THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA INDIA AGAINST ITS OWN INDIGENOUS PEOPLES

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Sunday, August 24, 2014

মোতনে এ্যকতা নাই বাঙালির এখন,সঙ্ঘ পরিবার রুখিবে মনস্যান্টো,যেমন বিজিএম ঠ্যাকাইছে লেবার রিফর্ম,বোঝো ঠ্যালা! সঙ্ঘ বিরোধ মারাইতাচে উদিকে আম্বানি বাবুদের খাস চাকর চাকরানিরা বড় বড় কুর্সিতে বহাল তবিয়তে মিড ডি মিল ফাকাইত্যাছেন,প্যাটে সইলেই হয় মনস্যান্টোর অতিথি হইয়া এক্কেবারে চিত্তির রিসর্টে রিসর্টে হানীমুন সম্বত্সর হানিমুন বারো মাস পৌষমাস তাহারা ঠ্যাকাইবেন মনস্যান্টো,কেলোর কীর্তি দ্যাখচো পলাশ বিশ্বাস Palash Biswas

মোতনে এ্যকতা নাই বাঙালির এখন,সঙ্ঘ পরিবার রুখিবে মনস্যান্টো,যেমন বিজিএম ঠ্যাকাইছে লেবার রিফর্ম,বোঝো ঠ্যালা!


সঙ্ঘ বিরোধ মারাইতাচে উদিকে আম্বানি বাবুদের খাস চাকর চাকরানিরা বড় বড় কুর্সিতে বহাল তবিয়তে মিড ডি মিল ফাকাইত্যাছেন,প্যাটে সইলেই হয়

মনস্যান্টোর অতিথি হইয়া এক্কেবারে চিত্তির রিসর্টে রিসর্টে হানীমুন সম্বত্সর


হানিমুন বারো মাস পৌষমাস

তাহারা ঠ্যাকাইবেন মনস্যান্টো,কেলোর কীর্তি দ্যাখচো



পলাশ বিশ্বাস

Palash Biswas

মনস্যান্টোর বিরুদ্ধে

বিক্ষোভ ৪৩৬শহরে

সংবাদসংস্থা

লস এঞ্জেলস, ২৬শে মে- বিশ্বের ৫২টি দেশের ৪৩৬শহরে শনিবার বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনস্যান্টোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত হলো। জিন-পরিবর্তিত খাদ্য ও বীজের বিরুদ্ধে এবং মনস্যান্টোর বিরুদ্ধে অসততার অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহু দেশে হাজার হাজার মানুষ 'মার্চ এগেইনস্ট মনস্যান্টো' বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, মনস্যান্টোর সুবিধা করে দেওয়ার জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে মনস্যান্টোর বিরুদ্ধে উৎকোচের অভিযোগ উঠেছে। বীজের ক্ষেত্রে মনস্যান্টোর একচেটিয়া অধিকার কৃষির সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। দাবি ওঠে, জিন-পরিবর্তিত খাদ্য ও বীজ বিক্রির সময়ে তা স্পষ্টভাবে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।


মনস্যান্টো সংস্থা বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের সরবরাহ করা বীজ কৃষির উন্নতিই করছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঠিক নয়।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=41217#sthash.qN9P9EHR.dpuf

সঙ্ঘ পরিবার রুখিবে মনস্যান্টো,যেমন বিজিএম ঠ্যাকাইছে লেবার রিফর্ম,বোঝো ঠ্যালা!


নাযক কমিটির সিফারিশ অনুযায়ী ব্যান্ক ন্যাশন্যালাইজেশান পালটে দিয়ে টাটা বিড়লা আম্বানী ও বিদেশিমাল্টিন্যাশন্যাল কম্পানীর হাতে জনগণের জমা পুঁজি সম্পত্তির অধিকার সঁপে দেওয়ার

প্রাইভেট ব্যান্কিঙ্গের সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ


ব্যান্কিংং রেগুলেশান আইন পাল্টে প্রাইভেড শেয়ারহোল্ডারদের অসীমিত ভোটাধিকার দিয়ে আগে থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্কের বারোটা বাজিয়ে প্রাইভেট ডাইরেক্টার বসিয়ে ব্যাড লোন ও করপোরেট লোন রাইট অফ করে


প্রাইভেটাইজেশান চুড়ান্ত

বাকী রইল আরবিআঈ আইন

ভারতীয় মজদূর সঙঘ সপচেয়ে সোচ্চার ব্যান্ক প্রাইভেটাইজেশানের বিরুদ্ধে


মাল্টি ব্রান্ড রিটেল এফডিআই পাশ করেও মনমোহন সিং ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেননি হঠাত মমতার সমর্থন হারিয়ে

বিজেপি ও বাম অনাস্থা প্রস্তাব সংসদে ধুলিসাত করে ভারত মার্কিন পরমাণু চুক্তি লাগু করতে পারেন নি প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বব্যান্কের পেনশান পানেওয়ালে মনমোহন


পদ্ম প্রলয়ে দ্যাশ এখন ডিজিটাল,বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব নিরাধার

নিরাধার নাগরিক ও মানবাধিকার

বেনিয়া পার্টি বিজেপি খুচরো বাজারে বিদেশি কোম্পানির বসন্ত বাহার বন্দোবস্ত করেছেন বেশ মাল্টি ব্রান্ডে এফডিআই ছাডা়ই



সেই সিঙুর নন্দী দিদি এখন সারদা কেলেন্কারিতে ল্যাজে গোবর

রাজ্যসভায় দিদির দল মোদীর ত্রাতা

প্যাকেজ ত বেশি দুরে নয়ই



পিপিপি গুজারতমডেলই বাংলার রাস্তা এখন

প্রতিরক্ষা থেকে খুচরো কারবারে এফডিআই নিরন্কুশ

বীমাতেও এফডিআই

সংবিধানে আগুন,সব আইন পাল্টে ঢালাও করপোরেট প্রমোটার রাজত্ব



শ্রম আইনের জন্য রাজস্তানে প্রোটো

পিপিপি প্রমোটাররাজের খাতিরে প্রোটো দিদির মোদী বিরোধী বঙ্গে

বঙ্গে এখন রঙ্গ বড় ন্যাকা ন্যাকা

সখী সম্প্রদায়ের হামেশা কেত্তনে জনগণ বোকা


সেই অনাস্থা প্রস্তাবের পার্টি বিজেপির সরকার এফডিআই রাজত্ব,সেজ মহাসেজ স্মার্ট সিটির বুলেটে গণসংহারের রাজসূয় যজ্ঞ শুরু করেচে,বাংলায়এখন গাজনের সঙ হল ক্ষমতার রাজনীতিতে শামিল সমস্ত বিদ্বতজন,সুশীল সমাজ,যাদের পাওনা গন্ডার হিসেব সুদীপ্ত সমঝে দিচ্ছেন ভালোই


জনতা গিলচে ভালো কেলেন্কারি ভালো রগড় আরো ভালো পিপিপি তার চেয়েও ভালো আরো ভালো উন্নয়ন সিন্ডিকেট,উন্নয়ন পুজো,উন্নয়ন উত্সব উন্নয়ন লোক সংস্কৃতি সাহিত্যবিলাস সব অভিলাস পূর্ণ হইত্যাচে বাঙালির  পাতে ঈলিশ হইলেই দুর্নীতি মুখে রোচে খূব


যারা মরেচে তাঁরা বেঁছেছে কবে বলো যা গ্যাছে তা গ্যাছে গল্পের গাই গরু বকরি গাছে তোলো তোলাবাজ বোঝো না কত আত্মীয় সে মরে কবে করে দেবে ঠান্ডা উঁছেয়ে তোলো ঝান্ডা যদি পিঠে সয় তবে নয় হবে বিপ্লব



