कोलकाता में आप की धमक।आम आदमी की सादगी और भ्रष्टाचार विरोधी मुहिम अब दीदी को चुनौती देने लगी है।
पलाश विश्वास
हिमाचल के हरनोटजी,नैनीताल के उमेश तिवारी विश्वास और मुंबई के फिरोज मीठीबोरवाला के बाद अब कोलकाता की बारी है।शारे आकलन को गलत साबित करते हुए बंगाल की ध्रूवीकृत राजनीति में शायद पहलीबार किसी तीसरी शक्ति के धूमकेतु के तौर पर उदित होने के हालात बन रहे हैं।
रविवार को नव वर्ष के अवकास के मौके पर उत्सवी मिजाज में कोलकाता वालों ने मेट्रोचैनल पर आप कार्यकर्ताओं के चार लैपटाप में अपना दाखिला भी दर्ज करा लिया।इस जाहिर है,लहर नहीं कह सकते,यह पहल है।लेकिन बंगाल की यथास्थिति किसी अस्मिता की राजनीति से टूटने वाली नहीं है,इसका सबूत भी है यह।
अस्मिताओं से बाहर बौद्धमय विरासत के बंगाल का जो चरित्र है,भले ही विशुद्ध कारपोरेट हो या फिर एनजीओ टाइप,उसमें बंगाल के अलग तरह के अभिव्यक्त हो जाने की संभावना बनने लगी है।
यह अस्मिता की राजनीति से बंगाल को बदलने का ख्वाब सजाने वाले लोगों के लिए बाकायदा एक सबक है।
सबसे खास बात तो यह है कि अप्रतिद्वंद्वी और अपराजेय समझे जाने वाली ममता बनर्जी के चुनाव क्षेत्र दक्षिण कोलकाता में ही आप का कुछ ज्यादा ही असर होने लगा है।आम आदमी की सादगी और भ्रष्टाचार विरोधी मुहिम अब दीदी को चुनौती देने लगी है।
আপ-এ নাম লেখাতে ভিড় কলকাতাতেও নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দিল্লির সাফল্যের পর পশ্চিমবঙ্গে সদস্য সংগ্রহে নেমে প্রথম দিনে ভালই সাড়া পেল আম আদমি পার্টি (আপ)। ছুটির দিনে কলকাতার ধর্মতলায় বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চেয়ার-টেবিল পেতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আপ কর্মীরা দু'হাজারেরও বেশি সদস্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। সদস্যকরণ অভিযানের প্রথম দিনেই যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ! বিশেষত সেই রাজ্যে, যেখানে মাত্র আড়াই বছর আগে পরিবর্তন হয়েছে এবং তার পরেও একের পর এক ভোটের ফলে পরিবর্তনের কাণ্ডারী রাজনৈতিক দল তৃণমূলেরই জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের তুঙ্গ জনপ্রিয়তা এবং বামেদের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের পাশেই যে তৃতীয় একটি পরিসর মাথাচাড়া দিচ্ছে, এ দিন আপ-এর সদস্য হওয়ার জন্য বিভিন্ন বয়সের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ তারই ইঙ্গিত। ধর্মতলায় এ দিন সাত ঘণ্টা ধরে আপ-এর ল্যাপটপ-টেবিলের সামনে নাম নথিভুক্ত করতে লাইনে দেখা গিয়েছে ছাত্র-ছাত্রী, সদ্য কলেজ পাশ করা তরুণ-তরুণী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ডাক্তার দম্পতি, এমনকী অবসরপ্রাপ্তদেরও। তাঁরা ওই কর্মসূচির খবর পেয়েছিলেন ফেসবুক, এসএমএস, খবরের কাগজ, টিভি বা পরিচিত জনেদের মারফৎ। |
* ধর্মতলায় আম আদমি পার্টির সদস্য সংগ্রহ। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র। |
খড়্গপুরের গিরি ময়দান স্টেশন সংলগ্ন আরকন্যা বিদ্যালয়ের মাঠে এ দিনই দিল্লির 'আম আদমি' মুখ্যমন্ত্রী এবং খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন ছাত্র অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমর্থনে মাথায় সাদা টুপি পরে বৈঠক করেছেন প্রায় একশো জন। তাঁদের মধ্যে দু'জন আইআইটি-র ছাত্র, বাকিদের মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। সভার আহ্বায়ক খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন ঠিকাকর্মী মহাবীর যাদব বলেন, "দিল্লির রামলীলা ময়দানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ঐতিহাসিক লড়াইয়ের শুরু হয়েছিল তা আজ সফল। আমরা ওই লড়াইটাকেই আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে চাই।" গত কাল দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু রাজ্যে আপের মুখপাত্র রঞ্জনা সিংহের বক্তব্য, "আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষকে জাগ্রত করতে এসেছি।" সারদা কেলেঙ্কারির মতো সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়েও কিছু বলতে রাজি নন তিনি। তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "ওঁদের দল বলা হবে না মঞ্চ, তা এখনও পরিষ্কার নয়।" কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাসমুন্সির মতে, "দল হিসেবে ওদের অনেক পরীক্ষা দিতে হবে।" সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, "তৃণমূলের হামলা ছাড়া ওঁরা যে প্রথম দিন সদস্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন, ভাল কথা!" |
http://www.anandabazar.com/30raj7.html
আপ-ছায়ায় মোদীও আন্দোলনমুখী দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি ২৯ ডিসেম্বর |
ধোনির শহরে চল্লিশ মিনিটের নিখুঁত ইনিংস। তিনি খেললেন ধরে। মেরে খেলল দল। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার মামলায় আদালত তাঁকে রেহাই দেওয়ার পর আজই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন নরেন্দ্র মোদী। মাঝে তিনি ব্লগে দুনিয়াকে জানিয়েছেন, যন্ত্রণা-পর্ব পেরিয়ে এসে এখন তিনি মুক্তি ও শান্তি অনুভব করছেন। রাঁচির মঞ্চে আজ যেন সে ভাবেই পেশ করলেন নিজেকে। 'শাহজাদা', 'সাহাবজাদা'র পরে এ দিন তিনি রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তাঁর ঘোষণাকে 'আকাশবাণী' বলে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল তুলনায় কম। মিনিট চল্লিশের মধ্যে ধরে ধরে তিনি বোঝালেন, দাঙ্গার ভূত আপাতত ঘাড় থেকে নামার পর এখন তাঁর ভাবনা শুধুই কংগ্রেসের হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়ে সুশাসন দেওয়া। এর সমান্তরালে আক্রমণের দায়িত্ব সামলালেন দলের অন্য নেতারা। ভোট মেরুকরণের কথা মাথায় রেখেই উগ্র ভাবে তাঁরা কখনও আক্রমণ করলেন পাকিস্তানকে, কখনও মার্কিন প্রশাসনকে। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা তো ঘোষণাই করে দিলেন, "দাঙ্গার মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার পরেও যদি স্বয়ং বারাক ওবামা এসে মোদীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে যান, তা হলে আমরাও (ক্ষমতায় এলে) ওবামার ভিসা বাতিল করে দেব।" |
* |
জনসমুদ্রের উদ্দেশে। রবিবার রাঁচির জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি। |
নরম-গরমের এই মোদী-প্যাকেজের আর একটি দিকও বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল এ দিনের সভায়। তা হল, দল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে উপেক্ষা করে চলার কৌশল নিলেও তাঁর রাজনীতির সদ্য-সফল ধারাটি থেকে দূরে থাকতে চান না বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তা হল মানুষকে নিয়ে চলা। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের কাছে দরবার করা। গোটা দেশে সুশাসন আনার জন্য আজ এই পথেই গণ-আন্দোলনের ডাক দিলেন মোদী। মুখে কেজরিওয়ালের কথা না বলুন, কিন্তু মোদীর ওই আহ্বানের নেপথ্যে কেজরিওয়ালেরই ভাবনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রামদেবও আজ মোদীর হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করার কথা বলেছেন। দিল্লিতে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া কেড়ে নিয়ে বিজেপিকে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ। তাঁর আন্দোলনের ধারাকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চাইলেও মোদী কিন্তু নিশানায় রাখছেন