ganashakti.com/bengali/

চুক্তি নয়, এখন আবার
সিঙ্গুর নিয়ে 'তথ্য'
দেবার কথা বলছে সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা : কলকাতা, ২৭শে মে — আগাম ঘোষণা করেও সিঙ্গুরের প্রকল্প নিয়ে টাটা মোটরসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি প্রকাশে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার। আর, এখন খোদ সরকারই বলছে, সিঙ্গুরের চুক্তির চেয়ে লিজ নথি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি নয়, সোমবারের মধ্যে এখন সিঙ্গুর প্রকল্প নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শুক্রবার মহাকরণে জানান রাজ্যের নতুন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। এমনকি, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের যে ৪০০ একর জমি ফেরতের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা, তা নিয়েও খানিক সন্দেহ দেখা দিয়েছে এদিন। কারণ এদিন নতুন শিল্পমন্ত্রী জানান, সিঙ্গুরে জমি ফেরতের সম্ভাবনা প্রবল।

নব্বই বছরের মেয়াদে টাটা মোটরসকে সিঙ্গুরের অধিগৃহীত ৯৯৭.১১ একরের মধ্যে ৬৪৫.৬৭ একর জমি দিয়েছিলো রাজ্য সরকার। এছাড়াও সে সময়ে যন্ত্রাংশ কারখানা গড়ার জন্য যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে পৃথক পৃথকভাবে চুক্তির ভিত্তিতে মোট ২৯০ একর জমি লিজে দেওয়া হয়েছিলো। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি সাব-স্টেশন গড়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো ১৪.৩৩ একর জমি। এছাড়াও প্রকল্পে এলাকায় জমিহারা পরিবারগুলির পুনর্বাসনের জন্য ৪৭.১১ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিলো। যদিও সে সময় বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাড়িয়ে প্রায় ৯০একর পর্যন্ত করতে সম্মত হয়েছিলো রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার।

চুক্তিতে রাজ্য সরকার টাটা মোটরসকে কারখানা গড়ার জন্য কী কী আর্থিক সুবিধা দিয়েছিলো, তাও বিশদে বিধানসভায় এবং রাজ্য বিধানসভার শিল্প বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। কিন্তু চুক্তির শেষে দুটি সংযোজনী প্রকাশে টাটা মোটরসের তরফে আপত্তি থাকায় তা প্রকাশ করেনি রাজ্য। এবিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায়, তাতে আইনগত সমস্যাও ছিলো।

এতদ্‌সত্ত্বেও, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিঙ্গুর চুক্তি প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু, বৃহস্পতিবারই রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জানান, চুক্তিটি 'স্টাডি' করতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। এবং এর আইনগত জটিলতার দিকটিও খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার।

তবে শুক্রবার মহাকরণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চ্যাটার্জি জানান, সোমবারের মধ্যে সিঙ্গুরের বিষয়ে কিছু তথ্য দিতে পারি। চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি বলেন, চুক্তির চেয়েও আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিজ নথিটি। কোন্‌ শর্তে, কী ভিত্তিতে তা দেওয়া হয়েছিলো, এগুলি গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে তিনি এদিন জানান, জমি ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। যদিও, রাজ্যের নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সিঙ্গুরের ৪০০ একর জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

টাটা মোটরসকে মূল কারখানা গড়ার জন্য যে ৬৪৫.৬৭একর জমি ৯০বছরের জন্য লিজে দেওয়া হয়েছিল,তাতে বার্ষিক আর্থিক অঙ্কের পরিমাণ প্রথম পাঁচ বছরের জন্য ১কোটি টাকা। ৫থেকে ৩০বছর পর্যন্ত তা ২৫শতাংশ হারে বাড়বে। এর পর প্রতি দশ বছর অন্তত তা ৩০শতাংশ হারে বাড়বে ৬০বছর পর্যন্ত ঐ হারেই তা বাড়বে। পরবর্তী সময়ে লিজের বার্ষিক হার বছরে ২০কোটি টাকা হবে। এছাড়াও সরকার বার্ষিক ১শতাংশ সুদে টাটা মোটরসকে ২০০কোটি টাকা ঋণ দেবে। যা পাঁচটি কিস্তিতে শোধ করতে হবে। ২১তম বছর থেকে তা ফেরত দিতে হবে। চুক্তি সইয়ের ৬০ দিনের মধ্যে ওই ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো চুক্তিতে। এছাড়াও প্রকল্পের জন্য ৩ টাকা কে ডব্লিউ এইচ হারে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো। এছাড়াও ছাড় দেওয়া হয়েছিলো মূল্য যুক্ত করেও। পরবর্তী ১০ বছর এক্সাইজ ডিউটি এবং কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্সের হারের পরিবর্তন হলে, আর্থিক সুযোগ-সুবিধারও পরিবর্তন ঘটানো হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো চুক্তিতে। অন্যদিকে যন্ত্রাংশ কারখানাগুলির জন্য বার্ষিক লিজের হার প্রথম ৪৫বছরের জন্য একর প্রতি ৮ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ৪৫ বছরের জন্য একর প্রতি ১৬ হাজার টাকা নির্দিষ্ট হয়েছিলো। তবে মূল চুক্তির ভিত্তিতে লিজ চুক্তি মারফত ঐ জমি দেওয়া হয়েছিলো টাটা মোটরস এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ কারখানাগুলিকে।

জামালপুরে আক্রান্ত পার্টি
দপ্তর, পার্টিকর্মীরা পুলিস দর্শক

নিজস্ব সংবাদদাতা : জামালপুর, ২৭শে মে— তৃণমূলের কর্মীরা সশস্ত্র হয়ে আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসছে আমাদের রক্ষা করুন। এক সরকারী কর্মচারী আন্দোলনের নেতার এমন ফোন পেয়েও জামালপুর থানার পুলিস উত্তর দেয় আপনাদের রক্ষা করতে পারবো না। নিজেদের রক্ষা নিজেরা করুন। ওরা মারলে, আমরা অসহায়। এরপর যখন সত্যি সত্যি আক্রমণ হলো, পুলিস এলো না, রক্ষা করলেন এলাকার গরিব মানুষ। এই হলো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির 'দলতন্ত্র মুক্ত' পুলিস প্রশাসন।

শুক্রবার সকালে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন জামালপুরে কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সুকুমার মিত্র ও তাঁর পরিবার। সঠিক সময়ে যদি এই এলাকার মানুষ তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ না করতো তা হলে প্রাণহানিও ঘটতে পারতো।

দ্বিতীয় ঘটনা একই দিন সকাল সাতটা নাগাদ। জামালপুরে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স সংগ্রহ করছেন জামালপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। সেখানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রবিয়েল মল্লিকও আছেন। হঠাৎ তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করলো টোল ট্যাক্স আদায়ে নিযুক্ত কর্মীদের ওপর। আশিস দাস, প্রদীপ সেনকে মেরে রক্তাক্ত করার পর তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা জামালপুর সি পি আই (এম) লোকাল কমিটির অফিস আক্রমণের কথা ঘোষণা করলো। সেই খবর এলো জামালপুর সি পি আই (এম) নেতৃত্বের কাছে, পার্টির লোকাল কমিটির সম্পাদক পরেশ সাঁতরা থানায় যখন ফোন করলেন ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন ৭টা ১৫ মিনিট। পুলিস বলেছিলো দেখছি আমরা খোঁজ নিয়ে। দুষ্কৃতীরা যখন জামালপুর পার্টি অফিসের কাছে সময় তখন সকাল ৮টা। ফের থানায় ফোন করলেন ওই পার্টিনেতা। তখনও তাঁরা বললেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপর পার্টি অফিস ভাঙচুর, লেনিন, কার্ল মার্কস, হরেকৃষ্ণ কোঙার, জ্যোতি বসুর ছবি ভেঙে মাটিতে লুটোচ্ছে, আলমারি ভেঙে গণশক্তি বিক্রির ৫৫ হাজার টাকা লুট করে নিলো তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ভাঙলো কম্পিউটার, ‍‌টি ভি, ফ্যান, পার্টি কমিউনের বাসনপত্র নিয়ে গেলো লুটেরাদের দল। সেই সময় যখন পুলিসকে ফের ফোন করা হলো তখন জামালপুর থানার ও সি বললেন, ''আমি কী করবো, আমার কিছু করার নেই।'' আপনারা নিজেরা নিজেদের রক্ষা করুন।

তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা যখন জামালপুরে পার্টি অফিস ভেঙে সি পি আই (এম) নেতা, কর্মীদের বাড়ি আক্রমণ করছে সেই সময় পার্টি অফিসে আসে একদল পুলিস। তাঁরা বললেন, উপরতলার নির্দেশে আমাদের সি পি আই (এম) সমর্থক, পঞ্চায়েত কর্মী আশিস দাস, প্রদীপ সেনদের গ্রেপ্তার করতে এসেছি। তাঁদের পাঠিয়ে দেবেন থানায়। তখন জামালপুরের আক্রান্ত পার্টি অফিস ঘিরে বহু মানুষ। তাঁরা পুলিসের কাজে হতবাক। যারা আক্রমণ করলো, পার্টি অফিস ভাঙলো, তাদের গ্রেপ্তার করা হলো না। অথচ যাঁরা আক্রান্ত, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের লাঠি, রডের আঘাতে মাথায় চোট পেয়ে রক্তাক্ত তাঁদের ধরতে এসেছে পুলিস। সত্যি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির 'দলতন্ত্র মুক্ত' বটে। 

দৃশ্য ৩। পুলিসের যা কাজ সেই কর্তব্য যখন মমতা ব‌্যানার্জির 'দলতন্ত্র মুক্ত' পুলিস করলো না, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা যখন সি পি আই (এম) পার্টি অফিস ভেঙে পার্টিনেতা নারায়ণ ঘোষ, মিলন মণ্ডল এবং কর্মচারী আন্দোলনের নেতা সুকুমার মিত্রের বাড়ি আক্রমণ করলো, তখন স্থানীয় মানুষ সেই খবর পেয়ে ছুটে এলেন। মহিলারাই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ঝাঁটা, বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ালেন। এতো মানুষকে ঐক্যবদ্ধ দেখে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আর 'দলতন্ত্র মুক্ত' পুলিসের ভরসা না করে দৌড় লাগালো মাঠ বরাবর। সে দৃশ্যও দাঁড়িয়ে দেখলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর 'দলতন্ত্র মুক্ত' পুলিসকর্মীরা। 

এত বড় একটা আক্রমণের ঘটনায় পুলিস প্রশাসনের হেলদোল নেই। নিজেদের পার্টি অফিস এমন তছনছ হতে দেখে গৌরী মাঝি, নমিতা দাসরা চোখের জল ফেলেছিলেন। পার্টি অফিস আক্রান্ত হবার খবর পেয়েই জামালপুরের গরিব মানুষ চলে আসেন দপ্তরের সামনে। দেখে মনে হবে ভয়ঙ্কর টর্নেডোতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে এই ভবন। কৃষক নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙার ভবনে ভিড় ছিলো মহিলাদের বেশি। দুপুরে পৌঁছে জানা গে‍‌লো সি পি আই (এম) অফিসের পাশে প্রায় সাড়ে তিনশো গরিব পরিবারের বাস। সে সব বাড়িতে অরন্ধন। মানুষ প্রতিবাদে, ঘৃণায় ফুঁসছেন।

প্রতিমা মাঝি বলেছেন, ৩৪ বছরে জামালপুরে এমন ঘটনা কখনো হয়নি। বিরোধী দলের পার্টি অফিস, বাড়ি আক্রমণের ঘটনা নজির হয়ে থাকলো। এই পরিবর্তনে গরিবদের ওপর বেশি করে বদলা নিচ্ছে তৃণমূল। এদিন আক্রমণের খবর পেয়েই পার্টি অফিসে চলে আসেন পার্টি নেত্রী ভারতী ঘোষাল, পরেশ সাঁতরাসহ অন্যান্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ধরনের হিংস্র ‌আক্রমণ ৩৪ বছরে কখনও হয়নি। শান্তির জামালপুরে সন্ত্রাস তৈরির এই চক্রান্ত মানুষ রুখবেনই।

অন্যদিকে কাটোয়ার কামাল গ্রামে একটি ক্লাব দখল করে তৃণমূলের ঝাণ্ডা লাগাতে গেলে গ্রামের মানুষ তাদের বাধা দেয়। তৃণমূলীরা পালিয়ে যাবার পর পুলিস এসে চার জনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার কেতুগ্রাম থানার আমগড়িয়া গ্রামে তৃণমূলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী ইসলাম মল্লিকের নেতৃত্বে আক্রমণ হয় সি পি আই (এম) কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি। মুহুর্মুহু বোমা নিক্ষেপ করে ১০-১২টি বাড়ি লুট, ভাঙচুর করেছে। খসরুফা বিবি নামে এক মহিলাকে বেদম মারধর করলে তিনি সংজ্ঞা হারান। এরপরে গ্রামের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এখানেও পুলিস খবর পাওয়া সত্ত্বেও মমতা ব্যানার্জির 'দলতন্ত্র মুক্ত' পুলিস আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি।

রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস বন্ধ করার দাবিতে
সরকারকে ডেপুটেশন দেবে বামফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে— আগামী ৩১শে মে কলকাতায় রানী রাসমণি রোডে জনসভা করে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি এবং রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানাবে বামফ্রন্ট। শুক্রবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, ঐ দিন সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে। তিনি আরো জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের বিধায়কদের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যে হিংসা বন্ধ করার দাবিতে আগামী ৩রা জুন রাজ্য সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেবে। 