মুদিখানা দিল্লিতে যেই না চালূু হোল ,যাবতীয় আলু আলুবাঝ গৌরিক হোতি লাগত্যাছে বলো হরিবোল

লাঠি সড়কি নেই নেই ঢাল তরোওয়াল নিয়ে আয় ঢোল

বাজা নেতাই বাজা রে খোল বোলো হরিবোল



মতুয়া মরেছে বেঁচে আচে মৈথিলি বামুন বেঁচে বর্তে আছেন মন্ত্রী সাংসদ আর শকুন মাথা ভর্তি উকুন

পরির চিন্তা পরে হইব,নিজের ঘাড়ে মাতা কটা,গুইনা দ্যাকুন



বাংলায় বন্ডেড লেবার ছিল,বাল্যবিধবা নাই,দেহ ব্যাবসা রমরমা নারী পাচার সবচেয়ে বড় ব্যাওসা

মাদকে আসক্ত ঘরের বউ সিরিযালে আমেরিকা

সেই আমেরিকা বড়ই আপন মনস্যানটো আরও আপন



ক্ষ্যাতে বোম মাইরাও ফসল নাই,ফসল হয় ত বিষ খাওনের ট্যাকায় বিষ খাওনের ট্যাকাও নাই

টুনির মায়ে মিসকলের জবাব দেবে ক্যানে তবু ত বারান্দার রোদ্দুর তেতে আছে


লগ্নিও সিঙাপুর হইয়া

আওন লাগতাছে,লন্ডন না সিঙ্গাপুর আগে ঠিক কইরা কওন লাগে কি ক্যামন কইলকাত্তা চাই যা এখন বাঙালি কম রাজস্তানী বেশি বাঙালি শুধু রিক্সা হাতে টানেনা,বাকী কুক্করের দশাও বেটার ঘরে বউ টেঁকে না সন্তান লাথি মারে পেছনে


পাড়া পড়শি হামেশাই শত্তুর সমাজ ত নয় মোত্তসব মায়ের ভোগে লাগে জ্যান্ত কাটা মুন্ডু,ঘাস চিবিযেমরবে না হালায ত মরবে কোন হালায়

উন্নয়নে তাই নরবলি বেশি প্রয়োজন,শহীদ হলেই জমি দেব না স্মার্ট সিটি হবে


হবে যাবতীয় হাব হবে প্রীতি ভাব হবে ফেসবুক প্রোপাইল হবে ঝ্যাচাক কোটিঙ হবে কোচিঙও হবে পাড়ায় পাড়ায়আইটি হবে চাকরি সে গুড়ে বালি যার হবে তার হবে বাকি যারা তাঁদের হবে নাকর ব্যাাটা যত পারিশ প্যারিশ হ চাউমিন

হ চিলি চেকেন হ হ ফিশ ফ্রাই মস্তান হ হ লিডার টাকরি নৈব নৈব চ

চাষ বাস উঠে গ্যাছে সে ঠ্যালা চুকে গ্যাছে নটে গাছটি মুড়াল পাড়ায় পাঢ়ায শপিঙ মল হল হল পাড়ারই প্রোমোটার


সেই প্রোমোটার কল্যাণে রাজকার্য অনিবার্য

গুপিও নেই বাঘাও নেই ভুতের তিন বর নেই নেই পথের পাঁচালি পুজো মন্ডপ হবে থিম হবে অসুর নিধন হবে


কিন্তু বাবাধন মাইয়া মাগো চাকরি হইবো না

বন্ধ হবে কল কারখানা ছারখার হবে আরও জোর হবে লগনি বাতাস

সুনামি হবে গৌরিক প্রলয় বাবাধন সোনার মাইয়া জান

চাকরি হইবো না চাষও হইবো না



জীবনবাবূ শ্যাষও হইবো না হকার হব ক্যাডার হব লিডার হব কুক্কুরের মত বাঁচবে তবু বাঙালি

চুক্তি চাষের শুরু বাংলায়

এপবার মনস্যান্টাও হইবে



খোকাবাবূ সিঙাপুর প্যারিশ আমেরিকা ঠ্যাঙ্গাইয়া ফিলিম করিবো সাংসদী করিবো ফুটবাল পুজো সহ দলে দলে সাংসদ কাগজও করিবো টিভিও করিবো সবজান্তা প্যানেলও করিবো অথচ মনস্যান্টো হইবো না  হইবোই হইবো


সঙ্ঘ কহিতাছে হইব না তো অবশ্যই হইব

পরমাণু চুক্তি ক্যালাইছে স্বদেশি বন্দে মাতরম জাত পাত ধরম করম সব করতাছে,চুক্তি চাষও হইতাছে



দাঙ্গাও হইতাছে তারও চাইতে বেশি অটোমেশান ছাঁটাই আবার কলা রোবোটও আইতাচে থ্রি জি হইল ফোর জি হইছে ফাইব জি হইতাছে কালি এক্স এক্স করো কোন দুকে পাগলা ছাগল


বাঙালি একুনে মর্তবান কলা পুজোতে বেশ পোলা ফোলা আসলে রেআসের ঘোড়া ছোলা

সেই ঘোড়া মুদিখানায় দলে দলে যোগদান করতাছে



বাংলাদ্যাশের সহিত চ্যাদরামি আর নানানা

দিল্লীর লাড্ডু যে হালায় খাইছে তারে ঠ্যাকায় কোন হালায়- আবার কয়মনস্যানটো হইবো না


আরবআই আইন পালটাইতাছে,ব্যান্ক বাবুরা এতই টাকা গোনেন পেত্তল সনা কইরা টাকা ঘরে তোলেন আর তাও বোঝেন না খোথাকার বাঁশ কোথাযকার পিছনে লাগতাছে পুজোর তাম্বু ছাডা়ও বাম্বু হয় বাছাধন


মোতনে এ্যকতা নাই বাঙালির এখন

সঙ্ঘ বিরোধ মারাইতাচে উদিকে আম্বানি বাবুদের খাস চাকর চাকরানিরা বড় বড় কুর্সিতে বহাল তবিয়তে মিড ডি মিল ফাকাইত্যাছেন,প্যাটে সইলেই হয়

মনস্যান্টোর অতিথি হইয়া এক্কেবারে চিত্তির রিসর্টে রিসর্টে হানীমুন সম্বত্সর


হানিমুন বারো মাস পৌষমাস

তাহারা ঠ্যাকাইবেন মনস্যান্টো,কেলোর কীর্তি দ্যাখচো


সাধারণের জন্যই লিখতে চেয়েছিলেন

সিদ্ধার্থ গুপ্ত

২৬ জুলাই, ২০১৪, ০০:০১:৫০

e e e print

প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের অনেকেই লেখক-প্রাবন্ধিক হিসেবেও অগ্রগণ্য। বিজ্ঞান এবং সাহিত্য, দুটিই তাঁদের অনায়াস সঞ্চরণের ঊর্বর ক্ষেত্র। বিশ্বের প্রেক্ষিতে কার্ল সাগান,  স্টিফেন হকিং,  জর্জ গ্যামো থেকে আলবার্ট আইনস্টাইন, এরউইন স্রোডিংগার থেকে রিচার্ড ডকিন্স, জেমস ওয়াটসন, র্যাচেল কারসন— কত নাম। বাংলায় জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, রামেন্দ্রসুন্দর, গোপাল ভট্টাচার্য— উদাহরণে ঘাটতি নেই। পদার্থবিজ্ঞানী (নির্দিষ্ট করে বললে কণাবিজ্ঞানী) অভীকান্তি দত্ত মজুমদারের নির্বাচিত রচনা সংকলন পড়তে পড়তে বারবারই মনে হচ্ছিল অকালমৃত অভীকান্তি (১৯৬৮-২০১৩) এই বর্ণময় তালিকায় এক উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিজ্ঞানীর প্রত্যাশিত ক্ষুরধার যুক্তি ও বিশ্লেষণ, সংস্কারের মোহমুক্ত আলোকে সব কিছুকে যাচাই করা, বুদ্ধির কষ্টিপাথরে ঘষে ঘষে পরখ করে নেওয়া এবং একমাত্র সেই মানদণ্ডেই গ্রহণ অথবা বর্জন  অভীকান্তির রচনার প্রধান গুরুত্ব। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাষার লালিত্য, স্থানবিশেষে তীব্র শ্লেষ, কঠিন তথ্য ও পরিসংখ্যানকে সাধারণ পাঠকের জন্য পরিবেশনের আপাতদুর্লভ মুন্সিয়ানা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তাঁর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। যুক্ত ছিলেন 'সার্ন'-এ ঈশ্বরকণা ও অধঃপারমাণবিক কণা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে। তাঁর শেষ কর্মক্ষেত্র ছিল 'সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স'। দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয় গত ডিসেম্বরে।

নির্বাচিত রচনা সংকলন, অভী দত্ত মজুমদার। শৈলী প্রকাশনী, ২০০.০০

আলোচ্য সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানীর প্রয়াণের  পর। এর অনেকগুলি প্রবন্ধই আগে পত্রপত্রিকায় বা পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। মোট ১৯টির মধ্যে ৪টি প্রবন্ধ অপ্রকাশিত। প্রবন্ধগুলি মূলত তিনটি শীর্ষকে বিভক্ত। প্রথম পর্বের শীর্ষক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের রাজনীতি। প্রথম দু'টি প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্ম বিষয়ে প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত নানা তত্ত্বের ক্রমবিবর্তন। সহজ ভাষায় দুরূহ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা পাঠকদের নজর কাড়বে। দ্বিতীয় প্রবন্ধটি চমকপ্রদ: 'বিজ্ঞানের অভিধানে কিন্তু কোনও ঈশ্বরকণা নেই'। সার্ন-এ সরাসরি 'গড পার্টিকল' বা 'গড ড্যাম পার্টিকল' বিষয়ে গবেষণারত এই কণা-বিজ্ঞানী অধঃপারমাণবিক কণার আচরণ নিয়ে চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছেন। অন্য প্রবন্ধগুলির অধিকাংশ ২০০৬-'১১ পর্বে, এই রাজ্যে দারুণ রাজনৈতিক ও সামাজিক উপপ্লবের দিনে লেখা। এখানে নিছক পদার্থবিজ্ঞানীর পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসেছে এক সমাজবিজ্ঞানীর পরিচয়। উন্নয়ন ও উচ্ছেদ, শিল্পায়ন এবং অনাহার, নির্মাণের ঢক্কানিনাদ ও বিস্থাপনের তীব্র যন্ত্রণার চরম ঘাত-প্রতিঘাত বিজ্ঞানীর কলমে জন্ম দিয়েছে 'কেমিক্যাল হাব: একটি নিঃশব্দ ঘাতক', 'হরিপুর, কোথাও পরমাণু বিদ্যুৎ নয়', 'সেই দিনের ফুড বাস্কেট আজকের ক্যান্সার বেল্ট' প্রভৃতি প্রবন্ধের। এগুলি এর আগেই পুস্তিকা হিসেবে প্রচারিত হয় বহু গণসংগঠন মারফত। অভীকান্তির নেতৃত্বে গড়া একচেটিয়া আগ্রাসন-বিরোধী মঞ্চ তার মধ্যে প্রধান।

ভারতীয় কৃষি, পুরনো কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তে বিদেশি প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক, কৃষিক্ষেত্রে বহুজাতিক-অধিজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থার ক্রমবর্ধমান প্রচ্ছায়া, কৃষকদের আত্মহত্যার মিছিল— এই সব অভীকান্তির প্রবন্ধে এসেছে বার বার। সম্পাদকরাই স্বীকার করেছেন, কিছু কথা নানা ক্ষেত্রে পুনরুল্লিখিত  হয়েছে। অনেক সময়ই তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে নানা সামাজিক আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠা বিজ্ঞানীকে কলম ধরতে হয়েছে। বারে বারে সজোরে একই কথা বলতে হয়েছে। ফলে সে সব লেখা রচনাসংগ্রহের পাঠকের কাছে পৌনঃপুনিকতা দোষে দুষ্ট মনে হতে পারে। আসলে অভী সময়ের চাহিদা মিটিয়েছেন। ফেলে আসা উত্তাল সময়ের দিকে ফিরে তাকালে মনে হয় অভী-ই ঠিক। দুর্ভাগ্য, তিনি প্রবন্ধগুলি সংশোধনের কোনও সুযোগ পাননি। রচনা নির্বাচনের ভারও বর্তেছে অনুরাগীদের উপর। মনে হতেই পারে প্রবন্ধগুলি যত না বৈজ্ঞানিক, তার চেয়ে বেশি সামাজিক প্রচারধর্মী। আমি একমত। অভী সামাজিক প্রবন্ধই লিখতে চেয়েছিলেন সাধারণের জন্য।

বহু বিষয়ে অভী প্রতিবাদী। খুচরো ব্যবসায় বৃহৎ বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশকে অভী দেখেছেন দেশজ অর্থনীতির উপর একচেটিয়া সার্বিক দখলদারি হিসেবে। তাঁর কাছে এ হল নয়া উপনিবেশের সূচনা। কৃষিতে চুক্তিচাষ, বংশাণু পরিবর্তিত বা জি এম ফসলের প্রসার এবং কর্পোরেট রাজকে অভী তুলনা করেছেন নীল চাষের যুগের সঙ্গে। শপিং মল, উড়ালপুল, মাল্টিপ্লেক্স শোভিত উন্নয়নের অন্তর্বস্তু  আসলে যে নূতন রূপে বহুজাতিক আগ্রাসন— এ বিষয়ে অভী নিশ্চিত। দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব প্রকৃতপক্ষে ক্ষুধার্ত ভারতবাসীর জঠরাগ্নি উপশমের জন্য নয় মনস্যান্টো, আর্চার ড্যানিয়েল মিডল্যান্ড আর ওয়ালমার্ট-এর মুনাফার স্বার্থে, তা অভী তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিমায় তুলে ধরেছেন। আধার কার্ড প্রসঙ্গে অভীর প্রবন্ধ 'কাদম্বরী আধার বুকে লটকাইয়া প্রমাণ করিবেন তিনি ভারতীয়'— যথেষ্ট চিন্তার খোরাক জোগায়। বারবারই মনে হয় অভী সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরোধী। 'মনোকালচার'-এর বিপ্রতীপে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, সার্বভৌমত্বের অধিকার এবং বিকশিত গণতন্ত্রের অধিকারের সমর্থক ও প্রবক্তা। বিজ্ঞানীর অভ্রংলিহ  গজদন্তমিনার  থেকে নেমে এসে দুঃখী দরিদ্র মানুষের সমাজে তাঁর পদচারণা।

অভীকান্তির প্রতিটি প্রবন্ধই বজ্রগর্ভ। অশেষ চিন্তা, আলোচনা এবং সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। রচনাকালের উল্লেখ থাকলে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত বুঝতে পাঠকদের সুবিধে হত। কিছু কিছু মুদ্রণপ্রমাদ এবং বানানের তারতম্য চোখে লাগে।

http://www.anandabazar.com/supplementary/pustokporichoi/%E0%A6%B8-%E0%A6%A7-%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A6%87-%E0%A6%B2-%E0%A6%96%E0%A6%A4-%E0%A6%9A-%E0%A7%9F-%E0%A6%9B-%E0%A6%B2-%E0%A6%A8-1.53826


13 নভেম্বর 2013, 17:39 1


Search Results

May 18 : US supreme court rules for Monsanto in Indiana farmer's GM seeds case

Aug 23: Who is guiding Modi's economic thinking an

Delhi – Remembering Bhopal and Resisting Onslaught of Corporations, Dec 3

NAPM statement on the complete annihilation of small farmers in World Agricultural Congress at Hyderabad

Sanhati at Left Forum 2013 – a brief report

New York City – Sanhati at Left Forum, June 9

Delhi – Press note on Kisan Khet Mazdoor Mahapanchayat

Sep 4: Profiting from the food crisis

The Booker Prize, Aravind Adiga, and the 'White Tiger': Implications for Politics and Culture

Letter to ICAR in protest against the reported offer of Indian gene banks to MNC partners

May 10: Reaping gold through cotton, and newsprint

Coalition for a GM-Free India demands review and halt to the promotion of Bt cotton

Left Forum 2012 – Sanhati Panel, Mar 18

Biotechnology Regulatory Authority of India Act: The New Weapon of the Second Green Revolution

Farmer Suicides in India: A Policy-induced Disaster of Epic Proportions

Sowing Confusion: The Seductive Charm of Fighting Corruption

NAPM – National Transformation and Future Strategy of Movements

Kolkata Scientists oppose proposed field trial of GM rice at RRS, Chinsurah

From Field to Fork: Obama's agri recipe for India

The Second Green Revolution: A Blue-Print to Control India's Agriculture – Indo-US Treaty, New Seed Act

Getting to know the Second Green 'Revolutionary' Ruler-Corporates!

How Capital Turns People into 'Consuming' Vampires: An Essay on Daybreakers

U.S. Agribusiness in Indian Agriculture: KIA, BRAI, and the "Second Green Revolution"

The NBRAI, the Civil Nuclear Liability Bill, and the Foreign Education Institutions Bill: A Portmanteau Critique of Recent Legislation

Foreign universities bill is a bill to sell education out by degrees

Dodgy development: DfID in India

GM crops: A Few Questions to the Genetic Engineering Approval Committee and the Hon'ble Supreme Court

Press Statement of the Citizens' Expert Committee on BT Brinjal

Ending Africa's Hunger

Death of small businesses in Bengal and India: a comprehensive study of retail monopoly

A man-made famine – India and the world in the Great Hunger of 2008

Agro-Science Fair in Bolagarh, West Bengal

SANHATI NEWSLETTER – October 2007

The Chemical Hub – what are the socio-economic costs and why should we bear them?

Development – a note for discussion written for the Kashipur Solidarity Group

Era of the bourgeois romantic: the biotech industry & those that buy into it

Genetically Modified crops – testing and plans in West Bengal,

India Is Colonising Itself – Interview with Arundhati Roy, March 26, 2007

- See more at: http://sanhati.com/?s=monsanto#sthash.OLA3dStN.dpuf

নরেন্দ্র মোদী: আমেরিকার জন্য ভারতীয় ধাঁধা

নরেন্দ্র মোদী: আমেরিকার জন্য ভারতীয় ধাঁধা

@VOR

ভারতে নির্বাচনী প্রচারের জোরদার সময়ে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা এবারে বিরোধী পক্ষ ভারতীয় জনতা দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা খুঁজছে. তাঁকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল "ক্যাপিটাল হিলসে ভারত দিবসে" আমেরিকার কংগ্রেস সদস্যদের সামনে বক্তৃতা দিতে. তবে এটাও ঠিক যে, ব্যক্তিগত ভাবে নয়, স্রেফ ভিডিও যোগাযোগের মাধ্যমে.

এক সময়ে মোদীকে আমেরিকায় প্রবেশের ভিসা দিতে অস্বীকার করা হয়েছিল ২০০২ সালে তাঁর রাজ্য গুজরাটে মুসলমানদের উপরে দাঙ্গা করার সময়ে যোগাযোগের সন্দেহে. আজ কিন্তু ওবামা প্রশাসন ও তাঁর বিরোধী রিপাব্লিকান দলের লোকরা বুঝতে দিচ্ছেন যে, সমস্যা আসলে অনুপস্থিত, আর যদি মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন, তবুও দুই দেশের সম্পর্ক এখনকার মতই ঘনিষ্ঠ থাকবে. কিন্তু সরকারি মুখপাত্ররা যাই বলুন না কেন, ভারতের প্রশাসনে বিজেপি দলের আবির্ভাব হলে, ওয়াশিংটনের "ভারতীয় রাজনীতিতে" নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হতেই পারে, এই রকম মনে করে আমাদের সমীক্ষক সের্গেই তোমিন বলেছেন:

"বিরোধী দল জনতা পার্টির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী এখন মোটেও আমেরিকার নিষিদ্ধ ব্যক্তিদের তালিকায় নেই, বরং তিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক পছন্দের অতিথি হয়েছেন. আমেরিকার রাজনীতিবিদরা তৈরী আছেন তাঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপরে অপেক্ষা না করেই, এই কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাব্লিকান পার্টির সদস্যা কেটি ম্যাকমরিস রজার্স. তিনি মার্কিন সেনেটে প্রভাবশালী রিপাব্লিকান কনফারেনসের প্রধান. তিনি ঘোষণা করেছেন যে, "আমি আপনাকে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বাছাই হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই" আর মোদীকে ভারতীয় বিরোধী দলের নেতা হিসাবে ভিডিও আলাপে আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের প্রতিনিধিদের প্রতি বক্তব্য জানাতে আহ্বান করেছেন".

এই প্রসঙ্গে তোমিন আবার বলেছেন:

"বিশেষ করে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত, যা দিয়ে আজ মোদীকে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা ঘিরে ধরেছেন – তা একটা সুদূর লক্ষ্য করেই পদক্ষেপ, সবার আগে, এই ধরনের ইঙ্গিত করা হয়েছে একটা ভুল ধারণাকে ঢাকা দিতে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রয়েছে যখন থেকে মোদীকে সেই সমস্ত লোকদের তালিকায় রাখা হয়েছে, যাঁদের আমেরিকায় ঢোকা নিষেধ. মোদীকে আগে দেওয়া মার্কিন ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছিল ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে, যে আইন আমেরিকায় প্রবেশ আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয় সেই সব বিদেশী রাজনীতিবিদদের দেশে প্রবেশ করা নিয়ে, যাদের নামে মানুষের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ রয়েছে".

যদিও মোদীর সেই সময়ে হিন্দু ও মুসলমানদের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ এখনও করা সম্ভব হয় নি, তবুও আজ অবধি সেই সময়ে মোদীর নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু দ্বর্থ্যবোধক ধারণা রয়েই গিয়েছে.

এই ধরনের ব্যাপারের উপরে জোর দেওয়া নিয়েই কয়েকদিন আগে বিজেপির এক নেতা শত্রুঘ্ন সিনহার বক্তব্য শোনা গিয়েছে. তিনি জোর দিয়েই বলেছেন যে, মোদী নির্বাচিত হলে ওয়াশিংটন বাধ্য হবে তাঁকে ভিসা দিতে, "কারণ সেই ধরনের পরিস্থিতির কথা ভাবাই যায় না, যখন অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াশিংটন ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে". এই প্রসঙ্গে শত্রুঘ্ন সিনহার বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে যে, তাঁর দল "আমেরিকার প্রতি সমস্ত রকমের শ্রদ্ধা ও মর্যাদা বোধ থাকা স্বত্ত্বেও তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হতেও পারে".

নিজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ওবামার প্রশাসন তাঁর এক "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক" প্রতিনিধিকে দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে শান্ত করেছেন যে, সংবাদ মাধ্যমেই মোদীকে আমেরিকার ভিসা দেওয়ার প্রসঙ্গকে অহেতুক ফুলিয়ে তোলা হয়েছে, বাস্তবে আমেরিকায় আসা নিয়ে মোদীর কোন অসুবিধাই নেই.

সব দেখে শুনে মনে হয়েছে যে, সেই রকমই হতে চলেছে. বাস্তবে, কোন ভাবেই চিন্তা করা যায় না যে, বিশ্বের "সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষের গণতন্ত্রের" দেশের নেতা বিশ্বের "নেতৃত্ব দেওয়া গণতন্ত্রে" প্রবেশের অধিকার রাখবেন না. সেই ধরনের চিত্রনাট্য একেবারেই আশ্চর্যজনক লাগবে. কিন্তু বিজেপি দলের ভেটেরান শত্রুঘ্ন সিনহা শুধুশুধুই ইঙ্গিত করেন নি যে, নরেন্দ্র মোদী আমেরিকা যাওয়ার ইচ্ছা নি য়ে খুব একটা আগ্রহী নন, আর বিজেপি দল ওয়াশিংটনের সাথে বহু প্রশ্নের ক্ষেত্রেই একমত না হওয়ার অধিকার নিজেদের হাতেই বজায় রাখছে, তাই আবার করে সের্গেই তোমিন বলেছেন:

"আজকে ওয়াশিংটনের সরকারি মুখপাত্ররা যাই বলুন না কেন, বিজেপি কিন্তু ভারতের চিরন্তন মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে আমেরিকা ও তাদের রাজনীতির প্রতি সমালোচনাই করেছে. এর উদাহরণ যথেষ্টই রয়েছে. সিরিয়া সঙ্কটের সব থেকে জোরে জ্বলে ওঠার সময়ে বিজেপি ও বামপন্থী বিরোধী দলেরা মনমোহন সিংহের সরকারকে প্রাথমিক ভাবে ওবামার নীতি হিসাবে গৃহীত সিরিয়াতে সামরিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কড়া অবস্থান না নেওয়ার জন্য অনেক সমালোচনা করেছে".

আরও একটি উদাহরণ হতে পারে ২০১০ সালে জ্বলে ওঠা এক অভূতপূর্ব স্ক্যান্ডাল, যা হয়েছিল মনমোহন সিংহের সরকারের পরিকল্পিত নীতি অনুযায়ী দেশের বাজারে আমেরিকার থেকে আনা জিনের স্তরে পরিবর্তিত মনস্যান্টো কোম্পানীর বেগুন বিক্রী করা নিয়ে. এর প্রতিবাদে তখন বিজ্ঞানী, চাষী, বেসরকারি জন সহায়ক সংস্থার প্রতিনিধিরা ও বিজেপি দল একজোট হয়েছিল. তাদের মতে এই নতুন খাবার ভারতের বহু লক্ষ মানুষের জন্য মৃত্যুর সমান হয়ে দাঁড়াবে আর বিরোধী পক্ষ সরকারকে দোষ দিয়েছিল যে, সরকার ভারতের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে তৈরী হয়েছে বিক্রী করে দিতে.

এই ভাবেই, ভারতের প্রশাসনে নরেন্দ্রে মোদীর উদয় হলে ওয়াশিংটনের ভারত সংক্রান্ত রাজনীতিতে নতুন করে সমস্যা যোগ হয়ে যেতে পারে. মোদীকে শুধু একটা দেশে ঢোকার ভিসা দিয়ে আমেরিকা এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না.

আমেরিকা, ভারত, মার্কিন, আমেরিকা – হিন্দুস্থান: সম্পর্ক ও সমস্যা সম্বন্ধে রাশিয়ার অবস্থান, নির্বাচন, রাজনীতি

সম্পূর্ণ পড়তে হলে: http://bengali.ruvr.ru/2013_11_13/markin-bharat-modi/



বাংলাদ্যাশেও উন্য়নের রগড় লেগেছে

জনকন্ঠে পড়ুনঃ

প্রত্যেক জেলায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

সাভারে চামড়া শিল্পের জন্য ইটিপি স্থাপনের তাগিদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পের বিকাশে প্রত্যেক জেলায় শিল্পাঞ্চলের জন্য স্থান নির্ধারণ এবং এ লক্ষ্যে জরিপ চালাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এই পরিকল্পনা স্থানীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবহার করে ব্যবসা করতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।

তিনি রবিবার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণে এ নির্দেশ দেন। খবর বাসসর।

শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারী খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে শিল্পনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন ও অন্যান্য বিষয় মনিটরিংয়ে সরকারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়তে কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব সময় পরিবেশবাদীদের হই-চই শুনতে হবে এমন কোন কথা নয়।

তিনি বলেন, যেখানে সেখানে শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। তবে সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মূল্যবান জমি ও পরিবেশ ধ্বংস না করে শিল্পের জন্য নির্ধারিত স্থান গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ তার কৃষি, শিল্প ও জনশক্তির ভিত্তিতে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে- এ আস্থা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এসব সম্পদ পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারলে কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।'

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মাদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শিল্পনীতিতে সঙ্গতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অতীতে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন নীতি অনুসরণ করেছে। আমাদের বেসরকারী উদ্যোক্তা প্রয়োজন। তবে সরকারী খাত না থাকলে নিয়ন্ত্রণ ও মান কোনটাই থাকে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারী খাতের শিল্প-কারখানা পুনর্গঠনের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের বিকাশেও খুবই উদার নীতি নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে শ্রমঘন শিল্প স্থাপন করতে চায়। এ জন্য শ্রমিকদের আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

দেশের ৭ অঞ্চলে বিশেষ শিল্পাঞ্চল স্থাপনে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী আরও স্থান খুঁজে দেখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আর কোন পাটকল বিক্রি করবে না। বরং এসব স্থপনাকে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য শিল্প প্লটে রূপান্তর করা হবে। তিনি সারের উৎপাদন শুরু করতে সাফকোতে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দেন।

এদিকে বিডি নিউজ জানায়, সাভারে চামড়া শিল্পের জন্য ইটিপি স্থাপন করে হাজারীভাগ থেকে অপরিকল্পিত শিল্প সরিয়ে 'দ্রুত' শিল্পনগরী বাস্তবায়নের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে রফতানি বাড়ানোর বিষয়েও তিনি তাগিদ দেন।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি ও আমার বোন ছাড়া আমাদের পরিবারের সবাইকে আমরা হারিয়েছি। এই ব্যথা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে সমাসীন করতে আমি সংগ্রাম করে যাচ্ছি।'

দেশের উন্নয়নে শিল্প প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ, আমরা কৃষিকে অবহেলা করতে পারি না। তবে কৃষি খাতের শিল্পায়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এখন হচ্ছে শিল্প উন্নয়নের সময়। বিদেশী বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী। একই সঙ্গে সরকারও বেসরকারী খাতের পাশাপাশি সরকারী খাত ও সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে এদেশে শিল্প প্রবৃদ্ধির সূচনা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু 'বাংলাদেশ শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী নয়' পাকিস্তানের এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে শিল্পের উন্নয়নে অনেক আইনী কাঠামো প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন এ দেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রদূত। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

বর্তমান ২০০৯ সালের ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় দেশে উন্নয়ন কর্মকা- গৃহীত হচ্ছে। এ সঙ্গে রয়েছে ১০ সালা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। এতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনায় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়ায় এতে শিল্পের উন্নয়ন হবে এবং যা শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের সহায়ক হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বিগত বিএনপি সরকারের এক বছর বা দুই বছর মেয়াদী বা এ্যাডহক ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেন, দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বিটি বেগুন সমাচার

গবেষণার নামে প্রাণ-উপনিবেশীকরণ

পাভেল পার্থ

রাষ্ট্রকে এ বহুজাতিক প্রাণ-উপনিবেশীকরণের বিরুদ্ধে ঘাড় সোজা করে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের বেগুন নিয়ে যাবতীয় সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত, রূপান্তর, বিকাশ ও মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের। বিটি বেগুন বাতিল করে জনগণের দেশী বেগুন-অর্থনীতিকেই বিকশিত করতে হবে

পৃথিবীতে কৃষি ও জুমনির্ভর গ্রামীণ নিম্নবর্গই সম্ভবত সর্বাধিক গবেষিত জনগোষ্ঠী। চলতি সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, 'বায়োপ্রসপেক্টিং' ও জিনপ্রযুক্তি গবেষণার নামে গ্রামীণ নিম্নবর্গের হাজার বছরের প্রাণসম্পদ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানও ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। জাতীয় রাষ্ট্রগুলো নানা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানিকে এ সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। একসময় অর্থকড়ি, জমিজমা, ধনদৌলতের মতো দৃশ্যমান বস্তুগত বিষয়াদি ছিল লুটতরাজের নিশানা। কলম্বাসের সময় অন্যায়ভাবে দেশ দখল ছিল ঔপনিবেশিক লুটতরাজের প্রধান ক্ষেত্র। আজ সেই ঔপনিবেশিক লুটতরাজের নিশানা পাল্টেছে। এখন লুট হচ্ছে প্রাণের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি মৌলকণা 'জিন'। জিন মানে হলো বংশগতির ধারক ও বাহক। মানে বেগুন কি মানুষ? আমাদের শরীরে সহস্র কোটি কোষ আছে। কোষে আছে জিন। আর এ জিনের ভিন্ন ভিন্ন বিন্যাসই খুমিদের চেহারার সঙ্গে সাঁওতালদের চেহারার ভিন্নতা তৈরি করেছে। এ জিন বিন্যাসের ভিন্নতাই কোনো বেগুন লম্বা কোনোটা গোল। গরিব দেশের প্রাণসম্পদ ও লোকায়ত জ্ঞানের ওপর চলতি সময়ের এ বহুজাতিক ঔপনিবেশিক দস্যুতার নামই 'প্রাণ-উপনিবেশীকরণ'। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, কারগিল, ফাইজার, কোক-পেপসির মতো বহুজাতিক কোম্পানিরাই এ অন্যায় 'প্রাণ-উপনিবেশীকরণকে' তরতাজা রাখছে। সারা দুনিয়ার গরিব নিম্নবর্গের প্রাণসম্পদ ও লোকায়ত বিজ্ঞান নানা প্রকল্প ও গবেষণার নামে একতরফা ডাকাতি ও নিয়ন্ত্রণ করছে। দুনিয়ার সামগ্রিক বীজ বাজারের ৬৪ শতাংশ আজ দখল করে রেখেছে দশটি বহুজাতিক কোম্পানি। একা মনস্যান্টোই নিয়ন্ত্রণ করে এর এক-পঞ্চমাংশ। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালে সম্পাদিত 'বিটি বেগুন প্রকল্পের' নামে মনস্যান্টো বাংলাদেশের নয়টি বেগুন জাত ছিনতাই করেছে। বেগুনের জিনসম্পদের এত বড় বহুজাতিক ডাকাতি এই প্রথম। এসব বহুজাতিক কোম্পানি আইনি খবরদারির মাধ্যমে ছিনতাই করা প্রাণসম্পদের ওপর নিজেদের একতরফা নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানার জন্য এসব পেটেন্ট করে ফেলে; যাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পেটেন্টকৃত প্রাণসম্পদের ওপর ওই কোম্পানির একতরফা কর্তৃত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার মিসিসিপি মেডিকেল সেন্টার ইউনিভার্সিটি যখন একতরফাভাবে হলুদ পেটেন্ট করে, তখন এ জিন-দস্যুতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিরোধ জোরদার হয়। ২০০০ সালে আমেরিকার ডব্লিউ আর গ্রেস কোম্পানি নিমগাছের পেটেন্ট দাবি করে, ১৯৯৭ সালে আমেরিকার রাইসটেক ইনকরপোরেশন বাসমতি ধানের ওপর পেটেন্ট অধিকার চায়। শামান ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বডিশপ আমাজন বর্ষারণ্যের আদিবাসীদের সঙ্গে কাজ করে তাদের ঐতিহ্যগত উদ্ভিদ ব্যবহার থেকে কিছু বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বিক্রি শুরু করে। ভারতের দি আরায়া বৈদ্য ফার্মেসি কানি আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত উদ্ভিদ আরোগ্যপাচ্চাকে পেটেন্ট করে। সাম্প্রতিক প্রাণ-উপনিবেশীকরণ ঘটেছে গ্রামবাংলার বেগুনকে ঘিরে। বিটি বেগুন গবেষণা প্রকল্পের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরা, কাজলা, নয়নতারা, শিংনাথ, দোহাজারী, চ্যাগা, খটখটিয়া, ইসলামপুরী ও ঈশ্বরদী লোকাল এ নয়টি বেগুন জাতের ওপর মনস্যান্টোর বহুজাতিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

হাজার বছরের নাম ও স্বভাব পাল্টে গেছে

বাংলাদেশ বেগুনের জন্মভূমি ও উত্পত্তিস্থল। দেশে এখনো টিকে আছে শিংনাথ, খটখটিয়া, লম্বা, মোটা, তবলা, গোল, কালা, লতা, পুতা, সাদা, লাল, ঝুমকি, ডিম, তিতা, বারোমাইস্যা, কামরাঙ্গা, তাল, টুপরি, কুলি, টোপা, আউশা, হিংলা, ঘি কাঞ্চন, আমঝুপি, কাঁটা নানা নামে নানা স্বাদের বেগুন। আদিবাসী অঞ্চলে আছে বারেং মেকব্রেও, কামরাঙ্গা বারেং, খুমকা, বারেং দচি, বারেং মিগন এ রকম কত জাতের জুম বেগুন। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত শস্য ফসলের জাতগুলোর একটি প্রাণসম্পদ তালিকা তৈরি হয় ১৯৯৬ সালে। 'জবঢ়ড়ত্ঃ ড়হ ঢ়ষধহঃ মবহবঃরপ ত্বংড়ঁত্পবং ১৯৯৬' নামে সেই তালিকাটিকে মূল তালিকা ধরে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আপডেট করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) বেগুনের (ঝড়ষধহঁস সবষড়হমবহধ) মোট ২৪৮টি একসেশন সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মনস্যান্টোর ডাকাতি করা নয়টি বেগুন জাতের ভেতর কেবল নয়নতারা জাতটির উত্পত্তিস্থল ভারত। ১৯৯৮ সালে বারি একে দেশে চাষের অনুমোদন দেয়। নয়টি দেশী বেগুন জাতে বিটি জিন ঢুকিয়ে বিটি বেগুন প্রকল্প শুরু হয় ২০০৫ সালে। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর উত্তরা (বারি-১), কাজলা (বারি-৪), নয়নতারা (বারি-৫) ও বারি-৬কে যথাক্রমে বিটি বেগুন-১, ২, ৩, ৪ নামে ছাড় দেয়। শুধু একটি জিনের বদলের কারণে বেগুনগুলোর ঐতিহ্যগত নাম-পরিচয় ও স্বভাবকে সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা হয়েছে। বেগুনের সঙ্গে জনগণ ও প্রতিবেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও বিজ্ঞানকে এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বেগুনের নাম-পরিচয়কে এভাবে পাল্টে দেয়া সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। রাষ্ট্র বিটি বেগুনের নামে দেশী বেগুনের নাম ও স্বভাব পাল্টে প্রাণ ও প্রকৃতির জীবন ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।