রাহুলকেই। যাতে আগামী লোকসভা ভোটটা হয়ে ওঠে শুধুই কংগ্রেস-বিজেপি-র লড়াই। তাই কেজরিওয়ালের পাখির চোখ যদি হয় স্বচ্ছ প্রশাসন, সেখানে মোদী তাঁর সুশাসনের স্বপ্নের ডালিতে রাখছেন সকলের সব সমস্যা ঘোচানোর অঙ্গীকার। এমন সুশাসন, যা মূল্যবৃদ্ধি রুখবে, রোজগার বাড়বে, উন্নয়ন হবে এবং প্রশাসনকে করবে দুর্নীতিমুক্ত। মোদীর পরোক্ষ বার্তাটি স্পষ্ট, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি-ই একমাত্র বিকল্প শক্তি গোটা দেশে। এবং যে কারণে গণ-আন্দোলনের কথা বলা ভিন্ন মেজাজের এই মোদীও কিন্তু রাহুলকে নিরন্তর কটাক্ষ করে যাওয়া থেকে সরে আসছেন না। ক'দিন আগেই দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি রুখতে দিল্লিতে কংগ্রেস-শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রাহুল। তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দুর্নীতি রোখার ব্যাপারে তাঁর মনোভাবের কথা জানিয়ে দায় চাপান বিজেপির ঘাড়েই। রাহুলের ওই আক্রমণেরই আজ জবাব দিলেন মোদী। তাঁর কথায়, "পুরনো জমানায় আকাশবাণীর কথা শুনেছি। যাকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হত। আর এখন এক নতুন আকাশবাণী আসে। এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে, যাঁর হাতে রয়েছে দুর্নীতি দূর করা থেকে শুরু করে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর যাবতীয় দায়িত্ব ও অধিকার।" এখানেই শেষ নয়। রাহুলকে বিদ্রুপ করে মোদী আরও বলেন, "আকাশবাণী করেই লুকিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। নিজের দায় ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেন। যার থেকে তাঁর কপটতা ধরা পড়ে।" এর পরেই মোদী চ্যালেঞ্জ ছোড়েন, "দুর্নীতির লালনপালন হচ্ছে কংগ্রেসের কোলেই। আকাশবাণীতে এতটাই সততা থাকলে তার জবাব দিন।" মোদীর দাবি, কংগ্রেস জনতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই আকাশবাণী জনতার মঙ্গল করতে পারে না। তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। তাই বিকল্প পথের হদিস দিতে মোদী বলেন, "হেলিকপ্টারে আসতে গিয়ে দেখছিলাম, মাইলের পর মাইল পথ মানুষ হেঁটে আসছেন এই সভায় যোগ দিতে। জানি না তাঁরা পৌঁছতে পেরেছেন কি না। এঁরা আসছেন কুশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। সুশাসনের প্রত্যাশায়। দেশ জুড়ে তাই সুশাসনের দাবিতেই শুরু হোক গণ-আন্দোলন।" আগামী ক'মাসে দেশের আম ভোটারের কাছে এবং ভোটের আগে-পরে যে সব রাজনৈতিক দল পাশে আসতে পারে, তাদের সকলের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোটা বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর সামনে। যে কারণে ভোট মেরুকরণের ভার নিজের হাতে না রেখে, এ ব্যাপারে সামনে রাখছেন দলের অন্য নেতাদের। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে আদালত ক্লিনচিট দেওয়ার পরে সুদীর্ঘ নিবন্ধ লিখে নিজের যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলেন মোদী। আজ সে প্রসঙ্গ ছুঁয়েছেন শুধু কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে। এই প্রসঙ্গে সওয়াল করে গিয়েছেন বিজেপি-র অন্য নেতারা। দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ যেমন বললেন, "২০০২ সালের এক দাঙ্গাকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদীকে বারবার সাম্প্রদায়িক বলা হয়েছে। এ বারে যখন আদালত তাঁকে ক্লিনচিট দিল, কংগ্রেস মোদীকে বিপাকে ফেলার জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করল। মোদী নাকি গোয়েন্দাগিরি করছেন। মোদী তদন্ত কমিশন গঠন করার পরেও কেন্দ্র আবার কমিশন গঠন করছে।" মোদী নিজে এড়িয়ে গেলেও দলের সভাপতিই এ দিন তাঁকে হিন্দুত্বের সঙ্গে জড়িয়ে নেন সুকৌশলে। রামের সঙ্গে মোদীর