রাজনৈতিক চমক লাগাতে মহাকরণে গিয়ে হল্লা করা নয়, অবিলম্বে রাজ্যে সত্যি সত্যি শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও রাজ্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ দাবি করে বামফ্রন্ট প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে স্মারকলপি দেবে। সেই কারণে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছে। বিমান বসু জানিয়েছেন, আমরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই স্মারকলিপি দিতে চাই, সেই জন্য তাঁর সময় চাওয়া হয়েছে। নিয়মবিধি মেনেই আমরা তাঁর কাছে দাবি জানাবো। 

এদিন দুপুরে রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে। সেখানেই আগামী ৩১শে মে কলকাতায় বামফ্রন্টের সমাবেশের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয় এবং স্থির হয়, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। বিমান বসু জানিয়েছেন, নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর থেকে রাজ্যে বামপন্থী নেতা কর্মী সমর্থকদের ওপরে হামলা হচ্ছে, তাঁদের এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দশজন বামপন্থী কর্মী সমর্থক খুন হয়ে গিয়েছেন, বামপন্থীদের বহু পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে, দখল করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে, অবিলম্বে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও শান্তিরক্ষার দাবিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সহকারী বিরোধী দলনেতা সুভাষ নষ্কর এবং বিরোধী পক্ষের মুখ্যসচেতক বিশ্বনাথ কারকসহ বামফ্রন্ট বিধায়কদের একটি প্রতিনিধিদল সরকারের কাছে ডেপুটেশন দিতে যাবে। 

উল্লেখ্য, এদিন বামফ্রন্ট বৈঠকের শুরুতেই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিংসায় শহীদ বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। 

বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগেই স্থির করা ছিল যে ৩০শে মে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি এবং রাজ্যে সন্ত্রাস হামলার বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করা হবে। কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বামপন্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সমাবেশের দিনটি শেষপর্যন্ত ৩১শে মে করা হয়েছে। বিমান বসু সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, সার ও পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভরতুকি প্রত্যাহার ইত্যাদির প্রতিবাদে এবং রাজ্যে সন্ত্রাস হামলার প্রতিবাদে ৩১শে মে বিকাল পাঁচটায় রানী রাসমণি রোডে রাজ্য বামফ্রন্টের সমাবেশ করা হবে। তবে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪পরগনা, কলকাতা ও হাওড়া থেকেই মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেবেন। এছাড়াও রাজ্যের সর্বত্র যেখানেই সম্ভব হবে সেখানেই প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হবে। 

এদিন রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটির বৈঠকের পরে বামফ্রন্টের নবনির্বাচিত বিধায়কদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে। আগামী ৩০শে মে বিধানসভার প্রথম অধিবেশন বসবে। তার আগে বিরোধী দলনেতা নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এই বৈঠকটি হয়। বিমান বসু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত ৬২জন বামফ্রন্ট বিধায়কদের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ৩১জনই নতুন। সামগ্রিকভাবে বামফ্রন্ট বিধায়কদের বিরোধী পক্ষে যথাযথ ভূমিকা পালন করা নতুন করে শিখতে হবে। বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার মন্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বসু জানান, উনি নিজেই ওঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাছাড়া উনি কালই জানিয়েছিলেন যে শরীর খারাপ থাকার কারণে চিকিৎসার জন্য উনি আজকের বিধায়কদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

মুখ্যমন্ত্রীর একরোখা সিদ্ধান্ত
বিপদে ফেললো রোগীদেরই

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে—হাসপাতালের অভ্যন্তরে রোগীদের স্বার্থে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সওয়াল করতে গিয়ে যেভাবে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির অধিকর্তা অধ্যাপক ডাঃ এস পি গড়াইকে হেলথ সার্ভিস থেকেই সাসপেন্ড হতে হয়েছে। এতে রীতিমতো ক্ষোভ ও বিস্ময় তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব মহলেই। এমনকি খাস স্বাস্থ্য দপ্তরের একাংশের আধিকারিকদের মধ্যে এই ক্ষোভ সঞ্চার হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর একরোখা সিদ্ধান্তে অনড়। 

হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দায়বদ্ধতা নাকি পরিদর্শনের নামে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরে অযথা জটলা, বিশৃঙ্খলার পরিবেশকে প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেওয়া—চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মহলেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন এই বিতর্ক। অবশ্য বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির অধিকর্তাকে সাসপেন্ড করার এই ঘটনা নিয়ে এদিন মুখে রা পর্যন্ত কাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

এদিনই গোটা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বি আই এন-এর অধিকর্তাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আরজি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব এবং চিকিৎসা শিক্ষা অধিকর্তার কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে এ এইচ এস ডি-র তরফে। ডেপুটেশন স্পষ্টভাবে এই চিকিৎসক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, 'সংগঠনগতভাবে আমরা যা জানতে পেরেছি তাতে প্রফেসার শ্যামাপদ গড়াই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে মর্যাদাহানিকর কিছু বলেছেন বলে কোনও তথ্য নেই। কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে রাত্রিবেলা বি আই এন-র অধিকর্তাকে সাসপেন্ড করার ঘটনা আমাদের বিস্মিত করেছে'। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেই এই আদেশ বাতিল করার দাবিও জানানো হয়েছে। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় যে বিপুল পরিমাণ সাংবাদিক ও মানুষ হাসপাতালে ঢুকে পড়ছেন তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার দাবিও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর হাসপাতাল পরিদর্শনের সময়ে যেভাবে সাংবাদিকদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রচুর সঙ্গীসাথী ঢুকে পড়েছিলেন সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েই অধ্যাপক ডাঃ এস পি গড়াইকে সওয়াল করতে হয়েছিল। যার পরিণাম নূন্যতম কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়েই বরখাস্ত করা হলো ডাঃ এস পি গড়াইকে। 

এই প্রশ্নকেই সামনে রেখে এদিন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আই এম এ)-র তরফে রাজ্য সম্পাদক ডাঃ সঞ্জয় ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেন। সাসপেন্ড করার আগে ডাঃ এস পি গড়াইকে যে প্রথম শো-কজের পাশাপাশি তাঁকে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল এবং তা না করেই যেভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছে এই চিকিৎসক সংগঠনটি। ডাঃ এস পি গড়াই একজন দক্ষ প্রসাশক এবং রুগীদের প্রতি সমব্যাথী ও বন্ধুত্বের মনোভাব নিয়ে চলা একজন চিকিৎসক। জানিয়েছে আই এম এ। এইরকম দক্ষ প্রশাসক ও চিকিৎসক যে বি আই এন-কে আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির সরকারের সম্পদ হতে পারে সে কথাও এদিন জানিয়েছে আই এম এ। 

বৃহস্পতিবার সকালে বি আই এন-এ ডাঃ গড়াইয়ের সওয়ালে ক্ষুব্ধ মমতা ব্যানার্জি তাঁকে বলেছিলেন 'কাল সব ফাইলপত্র নিয়ে মহাকরণে আমার সঙ্গে দেখা করবেন'। কাল অর্থাৎ শুক্রবার। বিনীতভাবেই বি আই এন-এর অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, 'মঙ্গল ও শুক্রবার আমার অপারেশনের ডেট। কাল (শুক্রবার) সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালে আমার অপারেশনের সিডিউল রয়েছে। যাব কী করে! এতেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর । বলেছিলেন 'অপারেশন শেষ হলে রাইটার্সে আসবেন'। যদিও বৃহস্পতিবার রাতেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন সিদ্ধান্তে সাসপেন্ড হয়ে গেছেন রাজ্যের সুনামের সঙ্গে পরিচালিত রাজ্যে অন্যতম সরকারী হাসপাতলের অধিকর্তা। 

এদিন যদি মুখ্যমন্ত্রী ফের আসতেন বি আই এন-এ তবে নিশ্চিত তাঁর সঙ্গে দেখা হতো বর্ধমানে মেমারির সেই অসহায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। নিশ্চিত তিনি মুখোমুখি হতে পারতেন বাবার ব্রেন টিউমারের জটিল অপারেশনের ডেট পিছিয়ে যাওয়ায় চরম উৎকন্ঠার মুখে থাকা ১৪বছরের এক কিশোরের সঙ্গে। বি আই এন-র নিউরো বিভাগের তিন তলায় ৬নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছে বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা ৪৫বছর বয়সী কামদেব ভট্টাচার্য। প্রথমে বর্ধমানে ডাঃ বিমান রায়ের অধীনেই চিকিৎসারত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে স্ক্যান রিপোর্টে সেরকম গুরুতর কিছু ধরা পড়েনি। জিভের উপর দাঁত আটকে যেতো, গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে লাগলো। এরপর গত ২৭শে এপ্রিল তাঁর শরীরের ডানদিকটা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। প্রথম দিকে এম আর আই করা যাচ্ছিল না হাতে প্লেট বসানো থাকায়। যদিও পরে এম আর আই করা হয়। এরপর এক সপ্তাহ আগে বি আই এন-এ তাঁকে ভর্তি করাহয় ডাঃ এস পি গড়াইয়ের অধীনে। মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। এদিনই ছিল অপারেশনের ডেট। হাসপাতালেই দুপুরে উদভ্রান্তের মত ঘুরতে দেখা যাচ্ছিল কামদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা ঝুম্পা ভট্টাচার্য ও তাঁদের একমাত্র সন্তান অভ্রনীলকে। সকাল ন'টায় ছিল অপারেশনের সময়। 'ও টি'-তে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় জানতে পারেন এদিন অপারেশন হবে না। কিছুই বুঝতে না পেরে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গুরুতর অপারেশন। সময়টাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যিনি অপারেশন করবেন তিনিই তো মুখ্যমন্ত্রীর রোষানলে পড়ে বরখাস্ত। এই পরিবারের সদস্যদের আকুল আর্তি 'আমাদের কী অপরাধ? অপারেশনের ডেট পিছিয়ে গেল, কি করবো?' হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল কামদেব ভট্টাচার্যের অপারেশন অন্য একজন শল্য চিকিৎসক করবেন। কিন্তু এই উৎকন্ঠার মূল্য কে চোকাবে? শুধুই এই পরিবারই নয়, আরো বেশ কিছু রুগীর পরিবারই এদিনই এই উৎকন্ঠার শিকার হয়েছেন। ডাঃ এস পি গড়াইয়ের অধীনে এদিন ছ'টি গুরুতর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। আপৎকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দুপুরে হাসপাতালের গেটের সামনে হন্তদন্ত হয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলো মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির বাসিন্দা অর্জুন মণ্ডলের সঙ্গে। আপনার পরিবারেরও কারও কি আজকে ডাঃ গড়াইয়ের অধীনে অপারেশনের ডেট ছিল? 'না না। থমকে গিয়েই যুবকটি জানালেন তিন দিন আগেই ডাঃগড়াই তাঁর দাদার ব্রেন টিউমার অপারেশন করেছিলেন। তাঁর দাদা যুধিষ্টির মণ্ডল (পরিচিত রানা নামেই) একটি অর্কেস্ট্রা গ্রুপের ড্যান্সার। এলাকায় খুবই পরিচিত। এখন আই সি ইউ তে আছেন। 'জানেন দাদা খুব ভালো নাচে। যখন টিউমার ধরা পড়লো মাথায় তখন যা মনের অবস্থা হয়েছিল আমাদের। কিন্তু উনি আমাদের রক্ষাকর্তা, বাঁচিয়ে দিয়েছেন দাদাকে। উনি কিন্তু খুব ভালো ডাক্তার,তাই না?'।

উদভ্রান্ত এই যুবকের কথার রেশই এদিন বি আই এন থেকে এস এস কে এম-সর্বত্রই প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

তৃণমূলের আক্রমণে গুরুতর জখম কৃষকনেতা

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে — শুক্রবার নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে সি পি আই (এম) ডেবরা জোনাল কমিটির সদস্য এবং জেলা কৃষকসভার নেতা শ্রীদাম বেরার মাথা ফাটিয়ে দিলো তৃণমূলের কর্মীরা। ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হলো তাঁর বাড়ি। তাঁকে খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূলের এই বর্বর হামলার হাত থেকে আই সি ডি এস কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় আই সি ডি এস কর্মী তাপসী সিংকে মারধর করে তাঁর মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দুর্বৃত্ত বাহিনী। গোয়ালতোড়ে তৃণমূলের আক্রমণে জখম হয়েছেন সি পি আই (এম)-র আরো তিনজন নেতা ও কর্মী। তাপসী সিং-সহ এই চারজনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় তৃণমূলের নৃশংস আক্রমণে রক্তাক্ত হলেন সি পি আই (এম)-র আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রণজিৎ সিংহ এবং জোনাল কমিটির সদস্য প্রদীপ বসু। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁরাও হাসপাতালে ভর্তি। এমনকি তৃণমূলের এই নৃশংস হামলার হাত থেকে সরকারী অফিসের কর্মচারীদেরও রেহাই মিলছে না। শুক্রবার পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক অফিসে হামলা চালিয়ে সরকারী কর্মচারী ভীম মাহাতোকে দপ্তর থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। শুক্রবার রাজ্যের নানা প্রান্তে এ'ধরনের আরো অনেক তৃণমূলী হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল কর্মীদের লাগামছাড়া সন্ত্রাসের পরেও সেই সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস - কংগ্রেস জোটের সরকার। উলটে রাজ্যে কোনো রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে না এবং রাজ্যে শান্তি রয়েছে বলে দাবি করে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে 'আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার' দায়সারা আবেদন জানিয়েই দায়িত্ব সারছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেত্রীর এই অবস্থানের পরেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর 'রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা' নিয়ে বিভিন্ন মহলে এবং সংবাদমাধ্যমে ঢাক পেটানো হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রীর এই 'মুখে এক এবং কাজে আরেক' অবস্থানের ফলে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল দুর্বৃত্তবাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জায়গায় জায়গায় সি পি আই (এম)-র নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত হচ্ছে সি পি আই (এম)-র কার্যালয়। লুট করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের বাড়ি, জমির ফসল। ঘরছাড়া হচ্ছেন প্রচুর মানুষ। শুক্রবারও তৃণমূলের এমন অসংখ্য তাণ্ডবের সাক্ষী ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ। 

শুক্রবার তৃণমূলের একদল কর্মী মিছিল করে এসে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য এবং সি পি আই (এম) ডেবরা জোনাল কমিটির সদস্য শ্রীদাম বেরার বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট করার পরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। শ্রীদাম বেরাকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় তৃণমূলীরা। লাঠি, রড দিয়ে মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মাথা। পুলিস তাঁকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে। বসন্তপুরে শ্রীদাম বেরার বাড়ির পাশে সি পি আই (এম)-র একটি কার্যালয়ও তৃণমূলীরা ভেঙে দেয়। 

এদিন দুপুরে বাঁকুড়ায় সি পি আই (এম)-র সারেঙ্গা জোনাল কমিটির দপ্তর থেকে বেরিয়ে ব্রাহ্মণডিহা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন পার্টির গড়গড়া আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রঞ্জিত সিংহ। রাস্তায় তাঁকে ঘিরে ধরে তৃণমূলীরা বেদম মারধর শুরু করে। এরপর ওই উন্মত্ত তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হয় প্রদীপ বসুর বাড়ি। তাঁর বাড়িতে অস্ত্র রাখা আছে জিগির তুলে তাঁকেও নির্মমভাবে মারা হয়। অস্ত্রের খোঁজে তছনছ করা হয় তাঁর বাড়ি। যদিও স্বাভাবিকভাবেই কোথাও অস্ত্র মেলেনি। পুলিস এসে জখম অবস্থায় এই দুই পার্টিনেতাকে উদ্ধার করে। তাঁদের সারেঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানা এলাকায় সি পি আই (এম)-র মির্জাপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক আলি হোসেনকেও তৃণমূলীরা প্রচণ্ড মারধর করে। পুলিসের সাহায্যে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। 

আই সি ডি এস কেন্দ্র থেকে কাজ সেরে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-৩ নম্বর ব্লকের বিলাগ্রামে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন তাপসী সিং। পথেই হামলা চালিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয় তৃণমূলীরা। গড়বেতা-১ ব্লকের হলদিডাঙা গ্রামে পার্টির মহিলাকর্মী ষষ্ঠী বেরা এবং পার্টিকর্মী সমীরণ বারিককেও ব্যাপক মারধর করে তৃণমূলীরা। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে বাঁকুড়া হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাত নটা নাগাদ পার্টি কার্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সি পি আই (এম) গোয়ালতোড় জোনাল কমিটির সদস্য নিমাই লায়েক। অতর্কিতে তাঁর উপরে হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী। তাঁর চিৎকারে স্থানীয় মানুষ ছুটে এলে তৃণমূলীরা পালিয়ে যায়। এদিন শালবনী ব্লকে পার্টির মৌলা শাখার সম্পাদক অজয় খোরটকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে তৃণমূল বাহিনী। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তারাপদ ঘোষ, মধু সিংহ, বিশ্বজিৎ সিংহ, তুষার সিংহের নেতৃত্বে মারধর করা আরো ৪জন সি পি আই (এম) কর্মীকে। 

বৃহস্পতিবার সবং ব্লকে সর্বদলীয় সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ভাঙচুর অত্যাচার বন্ধ করা হবে। সব পার্টি অফিস খোলা থাকবে। কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। ২৪ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সবংয়ের উদ্দর্বপুর গ্রামে রেকর্ডভুক্ত বর্গাদার সুকুমার মান্নার জমিতে জোর করে লাঙল দেয় কংগ্রেস। মালপাড়ে কংগ্রেসীরা মদন মণ্ডল এবং জবা মণ্ডলের জমি গায়েরজোরে দখল করে কংগ্রেসের পতাকা লাগিয়ে দেয়। মশাগ্রাম পার্টি অফিসে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সি পি আই (এম)-র পতাকা। 

এর পাশাপাশি 'অস্ত্র উদ্ধারের' নামে তৃণমূলের সাজানো নাটকও সমানতালে পাল্লা দিয়েই চলছে। কয়েকদিন আগেই চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে পার্টির শ্রীনগর লোকাল কমিটির কার্যালয় হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দেয় তৃণমূল। সি পি আই (এম) কর্মীরাও পার্টির কার্যালয়ে তালা দিয়ে চলে আসেন। এরপর ওই পার্টি অফিসে অস্ত্র আছে অভিযোগ তুলে এদিন পুলিসকে সাথে নিয়ে তৃণমূলীরা পার্টি অফিসে 'তল্লাশি' চালায়। পার্টি অফিসে কোথাও অস্ত্র না পাওয়া গেলেও দেখা যায় বাথরুমের ঘুলঘুলির মধ্যে দুটো বুলেট এবং মিটার বক্সের পাশে খোলা থাকা জানলার নিচে দুটো বুলেট পড়ে রয়েছে। সবাই বুঝতে পারেন যে বাইরে থেকে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে এবং জানলার ফাঁক দিয়ে ওই বুলেটগুলি ফেলা হয়েছে। পুলিসকর্মীরাও এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পারেন। তাই তৃণমূলের দাবি মতো কোনো পার্টিনেতাকে গ্রেপ্তার না করে তারা চলে যান। তৃণমূলের এই সাজানো নাটক নিয়ে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। 

পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনার জন্য এদিন পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক অফিসে আসেন ঘাটবেড়া-কেড়োয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব ভীম মাহাতো। তিনি যখন দরকারী কাগজপত্র নিয়ে ব্লক অফিসের বড়বাবুর সাথে কথা বলছেন সেই সময় ২৫-৩০জন তৃণমূল কর্মী তাঁর উপর চড়াও হয়। এরপর ওই সরকারী কর্মীকে টেনে রাস্তায় ফেলে হামলাকারীরা সবাই মিলে মারধর শুরু করে। হাতে, পায়ে এবং শরীরের নিচের অংশে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বলরামপুর বাঁশগড় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকার মানুষ এবং সরকারী কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

কলকাতায় গার্ডেনরিচ মেটিয়াব্রুজ এলাকাতেও সারা রাত ধরে সি পি আই (এম) নেতার বাড়ি ও পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী। ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচ মেটিয়াব্রুজের বাঁধাবটতলায়। এখানেই সি পি আই (এম) গার্ডেনরিচ মেটিয়াব্রুজ জোনাল কমিটির সদস্য হারাধন ঘোষের বাড়ি। মঙ্গলবার, প্রায় মাঝরাতে বিশাল দলবল নিয়ে এলাকার এবং বহিরাগত তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীর দল হামলা চালায় তাঁর বাড়িতে। একের পর এক জানালা, বারান্দার কাচ ইট ও পাথর ছুড়ে ভাঙতে শুরু করে। এই তাণ্ডব চলে প্রায় ভোররাত পর্যন্ত। একই ভাবে অদূরে পার্টিকর্মী মিঠুন দাসের বাড়িতেও হামলা চালায় তৃণমূলী দুষ্কৃতীর দল। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বাঁধাবটতলায় এক প্রতিবাদ সভা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন, পার্টির নেতা নারায়ণ সরকার প্রমুখ।

বুধবার উলটোডাঙার কাঁকুড়গাছি মেইন রোডে কলকাতা স্ট্রিট হকার্স ইউনিয়নের মুরারীপুকুর আঞ্চলিক কমিটির অফিসটি গায়েরজোরে স্থানীয় তৃণমূলীরা দখল করে নেয়। অন্যদিকে বুধবার ১৭ ও ১৮নং কাঁকুড়গাছি রোড বস্তি এলাকায় কলকাতা বস্তি ফেডারেশনের নেতা অপূর্ব মজুমদার এবং বামপন্থী কর্মী সুকুমার ভৌমিককে মারধর করে তৃণমূলী দুষ্কৃতীর দল। একই ভাবে তৃণমূলীদের আক্রমণের শিকার হন উলটোডাঙার উপেন ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা সমীর দাস। তাঁকেও প্রচণ্ড মারধর করে তৃণমূলীরা।

পশ্চিমবঙ্গে শ্রমজীবীদের ওপর হামলা
৬-১১জুন সারা দেশে প্রতিবাদ
সপ্তাহ পালন করবে সি আই টি ইউ

আই এন এন

২৭শে মে- পশ্চিমবঙ্গে ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমজীবী মানুষের ওপর একের পর এক আক্রমণের প্রতিবাদে ৬-১১ই জুন দেশজুড়ে প্রচার ও প্রতিবাদ সপ্তাহ পালনের ডাক দিল সি আই টি ইউ। জনসভা, প্রচারপত্র বিলি, মিছিলের মতো কর্মসূচীতে এই প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে দেশের সব সি আই টি ইউ অনুমোদিত ইউনিয়ন, রাজ্য কমিটি ও শিল্পভিত্তিক ফেডারেশনগুলিকে। 

নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যজুড়ে একের পর এক ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্য গণ-সংগঠনগুলির ওপর হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সি আই টি ইউ। সব ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে এই হামলার প্রতিবাদে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সি আই টি ইউ বলেছে, মালিকপক্ষ এবং পুঁজিপতিদের সুবিধা করে দিতে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস এবং ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

২৬-২৭মে দিল্লিতে সি আই টি ইউ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভা থেকে তীব্র নিন্দা করা হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের নামিয়ে আনা আক্রমণের ঘটনার। শুক্রবার প্রকাশিত বিবৃতিতে সম্পাদকমণ্ডলী বলেছে, এক কিশোরসহ মোট বারোজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারে আসীন রাজনৈতিক শক্তির সরাসরি মদতে চলতে থাকা বর্বরতা স্পষ্ট।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রেড ইউনিয়ন এবং অন্য গণ-সংগঠনগুলির নেতৃত্ব থেকে সাধারণ সদস্যদের ওপর শারীরিক আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী জোর করে দখল করছে ইউনিয়ন অফিস। সি আই টি ইউ'র পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তছনছ করা হচ্ছে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। সি আই টি ইউ দপ্তরে ভাঙচুর চলছে। অনেক ক্ষেত্রে ভীতি ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির এই প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের সঙ্গেই শামিল হচ্ছে মালিকপক্ষ। কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪পরগনা, বর্ধমান, বীরভূম, কোচবিহার –সর্বত্র এই হামলা চলছে। চলছে জোর করে টাকা আদায়।

রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস-কংগ্রেস সরকারের মদতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা অংশকে নীরব দর্শকে পরিণত করাকে তীব্র নিন্দা করছে সি আই টি ইউ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট এই হামলা গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর আঘাত যা জনস্বার্থকে রুদ্ধ করে।

প্রতি মাস হবে অক্টোবর প্রতিদিন প্রত্যেকে লেনিন : শান্তনু দে

'গুঁড়িয়ে পাথর, পুড়িয়ে ছবি

যতই মুছি ওঁকে—

হাজার লেনিন লক্ষ হয়েই

জাগেন — কোটি বুকে।'

—অনির্বাণ দত্ত



খেজুরি-সেন্ট পিটার্সবুর্গ-গড়বেতা।

বিকৃত জান্তব উল্লাসে আক্রান্ত লেনিন।

দুনিয়ার সব প্রান্তে কমিউনিস্ট বিদ্বেষীদের নিশানা আজও লেনিন। লক্ষ্য তাঁর মতাদর্শ।

মূর্তি ভাঙা য়ায়, বিকট উল্লাসে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু হাজারো চেষ্টা করেও গুড়িয়ে দেওয়া যায়নি সমাজতন্ত্রের মহান মতাদর্শকে। 

আজও দুনিয়ার 'গ্রামে ও নগরে হাজার লেনিন যুদ্ধ করে। বিদ্যুৎ-ইশারা চোখে, আজকেও অযুত লেনিন ক্রমশ সংক্ষিপ্ত করে বিশ্বব্যাপী প্রতীক্ষিত দিন।'

রেড ফ্ল্যাগ, লাল নিশান।

হে মার্কেটের শ্রমিকের তাজা রক্তে রাঙা। 

তারপর দিন গিয়েছে, বছর গিয়েছে, গিয়েছে শতাব্দী। সম্রাট, সামন্ত থেকে পুঁজিপতি, জোতদার; সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ত থেকে নয়া ঔপনিবেশকতাবাদী নব্য ফ্যাসিস্ত — বারে বারে মানুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে এই পতাকা। পারেনি। 

এই গ্রহের যেখানে সূর্যের আলো, সেখানেই লাল পতাকা। আর সেখানেই লেনিন। খেতে কারখানায় হাটে বন্দরে বস্তিতে — যেখানে মানুষ, সেখানেই লাল পতাকা। সেখানেই লেনিন। যেখানে মুক্তির যুদ্ধ সেখানেই কমরেড লেনিন।

এমনকি হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পর্যন্ত উড়েছে লাল পতাকা। ইতিহাস জানে। আর জানেন জুলিয়াস ফুচিক। যিনি ফ্যাসিস্ত কারাগারে মে'দিন পালনের সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। এই রাজ্যেও এই সেদিন বক্সা ক্যাম্পের কমিউনিস্ট বন্দীরা লেপের লাল কাপড় কেটে বিধান রায়ের পুলিসকে উপেক্ষা করে মে'দিনে উড়িয়েছেন লাল পতাকা।

স্তালিন বলেছিলেন, 'লেনিনবাদ সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগের মার্কসবাদ।' যুগ একটিই। যুগের প্রেক্ষাপটে লেনিনের সুনির্দিষ্ট দার্শনিক ও প্রয়োগের অবদানের ভিত্তিতে 'লেনিনবাদ' শব্দের সৃষ্টি। তাই সাম্রাজ্যবাদ যতক্ষন পর্যন্ত ধনতন্ত্রের শেষ পর্যায়, ততক্ষন নতুন 'বাদের' সম্ভাবনা নেই।

প্লেখানভ 'ইসক্রা'য় লিখতেন ভলগিন ছদ্মনামে। ভলগা থেকে ভলগিন। ভলগা ইউরোপীয় রুশদেশের মহানদী। ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ছদ্মনাম নিলেন লেনিন। লেনা থেকে লেনিন। লেনা সাইবেরীয় রুশ দেশের মহানদী। গোর্কির লেখায় দুনিয়া জানে, কেন প্লেখানভ বেছেছিলেন ভলগাকে, আর কেনই বা ভলগার কোলে জন্মেও উলিয়ানভ 'অভিশপ্ত' সাইবেরিয়ার একটি নদীর নাম না গ্রহণ করে পারেননি। 

নদী বয়। নদী অন্বয় সৃষ্টি করে। লেনিন এক মহান উৎস থেকে এক অনির্বাণ প্রবাহ। 

১৯১৭। মহান নভেম্বর বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা লেনিন। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা। এই গ্রহের প্রথম সর্বহারা রাষ্ট্র। বিশ শতকের মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম দিকচিহ্নকারী ঘটনা। শোষণ-ভিত্তিক সমাজের অবসান। পুঁজি ও মুনাফার স্বার্থে নয়, শোষিত-বঞ্চিত জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্র — সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে তার প্রথম প্রতিফলন।

তারপর, পৃথিবীর মানচিত্রের গায়ে কৃষ্ণচূড়ার মতো নিয়ত ফুটে উঠছে লেনিনের স্বপ্ন। এই গ্রহ নিয়ত হচ্ছে লেনিন। 

'দিকে দিকে কোণে কোণে লেনিনের পদধ্বনি আজো যায় শোনা, দলিত হাজার কণ্ঠে বিপ্লবের আজো সম্বর্ধনা। পৃথিবীর প্রতি ঘরে ঘরে, লেনিন সমৃদ্ধ হয় সম্ভাবিত উর্বর জঠরে।'

।।দুই।।



দিনের দিন তাজা খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসে।

সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর বাড়ির সামনে বিজয় উল্লাসের চার কলম ছবি। 

প্রতিবেদনে সহজাত উচ্ছ্বাস — জনরোষে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে সাফ ভারতের কমিউনিস্টরা, যে রাজ্যে গত তিন দশক ধরে তাঁরা ছিলেন ক্ষমতায়। কলকাতায় মমতা ব্যানার্জির সাদামাঠা বাড়ির সামনে বিজয় উল্লাসে মেতেছেন জনতা। সাধারণ হাতে বোনা সাদা সুতির শাড়ি, প্লাস্টিকের চটিতে — সমর্থকদের কাছে তিনি আদরের 'দিদি' — কমিউনিস্টদের পরাস্ত করে যিনি নিয়ে এসেছেন 'পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য স্বাধীনতা দিন।'

সঙ্গে টাইমস আরও দেখেছে, 'কমিউনিস্ট পার্টির এই বহিষ্কারের মধ্যে দিয়ে কমিউনিস্টদের মতাদর্শগত রাজনৈতিক জমিদারির কলঙ্কজনক অবসান।'

আজ নয়, টাইমসের সাংবাদিক জিম ইয়ার্ডলে তাঁর সন্ধানে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন গত অক্টোবরে। দেখতে এসেছিলেন সেই শহরকে — 'যেখানে গত ৩৩বছর ধরে ভারতের কমিউনিস্টরা নির্মাণ করেছেন রাজনৈতিক জমিদারি — যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লেনিন মূর্তি, যেখানে বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন (পত্রিকায় সি আই টি ইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির দপ্তরের হলঘরের ছবি) দপ্তরের হলঘরে এখনও স্তালিন, মার্কসের ছবি, যে শহরে মার্কিন কনসুলেটের সামনের রাস্তার নাম বহু আগেই করা হয়েছে হো চিন মিন সরণি।' প্রায় পাতাজোড়া শিরোনাম, 'কমিউনিস্ট ইন ইন্ডিয়া ফাইট টু হোল্ড অন টু মিশন'। ১১৩৬শব্দের প্রতিবেদন। প্রথম কিস্তিতে। এবং এই জানুয়ারিতে আবার। শুধু তৃণমূল নেত্রীর মেজাজকে ধরতে, তাঁকে চেনাতে তেরশ'র ওপর শব্দ সেদিন খরচ করেন পুলিৎজার জয়ী সাংবাদিক। তাও টাইমসের মতো ডাকসাইটে পত্রিকায়। 'দরজা খুলে গেল, দিদি বেরিয়ে এলেন, এই ডাকেই তাঁকে চেনে সবাই। দিদি মানে বড় বোন।' ঠিক এভাবেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর পরিচয় করিয়ে দেন জিম ইয়ার্ডলে, তাঁর 'এক ভারতীয় হ্যারিকেনের চোখ, যিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে হটাতে প্রত্যয়ী' শিরোনামে লেখা প্রতিবেদনে।

'কমিউনিস্ট শাসনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।' 

উচ্ছ্বাস টাইমস থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে। ব্রিটিশ গার্ডিয়ান থেকে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকে দ্য ইকনমিস্টে। বি বি সি ওয়ার্ল্ড থেকে গালফ নিউজে। আল জাজিরা থেকে ফ্রান্স ২৪টিভিতে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স থেকে অ্যাসোসিয়েট প্রেসে।

আর বিশ্ব পুঁজিবাদের বঙ্গজ সংস্করণ আনন্দবাজারে প্রথম পাতায় বহুদিনের স্বপ্নপূরনের শিরোনাম 'লাল শুধু ময়দানের কৃষ্ণচূড়ায়'। প্রতিবেদনে — ময়দানের সবুজে বিক্ষিপ্ত কৃষ্ণচূড়ার আগুন ছাড়া লালেরা শহর কলকাতা থেকে যেন 'ভ্যানিশ' হয়ে গেল।

টেলিগ্রাফে পাতাজোড়া শিরোনাম, 'ঐতিহাসিক বজ্রনির্ঘোষ'। গোটা প্রথম পাতাজুড়ে বার্লিনের প্রাচীরের ধাঁচে লাল দেওয়ালের পতন। প্রতিবেদনে — 'বাংলাকে 'মুক্ত' করতে মমতা ব্যানার্জির লঙ মার্চ সবুজ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে অবসান ঘটিয়েছে দুনিয়ার দীর্ঘতম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট শাসনের, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ভেলভেট, কমলা ও গোলাপী বিপ্লবগুলিকে — বার্লিনের প্রাচীর পতনের পর যা একের পর এক ঘটেছিল পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট জমানাগুলির ক্ষেত্রে।' 

স্বাভাবিক।

ভ্লাদিমির লেনিন আমাদের শিখিয়েছেন, 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে শ্রেণীসংগ্রামের অন্যান্য বিষয়গুলি থেকে পৃথক করলে চলবে না।' 

লেনিনের কথায় বারে বারে উঠে এসেছে 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতা'র প্রসঙ্গ। 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতা'কে বুর্জোয়াদের পক্ষ থেকে কোন্‌ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা হয়, সে সম্পর্কে লেনিনের অভিমত ছিল স্পষ্ট। তাঁর শিক্ষা, 'পুঁজিবাদী সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কী? 'স্বাধীন' রাশিয়ায় তা কী ছিলো — তাতো সকলেই জানেন। আরো ভালো জানেন অগ্রসর ধনতান্ত্রিক দেশগুলির মানুষ — যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত এবং এই প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ধনতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হলো প্রকাশনা এবং জনগণকে প্রভাবিত করার জন্য বাণিজ্য। সংবাদপত্র জনগণকে প্রভাবিত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। পুঁজির ইচ্ছাতেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়, বা হয় না।'

।।তিন।।



পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের নির্বাচনী পরাজয়ে কর্পোরেট মিডিয়া দ্বিগুণ উৎসাহে ভারতের বুকে মার্কসবাদের মৃত্যুঘণ্টা বাজাতে শুরু করেছেন। ভারতে মার্কসবাদ ও সমাজতান্ত্রিক ভাবনার আর নাকি কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। 

ওদের কে বলবে, মার্কসবাদ একটি সমাজ দর্শন, একটি জীবনবোধ। বিজ্ঞান ও সামাজিক অসাম্যের ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে এই দর্শন। এ‍‌ই দর্শন দিক নির্দেশ করে শ্রেণী- বৈষম্যের অবসানের। পুঁজিবাদী সমাজ গড়ে ওঠা শ্রেণী-বৈষম্য আর অসাম্যের ভিতের ওপর। আর পুঁজিবাদের যত বিকাশ ঘটবে ততই অসাম্য বৈষম্য বাড়ে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই তাই শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের আগুন জ্বালায়। এই বাস্তবতাই মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতাকে অনিবার্য করে তোলে। সামনে নিয়ে লেনিনকে। লেনিনবাদকে।

ওদের কে বলবে, রাজনীতি শুধু নির্বাচনী লড়াই নয়। আবার রাজনীতি শুধু প্রতিফলিত হয় না নির্বাচনের ফলাফলে। বিধানসভায় সংখ্যা কমেছে ঠিকই। কিন্তু, বিধানসভার বাইরে? লক্ষ কোটি মানুষ।

ওদের কে বলবে, বামপন্থীরা এরাজ্যে পরাস্ত হলেও, তাঁদের সঙ্গে রয়েছে ১কোটি ৯৬লক্ষ মানুষের সমর্থন। ৪১শতাংশ মানুষের আস্থা, প্রত্যয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন নিয়ে বামপন্থীরা বিরোধী বেঞ্চে। আর দিল্লিতে কংগ্রেস। সরকার চালাচ্ছে মাত্র ২৮.৫৫শতাংশের সমর্থন নিয়ে। 

ওদের কে বলবে, বামপন্থীরা শুধু দে‍‌শের নৈতিকতা ও বিবেকের অতন্দ্র প্রহরী নয়, বামপন্থীরা সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার অদম্য যোদ্ধা।

লাল ঝান্ডার শক্তি পেশীতে নয়, চেতনায়। তাই একে অবদমিত করা যায় না।

অগনিত সংগ্রামী মানুষের লড়াই, আত্মবলিদানের প্রতীক লালপতাকা। যুগ যুগ ধরে যে পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন, বয়ে নিয়ে চলেছেন যাঁরা, সেই রক্তপতাকার অসম্মান কোনও খেটে খাওয়া মানুষ সহ্য করতে পারেন না। কমিউনিস্টরা আত্মসমর্পণ করতে শেখেননি। 

গোর্কির উপন্যাসে, আইজেনস্টাইনের চলচ্চিত্রে, ব্রেখটের নাটকে, পিকাসোর চিত্রকলায়, পিট সিগারের গানে, নেরুদা, বিষ্ণু দের কবিতায় এই পতাকা উজ্জ্বল। আক্ষরিক অর্থেই লক্ষ কোটি শহীদের রক্তে এই পতাকার মহিমা চিরভাষ্কর। 

জারের প্রাসাদে এই রক্তপতাকা উড়িয়েই ঘোষিত হয় অক্টোবর বিপ্লব। রাইখস্ট্যাগে এই লালপতাকা উড়িয়েই ঘোষণা করা হয় হিটলার-ফ্যাসিবাদের মৃত্যু। এই রক্তপতাকা যখন পিকিঙয়ে পতপত করে ওড়ে, তখন চীনের আকাশে লালতারা। এই লালপতাকা উড়িয়েই সেদিন সায়গন হয়েছে হো চি মিন নগরী। এই লাল পতাকাই এই গ্রহের প্রবল পরাক্রান্তা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে একরত্তি দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার অর্ধশতাব্দী লড়াইয়ের মূল হাতিয়ার।

এই বাংলার হিমগ্লোবিনে হিল্লোল তোলে লাল ঝান্ডা। অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহীদের সাহসী রক্তে প্রাণবন্ত এই লাল ঝান্ডা।

বামপন্থীরা জানে, রাস্তা কেউ কাউকে দেয় না। রাস্তা করে নিতে হয়। রাস্তা কারো একারও নয়। সাতের দশকের ‌আধা ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাস স্থায়ী হয়নি বামপন্থার এই উর্বর জমিতে। সত্তর পারেনি। কালবেলা স্থায়ী হয়নি। কেশপুর হয়নি 'সি পি এমের শেষপুর'। বেলাইন হয়েছে পাঁশকুড়া লাইন। মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ ঘুরে দাঁড়ান। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। 

