ডিগবাজির ইতিকথা
হায়দার আকবর খান রনো
"... এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী গণআন্দোলন ১৯৯০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চলেছে। এর মধ্যে নানা ধরণের রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটেছে। অনেক দলের ভাঙ্গাগড়া হযেছে। আমাদের দলেরও ভাঙ্গন হয়েছে।
জাসদের ভাঙ্গন হয়েছে কয়েক দফায়। ১৯৮৩ সালেই মেজর জলিল জাসদ থেকে বেরিয়ে গেলেন। যিনি এক সময় বই লিখেছিলেন 'সমাজতন্ত্র মুক্তির পথ' তিনি 'ইসলামী সমাজ' গড়ার ঘোষণা দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরলেন। জাসদের নেপথ্য নায়ক সিরাজুল আলম খান ও আসম রব আন্দোলন বিরোধী ভূমিকা নিলেন। এক পর্যায়ে এরশাদের মেকি পার্লামেন্টে আসম রব বিরোধী দলীয় নেতার আসন অলংকৃত করে এরশাদ কর্তৃক পুরুষ্কৃত ও জাসদের জঙ্গি কর্মীদের দ্বারা নিন্দিত হলেন। পরবর্তী আরেক পর্যায়ে শাহজাহান সিরাজ ও হাসানুল হক ইনুর মধ্যে ভাঙ্গন হল। শাহজাহান সিরাজ সংবিধানের ৭ম সংশোধনীতে ভোট দিলেন, যা এরশাদের রাজত্বকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিল।
বাসদেরও ভাঙন হল। বাসদের ছোট একাংশ আলাদা হয়ে আলাদা দল করল। খালেকুজ্জামান ও আফম মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে দুই বাসদ। মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দলেও ভাঙন হয়েছিল। আওয়ামী লীগেও ভাঙন ঘটে। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল 'বাকশাল' নামে একটি দল। এই বাকশাল আর ১৯৭৫-এর বাকশাল অবশ্য এক নয়। মিজান আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হল। কারণ মিজানুর রহমান চৌধুরী নিজেই এরশাদের দলে ও সরকারে যোগ দিলেন। বিভিন্ন দল থেকে অনেক নামকরা নেতা ডিগবাজি খেলেন। যারা প্রথম দিকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন, তাদের অনেকেই মন্ত্রিত্বের টোপ গিলে রাতারাতি এরশাদের দলে চলে গেলেন। কাজী জাফর তাদের অন্যতম। তিনি শেষ পর্যায়ে এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন।
এরশাদ সামরিক সরকার যাদেরকে দূর্নীতির অভিযোগে সামরিক আদালতে বিচার করে জেলে পুরেছিল, তাদের কেউ কেউ এরশাদের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন। যেমন মওদুদ আহমেদ। এরশাদের নয় বছরের শাসনামল দেখিয়ে দিল আমাদের অধিকাংশ বুর্জোয়া নেতাদের সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতা নাই, নীতি আদর্শ চরিত্র বলতে কিছুই নাই। এ সব ঘটনা চোখের সামনেই দেখেছি।
একবার কাপ্তেন হালিম চৌধুরীর ধানমন্ডিস্থ বাসায় ১৫ ও ৭ দলের লিঁয়াজো কমিটির সভা হল। দুপুরে তিনি ভালো খাওযা দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হল। কাপ্তেন হালিম চৌধুরী স্বয়ং দায়িত্ব নিলেন মানিকগঞ্জের কর্মসূচি সফল করার। আশ্চর্যের বিষয় সেদিনই সন্ধ্যা বেলায় টিভির খবরে জানলাম তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। কাজী জাফর আহমদ আমাকে বলেছিলেন, 'হালিম চৌধুরীকে অস্কার প্রাইজ দেয়া উচিত। দেখলে কেমন চমৎকার অভিনয় করলেন।' ঠিক তার কয়েকদিন পর দেখলাম কাজী জাফরও মন্ত্রী হয়েছেন। এরপর একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে মওদুদ আহমদের সঙ্গে দেখা। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বললেন, 'তোমরা কাজী জাফরের সঙ্গে এতকাল ছিলে কী করে, এত সহজে মন্ত্রীত্বের টোপ গিলল?' আশ্চর্য ! তার মাত্র দু'দিন পর দেখি মওদুদ সাহেবও মন্ত্রী হয়েছেন॥"
- হায়দার আকবর খান রনো / শতাব্দী পেরিয়ে ॥ [ তরফদার প্রকাশনী - অক্টোবর, ২০১২ । পৃ: ৩৮৬-৩৮৭ ]
__._,_.___
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment