বাংলা ব্লগ
অ-মানুষ নামে এক প্রজাতি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মানুষ কেন অন্য মানুষকে মারে, খুন করে? অনেকদিন ধরেই এই প্রশ্নটা খচখচ করে আমার মনে। আদিমকালে মানুষ যখন বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছিল, তখন থেকেই হিংসা ও হানাহানির শুরু, আজও সেই একই রকম কাণ্ড-কারখানা চলছে। ইংরিজিতে রেস মেমরি বলে একটা কথা আছে, অর্থাৎ যুগ যুগ ধরে, বংশ পরম্পরায় মানুষ দু'একটি স্মৃতি বহন করে, যা সে নিজেও জানে না। আদিমকাল থেকে সেই হিংসার স্মৃতিতে মানুষ যখন তখন খুনি হয়ে ওঠে। বাঘ কখনও অন্য বাঘকে মারে না, রাস্তার কুকুর যখন সীমান্তরক্ষার তাগিদে অন্য একটা কুকুরের সঙ্গে মারামারি করে, কী হিংস্র তাদের গর্জন, সাঙ্ঘাতিক হুটোপাটি, কিন্তু কোনও কুকুরই মরে না, কিছুক্ষণ পরে ওদের একজন হার স্বীকার করে, ল্যাজ গুটিয়ে পালায়, পিঁপড়েরা অন্য পিঁপড়েদের খুন করে না। একই প্রজাতির মধ্যে খুনোখুনির কলঙ্ক একমাত্র মানুষেরই। বাইবেলেও আছে, ভ্রাতৃহত্যা দিয়েই মানুষের ধারার শুরু।
ক'দিন ধরে আমার মনে হচ্ছে, আসলে কোনও মানুষই অন্য মানুষকে হত্যা করে না। অত্যন্ত রাগ আর রিরংসায় কিংবা নারীর ওপর অধিকার বা অর্থ লালসায় কোনও কোনও মানুষ হঠাৎ অমানুষ হয়ে যায়, তখন অন্যের প্রাণ হরণে তার হাত কাঁপে না। সে তখন আর মানুষ থাকে না, অ-মানুষ নামে অন্য এক প্রজাতি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে যে নিহত হয়, সে-ও আর মানুষ নয়। এইসব অমানুষদের অবয়ব দেখে কিছুই বোঝা যায় না।
পৃথিবীতে জনসংখ্যা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে অ-মানুষদের সংখ্যা? মানুষের সঙ্গে অমানুষদের একটা গোপন যুদ্ধ চলছে তো চলছেই।
No comments:
Post a Comment