তাই বামপন্থাকে মোছা যায় না। বাংলার মানুষের সামাজিক চেতনায় বামপন্থার রয়েছে একটি স্থায়ী অবস্থান। তার শিকড় অনেক গভীরে। তা বিকশিত হবেই। অচিরেই মিথ্যা প্রমাণিত হবে কর্পোরেট মিডিয়ার প্রচার। বামপন্থীরা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস। মানুষ বুঝতে পারবেন এই প্রচারের ঢেউ ক্ষণিকের আলেয়া মাত্র।

সামনে মিছিলের ডাক।

এই মিছিলে মার্কস এঙ্গেলসের মনীষা ও শ্রমের দীপ্তি। এই মিছিলে লেনিনের ধ্রুপদী তত্ত্বায়ন। এই মিছিলে স্তালিনের একবুক প্রত্যয়। এই মিছিলে মাও, হো চি মিনের কবিতা। এই মিছিলে চে গুয়েভারার প্রত্যয়, ফিদেলের লড়াই। এই মিছিলে নৌ বিদ্রোহ তেভাগা তেলেঙ্গানা কাকদ্বীপ একাকার। এই মিছিলে হাতুড়ি হাতে মজুর, কাস্তে হাতে কৃষক। এই মিছিল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। এই মিছিলে স্পার্টাকাসের পৌরুষ। অহল্যার শপথ।

এই মিছিল রক্তপতাকার। এই মিছিল রেড ফ্ল্যাগের। এই মিছিল লাল নিশানের।

এই মিছিলে একদিন 'প্রতি মাস হবে অক্টোবর, প্রতিদিন প্রত্যেকে লেনিন।'

বিরোধী দলনেতা পদে
নির্বাচিত সূর্যকান্ত মিশ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে— পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থেকে নির্বাচিত সি পি আই (এম) বিধায়ক এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। শুক্রবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়। তারপরে বামফ্রন্ট বিধায়কদের বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। শুক্রবারই সরকারীভাবে বামফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তের কথা বিধানসভা সচিবালয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাঃ সূর্যকান্ত মিশ্র অতীতে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১সাল থেকে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন নারায়ণগড় কেন্দ্র থেকে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী থাকার পরে তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদেও রয়েছেন তিনি। তাছাড়া সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃত্বেও তিনি রয়েছেন। 

এদিন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিরোধী দলনেতা হিসাবে সূর্যকান্ত মিশ্রের নাম ঘোষণা করার পাশাপাশি সহকারী বিরোধী দলনেতা হিসাবে বাসন্তী থেকে নির্বাচিত আর এস পি বিধায়ক ও প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্করের নামও ঘোষণা করেছেন। আর বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক হিসাবে হুগলীর গোঘাট থেকে নির্বাচিত ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের নাম ঘোষণা করেছেন। অধ্যক্ষ নির্বাচনে বামফ্রন্ট কোনো প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিমান বসু। উল্লেখ্য আগামী ৩০শে মে বিধানসভার অধিবেশন বসবে।

লেনিন মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে কলকাতায় সভা ছাত্র-যুবদের

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে— 'বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন'। গড়বেতার আমলাগোড়ার স্টোর পাড়া কমরেড লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে এ'কথাই উচ্চারিত হলো রাজ্যের ছাত্রযুবসহ সমস্ত মানুষের কন্ঠে।

সেই উচ্চারণই ফিরে এলো শুক্রবারের বিকেলে। এদিন ধর্মতলার রানি রাসমনি এভিনিউতে, লেনিন মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তীব্র ধিক্কার জানালেন এস এফ আই, ডি ওয়াই এফ আই-সহ রাজ্যের ১২টি বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলক মৈত্র। সভায় বক্তব্য রাখেন ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী, এস এফ আই সর্বভারতীয় সম্পাদক ঋতব্রত ব্যানার্জি, রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র, পি এস ইউ'র পক্ষ থেকে রাজীব ব্যানার্জি, সারা ভারত ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শুভম ব্যানার্জি প্রমুখ। সভায় ছাত্রযুব নেতৃবৃন্দ বলেন, লেনিনের মূর্তির ওপর আক্রমণ শুধু একটি পাথরের মূর্তি ভেঙে দেওয়া নয়। এই আক্রমণ আসলে শ্রমজীবী মানুষের লড়াই আন্দোলনের ওপর আক্রমণ। যারা নির্বাচনের আগে লাল ঝাণ্ডা মুছে দেবার হুমকি দিয়েছিল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলে কারখানায় ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেবার কথা বলেছিল। তারাই রাতের অন্ধকারে ভেঙে দিয়ে যায় কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ ইলিয়ানভ লেনিনের মূর্তি। তাই নির্বাচনের পরে বিজয় উল্লাসের মধ্যে তারা টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে বামপন্থার ভবিষ্যৎ নেই বলে চিৎকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেন না, তারা জানেন পৃথিবীতে যতদিন অনাহার, বৈষম্য, শোষণ থাকবে, সবার জন্য শিক্ষা, সবার জন্য কাজের দাবিতে লড়াই চলবে, ততদিনই মানুষের মুক্তির সংগ্রামের নেতা লেনিন প্রাসঙ্গিক থাকবে। নির্বাচনের আগে বলেছিল 'বদলা নয়, বদল চাই'। তারাই এখন রাজ্যের সর্বত্র আক্রমণ নামিয়ে আনছে। বিশেষ করে যে সব এলাকায় বামপন্থীরা একটু শক্তিশালী, তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছেন, সেখানেই বিশেষ করে যুব শক্তির ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে প্রতিক্রিয়ার শক্তি। দেগঙ্গার গাঙানিয়া গ্রামে সামান্য ইট ভাটার শ্রমিক হরিপদ মণ্ডলকে যারা মারধর করে জীবন্ত পুঁতে দিতে পারে, তারাই মতাদর্শের ওপর আঘাত হানতে ভেঙে ফেলে লেনিনের মূর্তি।

এদিনে সমাবেশের শেষে এক দীর্ঘ মিছিল রাসমনি রোড থেকে ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশে এসে সমবেত হয়। এখানে লেনিনের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বামপন্থী ছাত্রযুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমবেত অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

মহিলানেত্রীর ওপর হামলার প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে— পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য এবং সি পি আই (এম) বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য ইন্দ্রাণী মুখার্জির উপর তৃণমূলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সভানেত্রী সাবিত্রী মজুমদার এবং সম্পাদিকা মিনতি ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, পঞ্চদশ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের অত্যাচার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শুধু ইন্দ্রাণী মুখার্জি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বামপন্থীদের ভোট দেওয়ার অপরাধে এইভাবেই সাধারণ মানুষের ওপর তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও শারীরিক আক্রমণ, কখনও অকথ্য ভাষা প্রয়োগ, কখনও আর্থিক জরিমানা প্রভৃতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির 'শান্তির বাণী' প্রচার প্রহসন ছাড়া যে আর কিছুই নয় তা এসব ঘটনাই প্রমাণ করে দেয়। এইসব ঘটনার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি পুলিস ও প্রশাসনের তরফে যথচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুষ্কৃতীদের শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন সাবিত্রী মজুমদার এবং মিনতি ঘোষ। 

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, গত ২৬শে মে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার সোমসার গ্রামে মহিলানেত্রী ইন্দ্রাণী মুখার্জি যখন স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন তখন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীবাহিনী তাঁর উপর চড়াও হয়। এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাণ্ডা নিয়ে ওই বাহিনী আবার বেলা ১১টা নাগাদ ইন্দ্রাণী মুখার্জির বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর বাড়ির অ্যাসবেসটসের চাল ভেঙে দেয়। রান্না ঘরের জানলা দিয়ে ইন্দ্রাণী মুখার্জির বৌদিকে আক্রমণ করে ও অকথ্য গালাগালি করে। পরে পুলিস এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ইন্দ্রাণী মুখার্জি এই হামলার কথা জানিয়ে পুলিসের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন বলেও পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গণটোকাটুকি আর নৈরাজ্যের কালি মুছে 
শুধু শহর নয়, আজ কৃতীর তালিকায় জেলারও নাম ৩৪বছরের সাফল্য

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৭শে মে– রাজ্যে সামগ্রিক শিক্ষা বিস্তারে আগের বামফ্রন্ট সরকার বিগত ৩৪বছরে যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তারই ফলশ্রুতি রাজ্যের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ বৃদ্ধি। মাধ্যমিকের ফলাফলে তারই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত তিন দশকের মাধ্যমিকের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে কৃতীরা এখন আর শহরে সীমাবদ্ধ নেই। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। জেলায় জেলায় বিভিন্ন অখ্যাত স্কুল থেকেও কৃতীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সেই সব স্কুলের ছেলেমেয়েরা। পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে শুধু জেলা থেকে নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীরা মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বছরের পর বছর। শুধু ছাত্ররা নয়, ছাত্রীরাও সমানতালে এগিয়ে এসেছে। শিক্ষার অঙ্গনে এসেছে তফসিলী জাতি ও আদিবাসী ঘরের ছেলেমেয়েরাও। ১৯৭৭-র আগে যা ছিল কল্পনাতীত। শুধু গত কয়েক বছরেই মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কী সেই শিক্ষানীতি নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার যার ফলে শিক্ষায় এই ধারাবাহিক অগ্রগতি? শিক্ষাবিদদের অভিমত হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের এই সাফল্য। সর্বশিক্ষা মিশন, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানসহ একগুচ্ছ প্রকল্প বামফ্রন্ট সরকার নিয়েছিল যাতে সমস্ত ছেলেমেয়ে শিক্ষার অঙ্গনে আসতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক বিতরণ, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল চালু করা, স্কুল ছুট শিশুদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসা ইত্যাদি কর্মসূচী রূপায়ণের মাধ্যমে এরাজ্যের শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে।

সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে চরম অরাজকতার মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল কংগ্রেসী রাজত্বে। ছাত্র সমাজকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৭সালে বামফ্রন্ট সরকার দায়িত্বভার নেওয়ার সময় শিক্ষাক্ষেত্রে কী পরিস্থিতি ছিল আজকের প্রজন্মের পক্ষে তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। ১৯৭০-৭৭সাল রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য ছিল শিউরে ওঠার মতো। অরাজকতা, খুনোখুনি, গণটোকাটুকি, পরের পর শিক্ষা বর্ষ পিছিয়ে যাওয়া–দেশ-বিদেশে কালিমালিপ্ত করে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি।

তাই ১৯৭৭সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই এক নতুন অভিযান শুরু করে। অভিযান বিকল্পের সন্ধানে। তারই ফলশ্রুতি রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে আনা। কংগ্রেস আমলের সর্বব্যাপ্ত নৈরাজ্য দূর করে ভর্তি, পঠন-পাঠন, পরীক্ষার ফলপ্রকাশে শৃঙ্খলা এবং বিদ্যায়তনে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা। শিক্ষা জগতকে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করা। 

বামফ্রন্টের শিক্ষানীতির কারণেই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ রাজ্যের সর্বত্র বেড়েছে এটা আজ সর্বজন বিদিত। ১৯৭৭সালে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২লক্ষ ৬হাজারের মতো। ২০১১সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯লক্ষ ৯৮হাজার ৬৭জন। কংগ্রেসী আমলে ১৯৭৬-৭৭সালে রাজ্যে যেখানে প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪২হাজার ৮৮১টি সেখানে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬হাজার। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও ৫১হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে সওয়া এক কোটি। বামফ্রন্ট সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার উপরে।এরফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার নিট অনুপাত ২০০৮-০৯সালে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৯.২শতাংশ।বছরের পর বছরে মাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীদের উত্তীর্ণের হারও বেড়েছে। ১৯৭৬সালে মাধ্যমিকে সাফল্যের হার ছিল ৪৮.৫৩শতাংশ। ১৯৮৫সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬.৬৪শতাংশ। ২০০০সালে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের হার হয় ৭০.৪৫শতাংশ। ২০১০সালে বেড়ে হয় ৮১.৭৮শতাংশ। আর এবছর উত্তীর্ণের হার দাঁড়িয়েছে ৮০.৫৭শতাংশ।অর্থাৎ সাফল্যের হারের রেখচিত্র ক্রম ঊর্ধ্বগতি। শুধুমাত্র তাই নয় দিনে দিনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় নথিভুক্ত হয়েও পরীক্ষা না দেবার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। এবছর এই হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৯শতাংশে। আসলে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বেড়েছে। এই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি। মাধ্যমিকে ছাত্রীদের অংশগ্রহণও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে প্রতি এক হাজার ছাত্র পিছু ১০৫১ছাত্রী । গত বছর ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল ৯৮১জন। এমনকি ছাত্রীদের পাশের হারও বেড়েছে। ২০০৯সালে ছাত্রীদের পাশের অনুপাত ছিল ৮২৬, ২০১০ সালে ৮৮৩ এবং ২০১১সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৯৪৪জন। তফসিলী জাতি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদেরও সাফল্যের হারে অনেক বেড়েছে। সাফল্যের হারের আঞ্চলিক বৈষম্যও অনেকটা কমে এসেছে। এই সামগ্রিক ফলশ্রুতি হচ্ছে মাধ্যমিকে রেকর্ড পরিমাণ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ। শহর ও শহরতলি ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সেই সাফল্যের ছোঁয়ায় আজ উদ্ভাসিত।পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের তাৎপর্য শুধু তাই তার মেয়াদের দৈর্ঘ্যে নয়। তার তাৎপর্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীভিত্তিক সফল ও সংবেদনশীল কর্মধারায়। তার চলিষ্ণুতায়। এখানেই ছিল বামফ্রন্ট সরকারের অনন্যতা।

তৃণমূলী হল্লা, বন্ধ হয়ে গেল চেক বিলির অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি

কালনা, ২৭শে মে — বণ্টনে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে শুক্রবার আবাসনের চেক বিলির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিল তৃণমূলীরা। ফলে ইন্দিরা আবাসনের অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলো পঁয়ত্রিশটি দুঃস্থ সংখ্যালঘু পরিবার। ঘটনাটি কালনা ১নং পঞ্চায়েত সমিতি দপ্তরে ঘটেছে।

তৃণমূল পরিচালিত কালনা-১নং পঞ্চায়েত সমিতিতে শুক্রবার সংখ্যালঘুদের জন্য ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পের চেক বিলি করা হবে বলে নির্দিষ্ট ছিল। এই পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত অষ্টগড়িয়া-সিমলন গ্রাম পঞ্চায়েতের পঁয়ত্রিশটি সংখ্যালঘু পরিবার চেক নিতে আসে। চেক বিলির মুখে একদল তৃণমূল সমর্থক বণ্টনে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে হই-হট্টগোল শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, সি পি আই (এম) পরিচালিত এই পঞ্চায়েত আবাসন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলবাজি করেছে। চেক বিলি বন্ধ করতে হবে।

বেগতিক দেখে কালনা ১নং সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অলভিয়া রায় দু'পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। অষ্টগড়িয়া-সিমলন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী নেতা তথা তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেন, আমরা যে ১২টি সংখ্যালঘু পরিবারের নাম দিয়েছিলাম — তার মধ্যে তিনটি পরিবারের নাম নেই। ঐ তিনজনের নাম বাদ দিয়ে প্রধান তাঁর তিন দলীয় কর্মীর নাম ঢুকিয়েছেন। সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বলেন, আপনি যে অভিযোগ করছেন তার প্রমাণ দিন। এই ব্যাপারে বিরোধীরা কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। তা সত্ত্বেও প্রধান সুকান্ত রায় তাদের বিনয়ের সাথে প্রস্তাব দেন, যাদের নামে চেক তৈরি হয়ে গেছে তাদের বাদ দেওয়া যাবে না। আপনার যে তিনজনের নাম বলছেন পরবর্তীতে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হবে। প্রয়োজনে আমি লিখিত দিচ্ছি। এই প্রস্তাব মানার ব্যাপারে বিরোধীদের কোন উৎসাহ দেখা যায়নি। বরং তারা চেক বিলি বন্ধের ব্যাপারেই উৎসাহ দেখিয়েছেন।

সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকও বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোন উপায় না দেখে তিনি আবাসন প্রকল্পের চেক বিলি স্থ‍‌গিত রাখা হলো বলে ঘোষণা করেন। প্রখর রৌদ্রের মধ্যে পঁয়ত্রিশটি সংখ্যালঘু পরিবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিল খেতমজুর ইউনিয়ন

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, ২৭শে মে— আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কংগ্রেস জোট সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিলো সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। শুক্রবার সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েই চলেছে। গত ১৫ই মে থেকে খাবারের দাম ২১শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পেট্রোল এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলেই খাদ্যশস্যের দামের এতো বৃদ্ধি হয়েছে। এরফলে দেশের প্রায় ৮৪কোটি মানুষ যাঁরা দিনে ২০টাকার বেশি খরচ করতে পারেন না, তাঁদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। 

রেশন চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য রাজ্যগুলিকে সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছে খেতমজুর ইউনিয়ন। একশো দিনের কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য রেগায় কমপক্ষে ১০হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্প ঘোষণা করছে কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করছে না। এরফলে যথাযথভাবে প্রকল্প রূপায়ণ হচ্ছে না। মানুষ কোনোভাবেই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারছে না। এর ওপর আবার গ্যাসের এবং ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার। যা সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ করবে। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন তাদের সমস্ত ইউনিটকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, রেগার কাজের পরিধি বাড়ানোর দাবিতে এবং রেশনের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করার আহ্বান জানিয়েছে।

বামফ্রন্টের পরাজয়ে অস্ত্র-কাণ্ড বাড়তি সুবিধা পাবে সি বি আই!

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, ২৭শে মে —পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বামফ্রন্টের পরাজয়ে নাকি পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলায় বাড়তি সুবিধা পাবে সি বি আই! এতে নাকি ঐ অস্ত্রবর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা কিম ডেভির প্রত্যর্পণের বিষয়টিও অনেক সহজতর হবে! পশ্চিমবঙ্গে এখন 'কমিউনিস্ট'রা না থাকায় জেলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না, ডেভি ভারতে এলে এবার 'জামাই আদর' দেবে ভারত সরকার, সংবাদসংস্থা পি টি আই-র প্রতিবেদনে সি বি আই-র এমন মনোভাবের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। 

এই অদ্ভুত যুক্তির কারণও বেশ অদ্ভুত! কিম ডেভি যখন পশ্চিমবঙ্গের জেলে বন্দী অবস্থায় ছিলেন তখন নাকি তার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করা হয়নি। একথা ডেভির আইনজীবী তাঁর সওয়ালের সময় বলেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের ফল বের হয় ১৩ইমে আর ডেভির প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল ১৬ই মে। ঐদিন ডেভির আইনজীবী কোপেনহেগেনের আদালতে বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে ৩৪বছরের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটেছে। ফলে ডেভির কমিউনিস্টদের সম্পর্কে ভয় পাওয়ার আর কিছুই নেই।' এতেই উল্লসিত সি বি আই। তদন্তকারী সংস্থাটির ধারণা হয়েছে, এরপর আর ডেভির প্রত্যর্পণে আর কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতি বসু নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যেই ১৯৯৫সালে ১৭ই ডিসেম্বরের গভীর রাতে 'অ্যানটোনভ-এ এন-২৬' বিমানে চড়ে পুরুলিয়ার জঙ্গলঘেরা মাঠের মধ্যে অস্ত্রবর্ষণ করে কিম ডেভি, পিটার ব্লিচসহ বেশ কয়েকজন। সম্প্রতি এই চক্রান্তের কথা সরাসরি ফাঁস করে দিয়েছে ডেভি।

সংবাদসংস্থা পি টি আই শুক্রবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে অবশ্য কোনো সূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। বলা হয়েছে, ডেনমার্কের সরকার ডেভির প্রত্যর্পণে তখনই রাজি হবে যখন ভারতের তরফে দুটি আশ্বাস তারা আদায় করে নিতে সক্ষম হবে। প্রথমত, ডেভিকে কোনো প্রাণদণ্ড দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে ডেভি জেলজীবন কাটাবে ডেনমার্কে। ভারত সরকার সম্ভবত এই শর্তও মেনে নিতে চলেছে।

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy

প্রকাশ হতে পারে সিঙ্গুরের লিজ-চুক্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

সিঙ্গুর চুক্তির 'অপ্রকাশিত অংশ' সোমবার দেখানোর ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার মহাকরণে তিনি বলেন, "চুক্তির নানা তথ্য আমি সংগ্রহ করছি। মুখ্যমন্ত্রীকে তা দেখাব। তিনি যেগুলি 'টিক' দেবেন, সেগুলি প্রকাশ করা হবে।"

চুক্তির 'অপ্রকাশিত' অংশটি কী, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, "একটা হল সিঙ্গুর চুক্তি, যেখানে সরকার কী কী সুবিধা দিয়েছে তা বলা আছে। কিন্তু 'লিজ-চুক্তি'-টাই তো আসল। ওটা বিষ-চুক্তি। সেখানে বলা হয়েছে, কী কী শর্তে টাটা গোষ্ঠীকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।" চুক্তির এই অংশটিই মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে সোমবার প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানান পার্থবাবু।

ক্ষমতার আসার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সিঙ্গুরের 'অনিচ্ছুক' চাষিদের ৪০০ একর জমি ফেরত দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি সেই একই কথা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী এ দিন বলেন, "সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।"

হামলা বন্ধে মমতার কাছে যাচ্ছে ফ্রন্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও সারেঙ্গা

বাম নেতা কর্মীদের উপরে আক্রমণ বন্ধ করতে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হচ্ছে বামফ্রন্ট। আগামী ৩ জুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।

তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন সিপিএমের 'হার্মাদ'দের হাত থেকে তৃণমূল কর্মীদের 'রক্ষা' করতে কখনও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দ্বারস্থ হননি। দরকারে তিনি রাজ্যপালের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা (২০০১-২০০৬) থাকার সময়ে সিপিএমের হামলা-আক্রমণ বন্ধ করার দাবি নিয়ে একাধিক বার বুদ্ধবাবুর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এখন শাসক জোট যাতে বাম কর্মীদের উপরে 'সন্ত্রাস' বন্ধ করে, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু তার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। তাই সরকার পক্ষের উপরে 'চাপ' বাড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকে। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাম নেতৃত্ব জনমানসে এই 'বার্তা'ও দিতে চাইছেন যে, বিরোধী ভূমিকায় থাকাকালীন তৃণমূল দীর্ঘ দিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুকে বয়কট করে চললেও তাঁরা এখনও পর্যন্ত সেই রাস্তায় হাঁটছেন না।

পায়ে পায়ে

তখন রাজভবনে ঢুকছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তাতেই হঠাৎ তাঁকে প্রণামের
চেষ্টা এক অফিসযাত্রীর। শুক্রবার অশোক মজুমদারের তোলা ছবি।

রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ৩১ মে-র সমাবেশেও বাম নেতারা তাঁদের উপরে হামলার বিরুদ্ধে সরব হবেন। বিধানসভার মধ্যেও বিষয়টি তোলা হবে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু এ দিন বলেন, "ভোটের ফল প্রকাশের পরে এ পর্যন্ত ১০ জন বাম কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। খুন-জখম, গণতন্ত্র ধ্বংস করা, ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের কাছে স্মারক-লিপি দেওয়া হবে।" প্রসঙ্গত, অস্ত্র উদ্ধার যেমন চলছে, তেমনই অস্ত্র উদ্ধারের নামে জেলায় জেলায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের হেনস্থা-মারধরের রেওয়াজও অব্যাহত। বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার গড়গড়িয়া গ্রামে সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক-সহ দু'জনকে এ দিন মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি 'চাপ' দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে ওই সিপিএম নেতা ও কর্মীকে উদ্ধার করে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি মেনে ওই দু'জনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ অবশ্য কোনও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। দলীয় কার্যালয়ে অস্ত্র আছে, এই অভিযোগে বুধবার রাতেও জয়পুর থানার কড়কবেড়িয়া গ্রামে সিপিএমের এক অশীতিপর লোকাল কমিটি সদস্য এবং আরও দুই কর্মীকে মারধর করেছিল তৃণমূল। সারেঙ্গার ঘটনায় ফের স্পষ্ট, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'বদলা নয়, বদল চাই'-এর কথা বললেও তৃণমূল স্তরে তা মানতে নারাজ তাঁর দলেরই কর্মীদের একটা বড় অংশ।

আলিমুদ্দিনে এ দিন ফ্রন্ট নেতৃত্বের সঙ্গে বাম বিধায়কদের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সূর্যবাবু বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হন। সহকারী দলনেতা হয়েছেন আরএসপি-র সুভাষ নস্কর। দু'জনেই মন্ত্রী ছিলেন। বিরোধী পক্ষের সচেতক নির্বাচিত হয়েছেন গোঘাট থেকে নব-নির্বাচিত ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক। ১৯৭২ সালের বিধানসভা সিপিএম বয়কট করেছিল। সেই সূত্রে ৪০ বছর বাদে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় দেখা যাবে সিপিএমের কোনও নেতাকে। সূর্যবাবুকে সাহায্য করার জন্য তাঁর আপ্ত-সহায়ক নিযুক্ত হচ্ছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। এত দিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর আপ্ত-সহায়ক ছিলেন।

অষ্টম দিনে

 রাজ্যপালের সঙ্গ বৈঠক 
 মাধ্যমিকে কৃতীদের জন্য ফুল
 ৬২টি স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত
 আরজিকরে আরও ৩০টি শয্যা
 সকালে শম্ভুনাথ পণ্ডিতে
 পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক
 দুই জেলার লিশ সুপার বদলি
(পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়া)

বামফ্রন্টের যে ৬২ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৩১ জনই নতুন। বিমানবাবুর কথায়, "এঁদের প্রায় কেউই বিরোধী দলের ভূমিকা কোনও দিন পালন করেননি। সুতরাং কী করে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হয়, তা তাঁদের শিখতে হবে।"

বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বিমানবাবু বলেন, উন্নয়নের কাজে সরকারকে যেমন সমর্থন করতে হবে, তেমনই গঠনমূলক সমালোচনাও করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কাজের ব্যর্থতা বা দুর্নীতি যদি দেখা দেয়, তা-ও তুলে ধরতে হবে। বিধায়কদের বৈঠকে সূর্যবাবু বলেন, বিরোধীর ভূমিকা পালন করতে গিয়ে জনগণের দাবিদাওয়া বিধানসভায় উত্থাপন করাই হবে প্রধান লক্ষ্য। বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অকারণে তারা স্পিকার-পদে প্রার্থী দেবে না।

বিধানসভায় বিরোধী দলের ঘরে এ দিন থেকেই বসতে শুরু করেছেন বাম বিধায়কেরা। তাঁদের কাজে সাহায্য করার জন্য সিপিএমের রাজ্য নেতা রবীন দেবও বিধানসভায় এসেছিলেন। বিদায়ী স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এ দিন বিধানসভায় তাঁর ঘর থেকে পাসপোর্ট-সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ দিন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় হালিমকে প্রায়ই বিদেশ যেতে হত। তার কাগজপত্র সব বিধানসভাতেই থাকত। আজ, শনিবারও হালিম বিধানসভায় আসতে পারেন। কিন্তু সোমবার নতুন স্পিকার নির্বাচনের দিন থেকে তিনি আর বিধানসভায় আসবেন না।