তুলনা টেনে রাজনাথ বলেন, "ভগবান রাম যাতে সিংহাসনে বসতে না পারেন, তার জন্য মন্থরাও এমন ষড়যন্ত্র করেছিল যে, রামকে বনবাসে যেতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রামকে সিংহাসনে বসা থেকে কেউ ঠেকাতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস যত ষড়যন্ত্র করবে, ততই মোদী শক্তিশালী হবেন। কেউ তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকাতে পারবে না।" মোদীর সুশাসনের বার্তার সঙ্গে রাজনাথের ওই উপমা দুইয়ে মিলে তৈরি হল এক নিখুঁত মোদী-প্যাকেজ। যেখানে মোদী আর দলের চোখে পোস্টার বয় নন, খোদ রাম। যিনি সুশাসন দিতে সক্ষম। |
http://www.anandabazar.com/30desh1.html
প্রত্যাশার চাপে সময় চাইলেন কেজরিওয়াল নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ২৯ ডিসেম্বর |
কুয়াশা কাটিয়ে তখনও সূর্যের মুখ দেখেনি দিল্লি। কৌশাম্বির গিরনার টাওয়ারের সামনে ভিড় জমতে শুরু করল। শহরের নানা প্রান্ত থেকে। নানা পেশার। নানা বয়সের। নানা চাহিদারও। সেই নানা চাহিদার চাপ কতটা, ভিড়ের সঙ্গে ক'ঘণ্টা কাটিয়েই তা টের পেলেন গিরনার টাওয়ারের একটি তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী। কালই রামলীলা ময়দানে শপথ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পদে। এখনও সরকারি বাংলো নেননি। নিতে চাননি সরকারি নিরাপত্তা। জানিয়েছেন, লাল বাতি লাগানো গাড়ি চাই না তাঁর। তাতে কী? আম আদমির তো চাহিদার শেষ নেই। এবং সেটা কতটা, তা প্রথম দিন জনতা দরবারে এসেই বুঝে গেলেন অরবিন্দ। কতকটা যেন বাধ্য হয়েই তাই প্রথম দিন দরবারে ভিড় করা জনতার কাছে সময় চেয়ে নিয়ে বললেন, "আমাকে সাত থেকে দশ দিন সময় দিন। কোনও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। আমরা সবে দায়িত্ব নিয়েছি। সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা তৈরি করতে সময় লাগবে।" সময় যে লাগবে, সেটা বিলক্ষণ বোঝেন অরবিন্দ। তবু দ্রুত এগোতে চেয়ে প্রথম দিন থেকেই পা ফেলতে শুরু করেছেন নয়া মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত নিজের 'টিম' গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎসচিব আর কে বর্মা, দিল্লি জল পর্ষদের সিইও দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়-সহ ন'জন আমলাকে বদলি করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সচিব এম এম কুট্টিকে সমাজকল্যাণ দফতরে পাঠিয়ে উচ্চশিক্ষা সচিব রাজেন্দ্র কুমারকে প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নিয়োগ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ দফতরের আমলাদের নিয়ে কৌশাম্বির ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনাড়ম্বর ভাবে কয়েকটা বৈঠকও করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, বর্ষশেষের উৎসব আসছে ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজে ছুটি নেবেন না। আমলাদেরও ছুটি মিলবে না। ছুটি মিলবে কী করে? প্রথম দিন জনতার দরবারে পা রেখেই কয়েক'শো আবেদন হাতে এসেছে তাঁর! দিল্লি পরিবহণ নিগমের আড়াইশো অস্থায়ী কর্মচারী সাতসকালেই পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে। দাবি, ঠিকা কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা বন্ধ করে পাকা চাকরি। এমনটাই প্রতিশ্রুতি ছিল আম আদমি পার্টির ইস্তাহারে। নিজেদের সমস্যা নিয়ে হাজির ছিলেন বাল্মিকী সম্প্রদায়ের মানুষ। কেজরিওয়াল শপথ নেওয়ার ঠিক আগেই বাস-অটোর জ্বালানির দাম বেড়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অটো চালকদের দাবি, হয় জ্বালানির দাম কমুক। না হলে ভাড়া বাড়ানো হোক। ব্যক্তিগত ও স্থানীয় সমস্যা নিয়েও হাজির হয়েছিলেন অনেকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব অভিযোগ নেওয়া হবে। শুধু পদক্ষেপ করার জন্য একটা ব্যবস্থা তৈরির সময় চাই। দরবারের জনতাকে তাঁর অনুরোধ, "আপনাদের সাত-দশ দিন পরে আবার আসতে হবে। ব্যবস্থা তৈরি হয়ে গেলেই সকলের আবেদন নেওয়া হবে।" কিন্তু আম আদমির এই বিপুল প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পারবেন অরবিন্দ? প্রথম দিনের দরবারে হাজির অটোচালক খাজান সিংহ কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, "কেন পারবেন না? যাঁর কাজ করার ইচ্ছা আছে, যিনি মানুষের সেবা করবেন বলে উঁচু পদের চাকরি ছেড়ে এসেছেন, তিনি না পারলে কে পারবেন?" সগর্বে দশ টাকার রসিদ বের করে দেখালেন, তিনিও আপ-এর সদস্য। দাবি করলেন, অরবিন্দকে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসানোর পিছনে তাঁরও অবদান আছে। কী রকম? খাজান সিংহের যুক্তি, "গত তিন-চার মাসে যাঁদেরই অটোতে বসিয়েছি, আম আদমি পার্টির কথা বলেছি। বুঝিয়েছি, এই লোকটা সৎ। অনেকে বলেছে, অভিজ্ঞতা নেই। আমি বলেছি, দুর্নীতি ছাড়া আর সব কিছুর অভিজ্ঞতা আছে।" খাজানের একটাই চিন্তা। কংগ্রেস-বিজেপি এই সরকারকে কাজ করতে দেবে তো? কংগ্রেস-বিজেপি কাজ করতে দেবে কি না, পরের প্রশ্ন। কিন্তু ছেলে যাতে কাজ করতে পারে, সব বাধা দূর করে আম আদমিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে, সে জন্য আজই কৌশাম্বির কাছে এক মন্দিরে যজ্ঞ করেছেন অরবিন্দের বাবা গোবিন্দরাম কেজরিওয়াল। বাবার বিশ্বাস, ছেলের ভগবানে আস্থা রয়েছে। তিনিই ছেলেকে রক্ষা করবেন। ছেলে প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তাঁর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তা বদলায়নি। ফলে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে অসুবিধা হবে না। অরবিন্দ যখন আম আদমিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনের দৌড় শুরু করছেন, তখন তাঁকে নিয়ে ঘুম ছুটেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কর্তাদের। কারণ কৌশাম্বি এলাকাটা দিল্লি লাগায়ো উত্তরপ্রদেশে। জনতার দরবারে হাজির হয়ে পুলিশ-কর্তারা অনুরোধ করেন, বাড়ির বাইরে যে ভাবে ভিড় জমছে, তা দেখে অন্তত মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা নিতে রাজি হোন। কিন্তু অরবিন্দ তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আসা দিল্লি পুলিশের কম্যান্ডোদেরও ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে মহা সমস্যায় পুলিশ-কর্তারা। আবাসনের বাইরে মেটাল ডিটেক্টর দরজা বসানো হয়েছে। কিন্তু কেজরিওয়াল যখন জনতার সঙ্গে দেখা করতে বাইরে আসছেন, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর নিরাপত্তার দরকার নেই। পুলিশ শুধু ভিড় আর ট্রাফিক সামলাক। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাই ট্রাফিক সামলাচ্ছে আর দিল্লি পুলিশের সাদা পোশাকের অফিসাররা আবাসনের ভিতরে মোতায়েন রয়েছেন। |
http://www.anandabazar.com/30desh3.html
দুর্নীতি রোখার শপথে শুরু অরবিন্দ জমানা অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি ২৮ ডিসেম্বর |
এ এক আশ্চর্য যাত্রা। সকালেও তিনি ছিলেন আম আদমি। বেলায় যাত্রা শুরু কৌশাম্বি মেট্রো স্টেশন থেকে, আমজনতাকে সঙ্গে নিয়ে। যাত্রা শেষ দুপুরে, রামলীলা ময়দানে। সেখানেই আম জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে শপথ নিলেন দিল্লির তরুণতম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। আম আদমি অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরিণত হলেন খাস আদমি-তে। শপথ নেওয়ার পরে রামলীলার বক্তৃতায় মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন তিনি। নিজের মন্ত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত জনতাকে দিয়েও শপথ করিয়ে নিলেন, "ঘুষ দেব না, নেবও না।" এবং এই শপথবাক্য পাঠের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাজও শুরু করে দিলেন দিল্লির নয়া মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনই রাজ্যের অর্থসচিব, বিদ্যুৎসচিব, দিল্লি জল বোর্ডের সিইও-সহ ৯ জন পদস্থ আমলাকে বদলি করে দিয়েছেন অরবিন্দ। ভোটের আগে তাঁর দলের প্রধান দুই প্রতিশ্রুতি ছিল অর্ধেক বিদ্যুৎ মাসুল এবং পরিবার-পিছু বিনামূল্যে দৈনিক ৭০০ লিটার জল। অর্থ, পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ, স্বরাষ্ট্র, ভিজিল্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলি নিজের হাতেই রেখেছেন নয়া মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, সোম-মঙ্গলবারের মধ্যেই জল ও বিদ্যুতের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন। সব মিলিয়ে অরবিন্দ জমানার প্রথম দিনের চিত্রনাট্যে তাই নাটক মজুত রইল যথেষ্ট। তার আগে আজ সকাল থেকে এক অন্য প্রস্তুতি দেখেছে দিল্লি। আম জনতার মুখ্যমন্ত্রীর শপথের প্রস্তুতি। মেট্রোয় চড়ে শপথ নিতে যাওয়ার কথা গত কালই জানিয়েছিলেন অরবিন্দ। সেই মতো আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ গিরনার আবাসন থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রামলীলার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সঙ্গে স্ত্রী-মেয়ে। লক্ষ্য কৌশাম্বি স্টেশন থেকে মেট্রো ধরা। |
* রামলীলা ময়দানে যাওয়ার আগে কৌশাম্বি মেট্রো স্টেশনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ঘিরে সমর্থকদের ভিড়। ছবি: পিটিআই |
আম আদমির মুখ্যমন্ত্রী মেট্রোয় চড়ে শপথ নিতে যাবেন, এ খবরের ধাক্কায় গোটা স্টেশন চত্বর তত ক্ষণে চলে গিয়েছে ভিড়ের দখলে। একের পর এক মেট্রো যাচ্ছে, কিন্তু তাতে কেউ চড়ছেই না! সকলেরই ইচ্ছে অরবিন্দের সঙ্গে মেট্রোয় উঠবেন। এ দিকে ভিড় বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে মুখ শুকোচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীদের। সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ অরবিন্দ ঢুকলেন স্টেশনে। মুহূর্তে ভিড় লাগামহীন। সকলেই এক বার ছুঁতে চান তাঁকে। চতুর্দিকে শঙ্খধ্বনি। তার মধ্যেই ঢুকে পড়ল মেট্রো। ফের এক প্রস্ত ধাক্কাধাক্কি। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় অরবিন্দের স্ত্রী ও মেয়েকে কোনও মতে তুলে দেওয়া হল। তিনি নিজে উঠলেন তৃতীয় কামরায়। সমর্থক, সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে তখন সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই! সকলেই চাইছেন অরবিন্দের কাছে যেতে। আনন্দবিহার, লক্ষ্মীনগর কিংবা ইন্দ্রপ্রস্থ সব স্টেশনেই প্রবল ভিড়ের চাপ আছড়ে পড়ছে ট্রেনের উপর। শেষ পর্যন্ত বারাখাম্বা স্টেশনে নামলেন সকলে। নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্যে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে কোনও রকমে স্টেশন থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে চড়ে বসলেন। গন্তব্য রামলীলা ময়দান। বেলা বারোটায় শুরু হল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। কেজরিওয়ালের পরে শপথ নিলেন মন্ত্রিসভার ছয় সদস্যও। অরবিন্দ আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেবেন না। নেবেন না সরকারি বাংলো বা লালবাতি লাগানো গাড়ি। কারণ দিনের শেষে তিনি আম আদমিই থাকতে চান। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এ ভাবে কত দিন আম আদমি হয়ে থাকতে পারবেন অরবিন্দ? ক'দিনই বা সফর করতে পারবেন মেট্রোয়? তাঁর দল বলছে, আজকের যাত্রা ছিল নেহাতই প্রতীকী। লালবাতি সর্বস্ব, ভিভিআইপি সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত দিল্লির তথাকথিত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বার্তা দেওয়াই ছিল অরবিন্দের লক্ষ্য। পরিবারতন্ত্র, পেশি বা অর্থবল না থেকেও লক্ষ্য স্থির রাখলে একজন সাধারণ ব্যক্তিও যে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছতে পারেন, সেই বার্তা দিতেই আজ তাঁর এই যাত্রা। তবে এ-ও ঠিক, অরবিন্দ আজকের যাত্রায় সচেতন ভাবে বার্তা দিতে চেয়েছেন দিল্লিবাসীকেও। তাই খুব ভেবেচিন্তে মেট্রোকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। রাজনীতিকদের বিশ্লেষণ, নেতা হিসেবে কেজরিওয়ালের অন্যতম সম্পদই হল অনাড়ম্বর, আম আদমি সুলভ ভাবমূর্তি। তিনি প্রশাসনের কাছে আজ থেকে দিল্লির খাস নাগরিক হিসেবে গণ্য হতে পারেন, কিন্তু নিজের ভোটব্যাঙ্কের কাছে সযত্নলালিত ভাবমূর্তি ভাঙতে নারাজ অরবিন্দ। হয়তো সেই কারণেই এ দিনের শপথ অনুষ্ঠানে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল দিল্লির অভিজাত সমাজকে। এক বছর আগে অণ্ণা হজারের সঙ্গে মতবিরোধ থেকে রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই দলের এই সাফল্যের কাহিনি দেশের ইতিহাসে বিরল। সম্ভবত বিশ্বেও। কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করে বিজেপির স্বপ্ন ভেঙে দিল্লির ক্ষমতায় এখন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ। যা দেখে সমাজমনস্তত্ত্ববিদেরা মনে করছেন, কংগ্রেস, বিজেপির মতো দলগুলির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তারই ফায়দা তুলেছে অরবিন্দের দল। আপ-এর এই সাফল্যের পটভূমি কিন্তু প্রস্তুত হয়েছে নাগরিক আন্দোলনের হাত ধরেই। বছর দুয়েক আগে, রাজধানীর মাটিতে জন লোকপাল বিল নিয়ে অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সময় থেকেই এই সাফল্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নির্ভয়া কাণ্ডে সরকার বিরোধী যে জনরোষ দিল্লির রাজপথে আছড়ে পড়েছিল, তারই প্রতিফলন এ বার ভোটের বাক্সে দেখা গিয়েছে বলে মানছেন সকলে। আপ-এর এই সাফল্যের পিছনে যে অণ্ণারও ভূমিকা রয়েছে, তা আজ প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক দল গড়া নিয়ে আপত্তি ছিল অণ্ণার। তিনি মনে করেন, রাজনীতি হল নোংরা জায়গা। কিন্তু আমি ঠিক করি, এই নোংরায় নেমেই তা সাফাই করব।" আজকের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হলেও কেজরিওয়াল এবং তাঁর মন্ত্রিসভাকে অবশ্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অণ্ণা। আজ শপথগ্রহণ হল। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও হলেন কেজরিওয়াল। কিন্তু কত দিন এই সরকার চালাতে পারবেন তিনি? দল জানে, সামনে বহু চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে যেমন রয়েছে জনতার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা, তেমনই বিজেপি-কংগ্রেসকে সামলে আগামী ২ জানুয়ারি আস্থা ভোটে উতরে যাওয়া। কেজরিওয়াল নিজেও সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কায়। তাঁর কথায়, "কত দিন সরকার থাকবে, জানি না। আস্থা ভোটেই সরকার পড়ে যেতে পারে।" তবে তাঁর কাছে স্বস্তির কারণ একটাই। তাঁকে সমর্থন করা নিয়ে দলে বিরোধ থাকলেও কংগ্রেস এখনই ভোট চায় না। তাই এ যাত্রায় সরকার বেঁচেও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাজ দেখানোর জন্য অন্তত ছ'মাস সময় পাবেন অরবিন্দরা। আর ওই সময়টুকু ভীষণই প্রয়োজন তাঁদের। তাই আজ এক দিকে যেমন কাজ শুরু করে দিয়েছেন অরবিন্দরা, তেমনই বার্তা দিয়েছেন দিল্লিবাসীকে পাশে পাওয়ার জন্য। শপথ নেওয়ার ঠিক পরের বক্তৃতায় অন্যান্য প্রতিশ্রুতির কথা সে ভাবে না তুললেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা তুলে অরবিন্দ বলেছেন, সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে এবং ঘুষ ঠেকাতে বিশেষ হেল্পলাইন চালু করা হবে। জনতাকে বলেছেন, "যদি কোনও ব্যক্তি ঘুষ চায়, তা হলে চুপচাপ তার কথা মেনে নিন। তার পর তার নাম-ঠিকানা আমাদের হেল্পলাইন নম্বরে জানান।" সৎ আমলাদেরও অভয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনে তাঁদের উপযুক্ত পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, "অনেক আমলা শুনছি ভয় পাচ্ছেন। নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। আমি মনে করি অধিকাংশ আমলাই সৎ। অথচ সৎ আমলারা এক কোণে পড়েছিলেন আর রাজত্ব করেছেন দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা। সেই ব্যবস্থা পরিবর্তনের সময় এসেছে।" বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেজরিওয়ালের অত্যন্ত কৌশলী এক দ্বিমুখী চাল। তিনি জানেন, জল-বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণ, দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া, জন লোকপাল বিল পাশ করানো এ সব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ অভিনন্দন জানালেও কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেস কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আপ নেতৃত্বের। তাই দায়িত্ব নিয়েই সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার সুযোগ ছাড়তে চাননি তিনি। আবার একই সঙ্গে জল-বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি যে সচেষ্ট, সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন প্রশাসনিক রদবদলে। তবে প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আম আদমিরই সাহায্য চেয়েছেন কেজরিওয়াল। দিল্লিবাসীর প্রতি তাঁর বার্তা, "আমার কাছে কোনও জাদু ছড়ি নেই যে, এক দিনে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু দিল্লির দেড় কোটি মানুষ যদি এক সঙ্গে কাজ করেন, তা হলে অবশ্যই সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।" তাঁর এই 'পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি'-র কৌশলকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতারা। অরবিন্দ নিজেও জানেন তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। এই সরকারের মেয়াদ যে দীর্ঘ হবে না, তা-ও বিলক্ষণ জানেন তিনি। তা ছাড়া লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তাতেও ভাল করার লক্ষ্য নিয়েছে দল। এই অবস্থায় সুষ্ঠু প্রশাসন ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে নিজেদের আন্তরিকতার ছবিটা দ্রুত তুলে ধরতে চান আপ নেতৃত্ব। এই অবস্থায় আজ মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই দিল্লিতে ভিআইপি সংস্কৃতি বন্ধ করার ফরমান জারি করেছেন অরবিন্দ। দু'দিন আগে দিল্লিতে গাড়ির জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। কেন, তা জানতে সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ ছাড়া দুর্নীতি দমনে একটি বিশেষ দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অরবিন্দ। যাদের কাজ হবে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসারদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা। যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট। প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি যে বদ্ধপরিকর, প্রথম দিন থেকেই সেই বার্তা দিতে শুরু করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু কত দিন? আদৌও কি কোনও পরিবর্তন হবে? প্রতিশ্রুতি পালন কি করতে পারবেন অরবিন্দ? সব উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে। |
http://www.anandabazar.com/archive/1131229/29desh1.html