বিটি বেগুনের অন্যায় চুক্তি

জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিকৃত ঘটানো বেগুনের নাম বিটি বেগুন। বেগুনের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা মারার জন্য বেগুনের ভেতর একটি ব্যাকটেরিয়ার জিন ঢুকিয়ে গবেষণাগারে এ কৃত্রিম বেগুন তৈরি করা হয়েছে। বিটি জিন এবং বিটি জিনপ্রযুক্তির মেধাস্বত্ব ও মালিকানা মার্কিন বহুজাতিক কৃষি বাণিজ্য কোম্পানি মনস্যান্টোর। ভারতীয় করপোরেট কোম্পানি মাহিকো মনস্যান্টোর এ বিটি জিনপ্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করে। পরে মাহিকো কোম্পানির এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুন উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য 'পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের' মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনকে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য 'কৃষি প্রাণপ্রযুক্তি সহায়তা প্রকল্প-২ নামে ২০০৫ সালে বিটি বেগুন প্রকল্প চালু হয় মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায়। ২০০৫ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), মহারাষ্ট্র হাইব্রিড সিড কোম্পানি লিমিটেড (মাহিকো) এবং কৃষি প্রাণপ্রযুক্তি সহায়তা প্রকল্প-২-এর পক্ষে সত্গুরু ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেড এক ত্রিপক্ষীয় 'শতগুরু চুক্তি' স্বাক্ষর করে। যদিও বারি বলছে, মাহিকো ও বারির ভেতর ম্যাটেরিয়াল ট্রান্সফার এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হয় ১৬/০২/২০০৫ সালে। চুক্তির ১.১৯নং শর্তে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বিটি বেগুন প্রকল্পে ব্যবহূত বিটি জিন, বিটিপ্রযুক্তি ও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত বা বিক্রয়যোগ্য সব বিটি বেগুনের ওপর মেধাস্বত্ব অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ মনস্যান্টো কোম্পানির। মনস্যান্টোর পেটেন্টকৃত বিটি জিন বাংলাদেশী বেগুনে ঢোকানোর ভেতর দিয়ে উল্লিখিত চুক্তি মোতাবেক এখন মনস্যান্টো বাংলাদেশের উল্লিখিত বেগুনের ওপর তার কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের বৈধতা পেয়েছে। চুক্তির ১.৬নং শর্তে বলা হয়েছে, বিটি বেগুনের বীজ কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে। ৯.২ (গ) শর্তে উল্লেখ আছে, বিটি বেগুন বীজের বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকার মনস্যান্টো-মাহিকো কোম্পানির, বিটি বেগুন বীজ এবং প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘিত হলে কোম্পানি এ চুক্তি বাতিল করার অধিকার রাখে। বিটি বেগুনের মালিকানা প্রশ্নে রাষ্ট্র এখনো কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি। বারির মহাপরিচালক বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেননি। একবার বলছেন, বিটি বেগুনের বীজের মালিকানা বারির থাকবে, আবার বলছেন বিটি জিন ও প্রযুক্তির মালিকানা মনস্যান্টো ও মাহিকো কোম্পানির (সূত্র: দৈনিক সকালের খবর, ২৩/২/২০১৩)। কৃষকদের মাঝে চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে বিটি বেগুনের মেধাস্বত্ব বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকার, বাণিজ্য-সংক্রান্ত অধিকার, পেটেন্ট ইত্যাদিসহ বিদ্যমান এবং অনাগত অন্য অনেক বিধি ব্যবস্থা মেনেই জিএম ফসলের বাস্তবতাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। তার মানে আমরা স্পষ্ট হতে পারি যে, আমরা কেবল মনস্যান্টোর একটি বিপজ্জনক প্রযুক্তিকেই সফল করে তুলব, কিন্তু এর ভেতর দিয়ে আমাদের প্রাণসম্পদের কোনো মালিকানা ও মেধাস্বত্ব দাবি করতে পারব না।'

লঙ্ঘিত সনদ ও রক্তাক্ত বেগুন-মানচিত্র

সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ নিরাপত্তা বিধান করবেন। দেশের বেগুন জাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দেশের সম্পদ অন্যায়ভাবে কোনো বহুজাতিকের মালিকানায় তুলে দিতে পারে না। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদের (১৯৯২) অনুচ্ছেদ-১৫ মতে, কোনো রাষ্ট্রের প্রাণসম্পদের ওপর অন্য কোনো রাষ্ট্রপক্ষের অভিগম্যতা কীভাবে ও কতটুকু হবে, তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সরকার এবং তা জাতীয় আইনের অধীন। দেখা যায়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এসব ছাড়পত্র ও আইনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে জাতীয় আইন ও নীতি তৈরিতেও রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেয়। আর তাই বাংলাদেশ বিটি বেগুন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে ২০০৫ সালে একটি রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি ও একটি বায়োসেফটি গাইডলাইন তৈরি করে, ২০০৬ সালে জাতীয় খাদ্যনীতিতে জিএম খাদ্যকে বৈধতা দেয়, ২০১০ সালে জৈবনিরাপত্তা আইন খসড়া করে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নিয়ন্ত্রিত আজ এ করপোরেট বিশ্বায়িত দুনিয়ায় মানুষের সম্পদ, সম্ভাবনা, জ্ঞান, মেধা সবই একতরফাভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের নামে ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব চুক্তির (ট্রিপস) ২৭.৩ (খ) অনুচ্ছেদ প্রাণসম্পদ, জ্ঞান, প্রযুক্তির ওপর পেটেন্টের বৈধতা রাখা হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মতো গরিব দেশকে জিনসম্পদ লুটতরাজের সবচেয়ে নিরাপদ ক্ষেত্র মনে করছে। কারণ উল্লিখিত বিটি বেগুন প্রকল্পটি ভারত, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে একযোগে শুরু হয়। ভারত ও ফিলিপাইন বিটি বেগুন নিজ দেশে নিষিদ্ধ করে। একমাত্র বাংলাদেশই এ প্রকল্প 'সার্থক ও সফলতার' ভেতর দিয়ে শেষ করে বিটি বেগুনের রাষ্ট্রীয় ছাড় ও অনুমোদন দেয়। এটিই নয়াউদারীকরণ ব্যবস্থার প্রাণ-উপনিবেশীকরণের রাজনৈতিক-অর্থনীতি; যা আজ বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের ঘাড়ে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। রাষ্ট্রকে এ বহুজাতিক প্রাণ-উপনিবেশীকরণের বিরুদ্ধে ঘাড় সোজা করে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের বেগুন নিয়ে যাবতীয় সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত, রূপান্তর, বিকাশ ও মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের। বিটি বেগুন বাতিল করে জনগণের দেশী বেগুন-অর্থনীতিকেই বিকশিত করতে হবে।

লেখক: গবেষক ও লেখক




নাদিরা মজুমদার

test@gmail.com

জিন পরিবর্তিত খাদ্য

14 October 2012, Sunday

প্রাণিসত্তা মাত্রেরই জন্মগত বৈশিষ্ট্য খোদাই করা থাকে 'জিনে'। জিনের কাজ হলো প্রাণীজগতের বংশানুগতির নিয়ন্ত্রণ করা, অর্থাৎ সে বংশগত বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রক। বিগত অনেক শতাব্দী ধরে, খাদ্যশস্য ও ব্যবহারযোগ্য বিবিধ পশুর জন্মগত বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তনের উপায় হিসেবে মানুষ 'নির্বাচিত প্রজনন পদ্ধতি' ব্যবহার করে আসছে। পদ্ধতিটি প্রাকৃতিকভাবে করা হয়; জিনের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনে বাইরের কোন সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকে না। পছন্দমাফিক ফলাফল পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়; তদুপরি, তা কতটুকু আশাপ্রদ হবে, দৈব্যের ওপরে ভরসা করে থাকতে হয়।