'অতি দ্রুত' মহিলা পুলিশ চান মমতা

অেশাক সেনগুপ্ত • কলকাতা

কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে রাজ্যে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'অতি দ্রুত' এই নিয়োগ করতে হবে বলে তিনি রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকার গত বছরই মোট বাহিনীর অন্তত ১০ শতাংশ মহিলা নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। এ রাজ্যে তা একেবারেই রূপায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। দিন দু'য়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অবিলম্বে ওই নিয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, "মোট বাহিনীর ১০ শতাংশ মহিলা থাকা উচিত। আছে তার চেয়ে অনেক কম। মুখ্যমন্ত্রী এ দিকটা দেখতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।"

গত বুধবার মহাকরণে ঢোকার মুখে মহিলা পুলিশ না-দেখে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মহাকরণের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ কমিশনারকে অবিলম্বে প্রবেশপথে মহিলা পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে লালবাজারের কর্তারা ওই জায়গায় পালা করে দু'জন অর্থাৎ মোট চার জন মহিলা পুলিশকে মোতায়েন করেন।

ুলিশে মহিলা

কলকাতা
থাকা উচিত 
২৬০০
আছেন 
২৮৮
রাজ্য

থাকা উচিত 
৬০০০
আছেন 
১৮৮৮

রাজ্যে মহিলা পুলিশের অপ্রতুলতা নিয়ে আগেও কথা উঠেছে। গত বছর, ৩ ডিসেম্বর সায়েন্স সিটিতে পুলিশের সম্মানজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ১৪০ জন পুরস্কারপ্রাপকের মধ্যে মহিলা ছিলেন মাত্র দু'জন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন।

কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বুদ্ধবাবু যখন ওই নির্দেশ দেন, তখন কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে ছিলেন গৌতমমোহন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "আমরা বাহিনীর ১০ শতাংশ মহিলা নিতে চেয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্র দফতর তা শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন করে। শর্তটি ছিল, পুরুষ পুলিশ কমিয়ে দিতে হবে। তা মানা সম্ভব হয়নি। তাই নতুন করে মহিলাও নেওয়া যায়নি।"

কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বাণীব্রত বসু বলেন, "কয়েক মাস আগেই মহিলা পুলিশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য তা আটকে গিয়েছিল।" কলকাতার যুগ্ম-কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, "আমরা স্বরাষ্ট্র দফতরে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। মোট বাহিনীর ১০ শতাংশ অর্থাৎ মোট ২৬০০ জন মহিলা হয়তো নেওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য, দ্রুত ২০০০ মহিলা পুলিশ নিয়োগ করা।"

চলছে হামলা, মারধর

অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে ইনাম কবুল পুলিশের

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

লকাতার লাগোয়া জেলায় অস্ত্র উদ্ধারে এ বার জনতার দ্বারস্থ হল পুলিশ। অস্ত্র বা বোমার খোঁজ দিলেই আর্থিক পুরস্কার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ এই ঘোষণা করে প্রচারপত্র বিলির পরিকল্পনা করেছে। এর পাশাপাশি জেলায় জেলায় অস্ত্র উদ্ধার এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার মলিঘাটি অঞ্চলের বসন্তপুরে তৃণমূলের লোকজনের হাতে প্রহৃত হন সিপিএমের ডেবরা জোনাল সদস্য শ্রীদাম বেরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার কেন?

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, "সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় অস্ত্র ও বোমা মজুত করে রাখার সম্ভাবনা প্রবল। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা পুরস্কারের ঘোষণা শুনে বেআইনি অস্ত্রের হদিস দিতে পারেন। তাই প্রচারপত্রে ইনামের কথা জানানো হচ্ছে।"

পুলিশ জানিয়েছে, যিনি অস্ত্রের খোঁজ দেবেন, তাঁর নাম গোপন রাখা হবে। আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে অস্ত্র ও বারুদ উদ্ধারের পরিমাণ অনুযায়ী। প্রচারপত্রে চারটি ফোন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। ওই সব নম্বরে ফোন করে অস্ত্রের খবর পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪২টি থানা এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক প্রচারপত্র বিলি করা হবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "আপাতত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচারপত্র বিলির পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্যান্য জেলা নিয়েও আলোচনা চলছে।"

এ দিন আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গোঘাটে সিপিএমের দু'টি কার্যালয়ে বেশ কিছু অস্ত্র পাওয়া যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সিপিএমের বদনগঞ্জ ও তিলাড়ি শাখা কার্যালয়ে অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে বলে দাবি তোলেন তৃণমূল-সমর্থকেরা। সকালে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং গোঘাট দু'নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ সোমের উপস্থিতিতে পুলিশ ও আধাসেনা ওই দু'টি কার্যালয়ের তালা ভেঙে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে ছ'টি মাস্কেট, একটি পাইপগান, চারটি গুলি এবং কয়েকটি বোমা উদ্ধার হয়েছে।

এ দিন গোঘাটের দড়ি নকুণ্ডায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ১৩টি তাজা বোমা পাওয়া গিয়েছে। আরামবাগের চারমাইলে একটি পুকুরের পাড়ে পাওয়া গিয়েছে একটি পিস্তল। আরামবাগের সালেপুরে সিপিএম কার্যালয়েও তল্লাশি চলে। সেখানে কিছু শাড়ি এবং থান-কাপড় মিলেছে।

শালবনির আসনাবনিতে রাস্তার ধারে একটি বস্তায় আটটি বন্দুক পেয়েছে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুরেও। পুলিশ জানায়, গোগড়া গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে মেলে তিনটি ওয়ান-শটার, দু'টি রিভলভার, একটি .৯ এমএম পিস্তল এবংকিছু কার্তুজ। নদিয়ার ফুলিয়া-তালতলাপাড়ায় একটি বিলে ধীবরেরা জাল ফেলায় দেশি বন্দুক, গুলি ও বোমা উঠে আসে। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের পতাকায় বেঁধে ওই সব অস্ত্র বিলের জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সিপিএম নেতৃত্বের পাল্টা বক্তব্য, পুরো বিষয়টিই সাজানো।

হামলাও চলছে সমানে। ডেবরার সিপিএমের অভিযোগ, মলিঘাটি-বসন্তপুরে তৃণমূলের বিজয়-মিছিল থেকে তাদের নেতা শ্রীদামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাড়ি থেকে বার পেটানো হয় তাঁকে। অন্য কয়েক জন দলীয় কর্মী-সমর্থকও প্রহৃত হয়েছেন। স্থানীয় পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের লোকেরাই বিজয়-মিছিলে হামলা চালায়। তখন ক্ষিপ্ত স্থানীয় মানুষজন প্রতিরোধ করেন। তৃণমূলের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিপিএমের অভিযোগ, গড়বেতা-৩ ব্লকের বিলা গ্রামে তাপসী সিংহ নামে এক আইসিডিএস কর্মীকেও তৃণমূল শাসিয়েছে। সবংয়ে দুই পার্টিকর্মীর জমিতে তৃণমূল পতাকা পুঁতে দিয়েছে। সিপিএমের গোয়ালতোড় জোনাল কমিটির সদস্য নিমাই নায়েককে বৃহস্পতিবার রাতে মারধর করা হয়ে বলে অভিযোগ। শালবনির সৌলা গ্রামে সিপিএমের শাখা সম্পাদক অজয় খোরকও প্রহৃত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিপুরের তোপখানাপাড়ার দুই কংগ্রেসকর্মীর বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ওখানে কংগ্রেস এক সিপিএম-কর্মীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। ভাঙচুর হয় একাধিক সিপিএম-কর্মীর বাড়ি।

'স্বাধীন' হয়ে দল গড়ার সময় এসেছে, 'বার্তা' অশোকের

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে এ বার দলকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে বলে দলের অন্দরে 'বার্তা' দিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। দু'দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের জবাবি বক্তৃতায় শুক্রবার অশোকবাবু বলেছেন, এখন আর তাঁদের সামনে কোনও 'রক্তচক্ষু' নেই। এখন তাঁরা 'স্বাধীন'! ফ ব সূত্রের ব্যাখ্যায়, অশোকবাবুর ইঙ্গিত ছিল বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের রাজনৈতিক 'শাসন' থেকে মুক্তির দিকেই। বামফ্রন্টের অন্যতম স্থপতি এই প্রবীণ নেতার এমন বার্তাকে ফ্রন্ট রাজনীতিতে অত্যন্ত 'তাৎপর্যপূর্ণ' বলেই ধরা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটিতে জবাবি ভাষণে এ দিন অশোকবাবু বলেন, ৩৪ বছর রাজ্যে সরকারে থেকে দলের সম্পদ অনেক হয়েছে। কিন্তু দলটাকে সে ভাবে গড়ে তোলা যায়নি। এখন দল গড়ে তোলার সময় পাওয়া গিয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য বারেবারেই যে নানা রকমের 'আপস' করতে হয়েছে, সেই দিকেই ইঙ্গিত ছিল অশোকবাবুর। সিপিএমের 'রক্তচক্ষু'র কাছেও হামেশাই রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ভাবে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। এখন

বামফ্রন্ট ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার পরে 'প্রকৃত বামপন্থা'র পথে থেকে, জনস্বার্থে আন্দোলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যাবে বলে রাজ্য কমিটির সদস্যদের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক।

রাজ্য কমিটিতে পেশ-হওয়া রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য মূলত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। রাজ্য কমিটির সদস্যেরা বিগত সরকার এবং সিপিএমের কাজকর্মের পাশাপাশিই ফ ব কেন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম বা দিনহাটা-কাণ্ডে একাধিক বার মতবদল করেছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। জবাবি বক্তৃতায় অশোকবাবু সরাসরি তার ব্যাখ্যায় যাননি। তিনি বরং বেশি করে বোঝাতে চেয়েছেন, ক্ষমতা হারানোর পরে দলকে গড়ে তোলার এই 'সুযোগ' কাজে লাগাতে হবে। আগামী ২২ জুন ফ ব প্রতিষ্ঠার দিনটিকেই প্রতীকী ভাবে এর জন্য বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আবার তাঁদের 'লাল পতাকা' নিয়ে বেরোতে হবে।

ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস তাঁর জবাবি বক্তৃতায় পরামর্শ দিয়েছেন, নতুন সরকারের সঙ্গে আপাতত অহেতুক সংঘাতে যাওয়ার দরকার নেই। সরকার জনস্বার্থবিরোধী কাজ করলে তার প্রতিবাদ হবে। কিন্তু দলীয় নেতাদের এখন 'বাক্‌সংযম' অভ্যাস করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এবং তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি যখন মিলবে না, তখন জোট-সরকারেই বিরোধ বাধবে বলে তিনি বিশ্লেষণ করেন। জুন মাসের গোড়াতেই কলকাতায় ফ ব-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আলোচনা হবে। তার পরে অগস্টে আবার এলাকাভিত্তিক ফলাফল নিয়ে নির্বাচনী বিপর্যয়ের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা হবে রাজ্য কমিটির দু'দিনের বৈঠকে।

টুকরো খবর

পরের বারের পরীক্ষাসূচি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু ২৪ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ৭ মার্চ। প্রতিদিন পরীক্ষা চলবে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত। আগামী বছরের পরীক্ষাসূচি: ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভাষার প্রথম পত্র। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভাষার দ্বিতীয় পত্র, ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ভাষা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস, ১ মার্চ ভূগোল, ২ মার্চ ভৌত বিজ্ঞান, ৩ মার্চ জীবনবিজ্ঞান, ৬ মার্চ অঙ্ক এবং ৭ মার্চ অতিরিক্ত বিষয়।


হিসেব নেই, আটকে ব হু কেন্দ্রীয় প্রকল্প
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

সময়মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজের হিসেব দিল্লিতে জমা না-পড়ায় কেন্দ্রীয় অর্থ আটকে আছে বলে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ শুক্রবার জানান। এর ফলে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প ছাড়াও ইন্দিরা আবাসন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আটকে রয়েছে। ওই সব প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, তা নিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারীর সঙ্গে পঞ্চায়েত ভবনে দীর্ঘ আলোচনা হয় চন্দ্রনাথবাবুর। বিপিএল তালিকার উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে চন্দ্রনাথবাবু জানান, সব জেলাশাসককে জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন প্রতিটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সর্বশেষ রিপোর্ট দ্রুত রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেন।


মন্ত্রিসভা বসবে মাসে দু'বার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনে নানা পরিবর্তনের সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও নতুনত্ব আনতে চাইছেন। পরিবর্তনের আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভা মাসে একটি করে বৈঠকে বসত। পরিবর্তনের পরে নতুন সরকার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য প্রতি মাসে মন্ত্রিসভার দু'টি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পরে সব দফতরে নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, বৈঠকের পাঁচ দিন আগে সব দফতরের প্রস্তাব মুখ্যসচিবের কাছে পাঠাতে হবে। প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বুধবার বৈঠক হবে। বৈঠকের সময়সীমাও যে বাড়বে, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে। প্রতি মাসে বুদ্ধবাবুর মন্ত্রিসভার একমাত্র বৈঠকটি ১৫ মিনিটের বেশি হত না। এ-পর্যন্ত নতুন মন্ত্রিসভার যে বৈঠক দু'টি হয়েছে, তার মেয়াদ ছিল প্রায় দু'ঘণ্টা।


বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মাদ্রাসা' কেন
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

এ বার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে 'মাদ্রাসা' কথাটি জোড়ার সরকারি সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাল ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক দল ছাত্র। শুক্রবার বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা বি বা দী বাগে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম হবে 'আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়'। বিক্ষোভকারী ছাত্রদের প্রশ্ন, 'মাদ্রাসা' মানে তো বিদ্যালয়। তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওই কথাটি যোগ করার কারণ কী?

