THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA INDIA AGAINST ITS OWN INDIGENOUS PEOPLES

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Sunday, July 28, 2013

পায়ে লিখেই শিক্ষিকা হতে চান সুভদ্রা

পায়ে লিখেই শিক্ষিকা হতে চান সুভদ্রা

পায়ে লিখেই শিক্ষিকা হতে চান সুভদ্রা
স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত। রাকিব ইসলামের তোলা ছবি
মহম্মদ মহসিন

উলুবেড়িয়া: চোখের জল বাঁধ মানতা না মায়ের৷ মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পর থেকেই একরত্তির জন্য নিত্য চোখের জল ফেলতেন মা৷ এ মেয়ের যে হাত দুটোই নেই!

মেয়ে অবশ্য এত সব পরোয়া করত না৷ বরং মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই মন শক্ত করত৷

মা যত চোখের জল ফেলতেন, দাঁতে দাঁত চেপে তত জেদ চাপত মেয়ের মনে-- বড় হতেই হবে৷ আর পাঁচ জন সহপাঠীর সঙ্গে বিস্তর ফারাক কমিয়ে আনতে পায়ে পেন তুলে নিয়েছিল সুভদ্রা৷ ধাপে ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিকের গণ্ডি পার৷ হাত নেই তো কী হয়েছে! হার না মানা ইচ্ছাশক্তির পুঁজিটা তো ছিল৷ সেটা সম্বল করেই চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে চলা৷ উচ্চমাধ্যমিকেও সফল হয়ে আজ কলেজের দোরে হাওড়া উলুবেড়িয়ার শ্রীরামপুর গ্রামের সুভদ্রা ভৌমিক৷ পা দিয়েই ভর্তির ফর্ম ফিল-আপ৷ শুক্রবার বাগনান কলেজের কলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯ বছরের সুভদ্রা বলছেন, 'আরও সিরিয়াস হয়ে পড়তে হবে৷ শিক্ষিকা হতে চাই বড় হয়ে৷'

মা ভবীরানি ভৌমিকের চোখ আজ ভেজা৷ তবে মেয়ের চিন্তায় নয়৷ এ অশ্রু আনন্দের৷ মা চেয়েছিলেন, আজন্ম প্রতিবন্ধকতা যেন মেয়ের জীবনে বাঁধা হয়ে না-দাঁড়ায়৷ সে জন্যই মেয়েকে সব শিখিয়েছেন, শুধু হাতের বদলে পা ব্যবহার করে৷ পেন ধরা থেকে শুরু করে কুয়ো থেকে বালতিতে জল তোলা, গেরস্থালির কাজকর্ম কিংবা চামচে করে খাওয়া-- সবই৷ প্রাইমারি স্কুলেও মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে যে বয়সে স্কুলে যেতে শুরু করে, তখনই৷ তার পর বাগনানের ভূঞেড়া বিএনএস হাইস্কুলে৷ সেখান থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক৷ সুভদ্রার বাবা প্রবোধবাবু বলছিলেন, 'ছোট থেকেই মেয়ের মনোবল দেখে অবাক হয়ে যেতাম৷ হাত নেই বলে সহপাঠীদের ব্যাঙ্গও সহ্য করতে হত ছোট্ট মেয়েটাকে৷ কিন্ত্ত ওর জেদ থেকেই যেন আমরাও বল পেয়ে গিয়েছিলাম বুকে৷'

বাবার সে বুক আজ আরও চওড়া৷ আটপৌরে বিষণ্ণ মুখটা আজ গাঁয়ের অন্যদের চেয়েও বেশি ঝলমলে৷ ক'জনই বা এতটা পারে? কলেজের মুখ তো অনেকেই দেখে না দু' হাত থাকার পরও৷ আর সুভদ্রার তো হাতেখড়ি হয়েছিল ডান পায়ে৷ সেখান থেকে বিএ ফার্স্ট ইয়ারের সফরটা যে নেহাত্‍ সহজ ছিল না, তা বলতে গিয়ে গর্ব ঝরে পড়ছে পড়শিদের গলায়৷ গর্বিত বাগনান কলেজের শিক্ষক-শিক্ষকারাও৷ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সোম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'যাবতীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে৷ এমনকী, ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আর্জি জানাব যাতে পরীক্ষার সময়ে হোম সেন্টার পায় সুভদ্রা৷'

এতটা পথ হাঁটতে যে অকুণ্ঠ সমর্থন আর সাহায্য মিলেছে বেলুড় মঠ আর কাটালিয়ার আশাভবন সেন্টার নামের এক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের, সে কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে ওঠে সুভদ্রার৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় টিউটোরিয়াল হোমের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদও৷ সুভদ্রার কলেজে পড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে আগ্রহী তিনি৷ সুভদ্রার চোয়াল এখন আরও শক্ত৷ মায়ের চোখের জল মুছতে পেরেছে৷ এত শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রত্যাশা এবার পূরণ করতে হবে যে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...