রেজ্জাকের 'দুঃখপ্রকাশ', বিরোধ মিটল আপাতত

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

সিঙ্গুর প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় আবার দলীয় নেতৃত্বের কাছে 'দুঃখপ্রকাশ' করেছেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। শুক্রবার সিপিএম সূত্রে তেমনই জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই রেজ্জাককে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠকে বসেছিল আলিমুদ্দিন। বৈঠকে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন প্রমুখ। সিপিএম সূত্রের দাবি, সেখানেই রেজ্জাক বলেন, 'সিঙ্গুরে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব' বলে তাঁর মন্তব্য নিয়ে তিনি দুঃখিত। ওই কথা বলা তাঁর উচিত হয়নি। 'আলিমুদ্দিনে স্বাধীনতা নেই, বিধানসভায় আমি স্বাধীন' বলেও রেজ্জাক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি 'দুঃখপ্রকাশ' করার আপাতত রেজ্জাকের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের বিরোধে ইতি পড়ল।

শুক্রবার নির্বাচিত বাম বিধায়কদের বৈঠক ছিল আলিমুদ্দিনে। সেখানে রেজ্জাক আসেননি। তিনি কিছু শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সিঙ্গুর প্রসঙ্গে রেজ্জাক মোল্লা যা বলেছেন, দল কি তা অনুমোদন করে? এদিন এই প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, "না। করে না। ও কথা বলার জন্য রেজ্জাক দুঃখপ্রকাশ করেছে। তাঁর ও কথা বলা ঠিক হয়নি।"

পাশাপাশিই রেজ্জাকের এদিনের অনুপস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিমানবাবু বলেন, "রেজ্জাকের শরীর খারাপ। চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। ওর শরীরে অনেকগুলি পরীক্ষা করতে হবে। একদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তাই বিধায়ক দলের বৈঠকে আসতে পারেনি।" বিধানসভা ভোটে বামেদের পরাজয়ের ঠিক পরেই বুদ্ধ-নিরুপম সম্পর্কে কড়া মন্তব্য। তারপর আবার বিধানসভায় শপথে গিয়ে সিঙ্গুর নিয়ে দলের নীতির বিরুদ্ধে মন্তব্য। ওই পুনরাবৃত্তিকে কী ভাবে দেখছেন? জবাবে উত্তেজিত বিমানবাবু বলেন, "সাংবাদিকরা যা খুশি লিখতে পারেন!" এদিন রেজ্জাকের মোবাইল সারা দিনই বেজে গিয়েছে। ফোন তোলেননি 'স্বঘোষিত' বিদ্রোহী নেতা।

জমি-মানচিত্র তৈরির লক্ষ্যে চিঠি সব জেলাকে

স্বপন সরকার • কলকাতা

বিরোধী নেত্রী হিসেবে এত দিন জমি মানচিত্র তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তা তৈরির কাজে হাত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কোন জমি কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে খোঁজখবর করতে দিন কয়েক আগেই এক বৈঠকে সব জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই নির্দেশ অনুযায়ী ইতিমধ্যে জমির অবস্থা জানানোর জন্য সব জেলাশাসককে তো বটেই, এমনকী প্রতিটি দফতরের সচিবকেও অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছেন ভূমি দফতরের কমিশনার আর ডি মিনা। এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ওই সব তথ্য জানাতে বলা হয়েছে তাঁদের। দু'-একটি দফতরের সচিব তাঁদের রিপোর্ট পাঠাতে শুরুও করেছেন।

চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে
১) কোন দফতরের জমি?
২) কতটা জমি রয়েছে সেই দফতরের হাতে?
৩) তার মধ্যে কতটা জমি ব্যবহার হচ্ছে এবং কতটা অব্যবহৃত?

৪) কতটা জমি বেদখল রয়েছে?

৫) কোনও জমি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে কি না? যদি থাকে, তা হলে তার পরিমাণ কতটা?

বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বারবার এ রাজ্যে জমি-মানচিত্র তৈরির দাবি তুলেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সেটাই বাস্তবায়িত করতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর মমতা নিজের হাতে রেখেছেন। জানা গিয়েছে, প্রস্তাবিত জমি-নীতির খসড়া তৈরির কাজে তিনি বিভাগীয় অফিসারদের বলেছেন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে। সেই তালিকায় নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন যেমন রয়েছেন, রয়েছেন প্রাক্তন ভূমি রাজস্ব সচিব দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বামপন্থী বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতেও আগ্রহী মমতা। কেন না, রাজ্যস্তরে জমি-নীতি নিয়ে ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করছেন তিনি। মহাকরণ সূত্রে খবর, সব জেলার তথ্য হাতে নিয়েই মমতা জমি-মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করতে চান। তাই ভূমি দফতরের তরফে জেলাশাসক ও সচিবদের কাছে জমির তথ্য জরুরি ভিত্তিতে জানতে চাওয়া হয়েছে।

'জনস্বার্থের' দোহাই দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণের পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ জমি সরকারের নয়, কৃষকের। জমির প্রকৃত অবস্থা জানতে স্থানীয় কৃষক বা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলার পক্ষপাতী তিনি। কৃষক বা জমি-মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা করেই জমি অধিগ্রহণ করা যাবে বলে আগেই জানান মমতা।


ইতিহাস ও অঙ্কে খারাপ ফল, পাশের হার কমলো মাধ্যমিকে

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রপর দু'বছর বেড়েছিল। কিন্তু এ বার মাধ্যমিকে পাশের হার কিছুটা কমে গিয়েছে। ২০০৯ সালে মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৮১.৭৪ শতাংশ। ২০১০-এ সামান্য বেড়ে তা হয়েছিল ৮১.৭৮ শতাংশ। এ বার সেটা নেমে এসেছে ৮০.৫৭ শতাংশে। অর্থাৎ গত বারের চেয়ে ১.২১ শতাংশ কম। শুক্রবার ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

২০০৯ থেকে মাধ্যমিকে বিষয়-ভিত্তিক নম্বর ও গ্রেড দেওয়া হচ্ছে। মোট নম্বর, বিভাগ, স্টার ইত্যাদির উল্লেখ থাকে না মার্কশিটে। মেধা-তালিকা প্রকাশও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পর্ষদ এ বার আট জন কৃতী পরীক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করেছে। ওই পরীক্ষার্থীরা মাধ্যমিকের সব বিষয়েই 'এএ' গ্রেড অর্থাৎ ৯০ থেকে ১০০ পেয়েছে। তবে মোট নম্বরের ভিত্তিতে এরাই যে সকলের চেয়ে এগিয়ে, এমন না-ও হতে পারে।

পর্ষদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সব বিষয়েই 'এএ' গ্রেড পেয়েছে স্বাতী সাউ মণ্ডল, মেঘা মল্লিক, পৌলোমী নন্দী, নিবেদিতা মান্না, দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, অচিন্ত্য দে, আদিত্য অধিকারী, অর্ক চন্দ। তাদের মধ্যে স্বাতী ও পৌলোমী বর্ধমানের; মেঘা, দীপাঞ্জন, অচিন্ত্য আর অর্ক বাঁকুড়ার; আদিত্য উত্তর দিনাজপুরের এবং নিবেদিতা কলকাতার।

মাধ্যমিকের সফল পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের সকলেই যাতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আরও ৬২টি মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হচ্ছে। এর জন্য যেখানে যেমন প্রয়োজন, শিক্ষকও নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া এখন যে-সব স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ানো হয়, সেখানে ২০% আসন বাড়ানো হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী জানান, সব জেলার কৃতীদের বাড়িতে ফুল-মিষ্টি ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু মাধ্যমিকে পাশের হার এ বার কমে গেল কেন?

পর্ষদ-সভাপতি অঞ্জন সেনগুপ্তের মতে, এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। তবে তিনি জানান, ইতিহাস ও অঙ্কে ফল একটু খারাপ হয়েছে। ওই দু'টি বিষয়ে কেন ফল খারাপ হল, কী করা দরকার— তা নিয়ে পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে আলোচনা হবে। নবম ও দশম শ্রেণির মিলিত পাঠ্যক্রমে এটাই ছিল শেষ মাধ্যমিক। আগামী বছর থেকে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে পরীক্ষা হবে। তখন পাশের হার বাড়বে বলে পর্ষদ-সভাপতি আশা প্রকাশ করেন।

ওরা আটজন

নামনিবেদিতা মান্না পৌলমী নন্দী স্বাতী সাউ মণ্ডলদীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
স্কুল নিবেদিতা গার্লস, বাগবাজারচিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু গালর্স হাই চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু গালর্স হাইবাঁকুড়া জেলা স্কুল
জেলাকলকাতা বর্ধমানবর্ধমান বাঁকুড়া
গৃহশিক্ষক ৫ জনজানাতে চায়নি জানাতে চায়নি১০ জন
বাবা-মাবাবা চিকিৎসক,
মা গৃহবধূ
বাবা রেল কারখানার
কর্মী, মা গৃহবধূ
বাবা রেল কারখানার কর্মী, মা গৃহবধূদুজনেই স্কুল শিক্ষক
হতে চায়চিকিৎসক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারচিকিৎসক চিকিৎসক
নাম অচিন্ত্য দে মেঘা মিল্লকঅকর্ চন্দ আদিত্য অধিকারী
স্কুল কমলপুর নেতাজি হাইজয়রামবাটী রামকৃষ্ণ মিশন সারদা বিদ্যাপীঠ কেঞ্জাকুড়া
মোলবোনা হাই
রায়গঞ্জ করোনেশন হাই
জেলা বাঁকুড়াবাঁকুড়া বাঁকুড়াউত্তর দিনাজপুর
গৃহশিক্ষক৭ জন ৫ জন৬ জন ৭ জন
বাবা-মা দুজনেই প্রাথমিক
স্কুল শিক্ষক
বাবা ইলেকট্রিকের কাজ করেন, মা গৃহবধূবাবা শিক্ষক, মা গৃহবধূ বাবা শিক্ষক, মা পঞ্চায়েত সহায়ক
হতে চায় চিকিৎসক চিকিৎসকইঞ্জিনিয়ার চিকিৎসক

এ বার ১০ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। শেষ হয় ২২ মার্চ। ফল বেরোল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬৫ দিনের মধ্যেই। পর্ষদ-সভাপতি জানান, এ বার ছ'টি বিষয়ে 'এএ' গ্রেড পেয়েছে ২৯৩ জন এবং পাঁচটি বিষয়ে ১০৯৮ জন পরীক্ষার্থী 'এএ' পেয়েছে। 'এএ' গ্রেডের সংখ্যা সব থেকে বেশি ভৌত বিজ্ঞানে। ৩৫,৭০৬ জন ভৌত বিজ্ঞানে 'এএ' গ্রেড অর্থাৎ ৯০ বা তার বেশি নম্বর পয়েছে। অঙ্ক ও জীবনবিজ্ঞানে 'এএ' গ্রেড পেয়েছে যথাক্রমে ২৫,৬৫৩ জন এবং ২২,৫১৯ জন।

সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সব থেকে কম প্রথম ভাষায়। প্রায় ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৬০ জন প্রথম ভাষায় 'এএ' গ্রেড পেয়েছেন। এ রাজ্যে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীরই প্রথম ভাষা বাংলা। সেখানে আরও বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী 'এএ' গ্রেড পেল না কেন, বিশেষজ্ঞ কমিটিকে তা দেখতে বলা হবে বলে জানান পর্ষদ-সভাপতি।

অঞ্জনবাবু জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের পাশের হার ৮৭ শতাংশের কিছু বেশি। সংশোধনাগার থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন ৬৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৬৩ জনই উত্তীর্ণ হয়েছেন। সফলদের তালিকায় রয়েছেন মাওবাদী অভিযোগে প্রেসিডেন্সি ও মেদিনীপুর জেলে বন্দি পাঁচ জনও। সভাপতি জানান, প্রায় ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কারও ফলই অসম্পূর্ণ নেই।

মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা-ভিত্তিক ফল

জেলা

পাশের হার

জেলা

পাশের হার

পূর্ব মেদিনীপুর৮৯.৩৩ কলকাতা৮৬.৩০
পশ্চিম মেদিনীপুর৮১.৭৩ হাওড়া৮৪.৭০
নদিয়া৮১.৮৫ হুগলি৮৩.৯৭
মুর্শিদাবাদ৭৬.০৯ দক্ষিণ ২৪ পরগনা৮৪.৪৩
বধর্মান৭৮.৬৮ উত্তর ২৪ পরগনা৮২.২৬
বাঁকুড়া৭৩.১৮ মালদহ৭৭.৭১
বীরভুম৭২.০০ দার্জিলিং৭২.৮৫
পুরুলিয়া৬৫.৩৫ কোচবিহার৭০.১০
উত্তর দিনাজপুর৭৫.৪৩ জলপাইগুড়ি৬৬.৩০
দক্ষিণ দিনাজপুর৭২.৯১ (পাশের হার শতাংশে)

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...