কিন্তু আধুনিককালে, জিনভিত্তিক প্রকৌশল (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) ডজনগত বৈশিষ্ট্যের 'যথাযথ' স্থানান্তরের পরিধিকে আরো প্রসারিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ যেমন, অতি শীতল সাগরের জলে যে মাছ নির্বিঘেœ বসবাস করছে, তার ডজন স্ট্রবেরি' নামক ফলে সন্নিবিষ্ট করে দেয়া, যাতে ফলটি হিমে কাবু না হয়ে বরং হিম-সহিষ্ণু হয়। অর্থাৎ সর্বাধুনিক মলিকিউলার বায়োলজী টেকনিক ব্যবহার করে গবেষণাগারেই আমাদের পছন্দমাফিক নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যকে বর্তমানে

যথার্থভাবে প্রয়োগ ব্যবহার সম্ভব।


মানুষের বা গবাদীপশুর প্রয়োজনে এভাবে সৃষ্ট খাদ্যকে 'ডজনগত পরিবর্তিত খাদ্য বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্য বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড প্রাণীসত্তা' বা স্রেফ জিএম খাদ্য বা জিএমও বলা হয়। জিএমও'র প্রথম যুগে সাধারণত খাদ্যশস্যের ডজনগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনকে প্রাধান্য দেয়া হয়। যেমন, যে উদ্ভিদ জলহীন অনাবৃষ্টি সহ্য করতে সক্ষম, সেই উদ্ভিদের ক্ষরা-সহিষ্ণু ডজনকে অন্য উদ্ভিদে সন্নিবিষ্ট করে দিলে সে-ও অনাবৃষ্টিজনিত শুষ্কতা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করবে। একইভাবে অ-উদ্ভিদ প্রাণীসত্তার ডজনও উদ্ভিদে সন্নিবেশ হতে পারে। এর বিখ্যাত উদাহরণ হলো ভুট্টাসহ আরও কয়েকটি খাদ্যশস্যে বহুল আলোচিত বি.টি ডজনের সন্নিবেশ।


বি. টি ডজন প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া ব্যাকটেরিয়া; সে যে ক্রিস্টাল প্রোটিন তৈরি করে-পোকামাকড়ের শুককীটের জন্য তা মারণাস্ত্র। তাই ভুট্টায় এই বি.টি ডজন সন্নিবিষ্ট হওয়ার ফলে ভূট্টা কীটনাশক নিজস্ব শক্তি অর্জন করে। বাজারে, জিএমও খাদ্যের প্রথম 'পাইকারি হারে'র আবির্ভাব ঘটে নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ বাজারই জিএমও পণ্য উপকরণে ছেয়ে যায়। সেই সঙ্গে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রাণীসত্তার প্যাটেন্ট করার নতুন এক যুগেরও সূচনা হয়। যুক্তরাজ্যের সেইন্সব্যারি ও সেইফওয়ে স্টোরস দুটো ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মে জিএমও টোম্যাটো বিক্রির মাধ্যমে ইউরোপীয় মহাদেশে জিএমও যুগের সূচনা করে। ইত্যবসরে কীট-প্রতিরোধক তুলা ও কীট-সহিষ্ণু সয়াবীনও বাজারজাত হয়।


এরপর থেকে জিএম-জাত খাদ্য দ্রুত বিশ্বায়িত হতে থাকে। ১৯৯৫ সাল ও ২০০৫ সালের মধ্যে খাদ্যের প্রয়োজনে জিএম-জাত শস্য আবাদের জমির পরিমাণ ১৭০০০ বর্গ কিলোমিটার (৪.২ মিলিয়ন একর) বেড়ে হয় ৯০০ ০০০ বর্গ কিলোমিটার (২২২ মিলিয়ন একর)। জিএম-জাত খাদ্য আবাদে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে; তাছাড়াও, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান ইত্যাদি দেশগুলোর অংশও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২০০২ সাল থেকে ভারতও নানা ধরনের জিএমও-জাত তুলাগাছের আবাদে মনোনিবেশ করেছে। জিএম-জাত খাদ্যদ্রব্যের কোন সম্পূর্ণ তালিকা এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি। জিএমও'র সূতিকাগার যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর কোন উন্নত দেশেই জিএমও সংক্রান্ত কোন আইনগত বিধিব্যবস্থাও এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তবে অনুমান করা হয় যে কমবেশি ৩০ ০০০ রকমের জিএম-জাত পণ্য বাজারে ছাড়া হয়েছে।


যেমন, অনেক তৈল-উদ্ভিদ, মধু, তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, টোম্যাটো, সুগার বীট, নানা ধরনের ভিটামিন, আলু, অতসী বা শন গাছ, মাংস ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য, মটরশুঁটি, কীট-প্রতিরোধক বেগুন, ভেজিটেবল তেল ইত্যাদি জিএমও-জাত। এমনকি আখগাছ বা ধান গাছও জিএমও-জাত করা হয়েছে। তবে জিএমও-জাত চিনি লোকে পছন্দ করেনি বলে তার ব্যাপক প্রসার হতে পারেনি; এবং নতুন এক জিএমও-জাত ধান গাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ'। এই ধানের আবাদ হবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং যেহেতু, এতে মানব-ডজন ব্যবহার হয়েছে, তাই এর ব্যবহার খাদ্য হিসেবে না হয়ে হবে তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের উদরাময় ও অন্যান্য পেটের অসুখের চিকিৎসার জন্য।


জিএমও-জাত খাদ্য ও পণ্য উৎপাদনকারীরা মূলত বিশাল আকারের সব রাসায়নিক শিল্প; এবং এদের মধ্যে মনস্যান্টো ও ড্যু পন্ট সুপরিচিত নাম। ভাইরাস-প্রতিরোধক পেপে সৃষ্টির কৃতিত্ব মনস্যান্টো'র; ১৯৯৯ সালে হাওয়াই-য়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর প্রথম আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে হাওয়াইয়ের তিন-চতুর্থাংশ পেঁপেই জিএম-জাত। মনস্যান্টো এই প্রযুক্তিটি ভারতের তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিয়েছে; 'রিংস্পট' ভাইরাস-প্রতিরোধক পেঁপে সৃষ্টির জন্য মনস্যান্টোর প্রযুক্তিটি ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করবেন।

জিএম-জাত খাদ্য মানুষের জন্য কতটুকু নিরাপদ- এই সংক্রান্ত তথ্যাবলীর পরিমাণ অত্যন্ত কম। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।


বর্তমানে, নানা ধরনের উদ্ভিদের, সংখ্যায় চল্লিশটিরও অধিক তো হবেই, বাণিজ্যজাতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে জিএম-জাতকরণ প্রক্রিয়া যে আরও বিভিন্ন রকমের ও ধরনের হবে, বলাইবাহুল্য। যেমন, ওষুধযুক্ত খাদ্য হিসেবে হেপাটাইটিস বি'র মতো সংক্রামক ব্যাধি-রোধক কলা, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এমন মাছ, ফল বাদাম ইত্যাদির ফলনকাল কমিয়ে আনা, বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন প্লাষ্টিক উৎপাদনকারী গাছ ইত্যাদি।

জিএম-জাত খাদ্য উৎপাদনের পক্ষে ইতিবাচক কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন, কীট-প্রতিরোধক শস্যের চাষে চিরায়ত কীট-নাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। তাতে ফলন যেমন বেশি হবে, আবার কীটনাশক বাবদ খরচও বাঁচবে। বা আগাছা-প্রতিরোধক শস্যের ফলন থেকে শুরু করে রোগ-প্রতিরোধক শস্য, হিম-প্রতিরোধক শস্য, অনাবৃষ্টি-প্রতিরোধক শস্য ফলন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আশানুরূপ ফলনের কথা বলা চলে। তাছাড়া, জিএম-জাত পুষ্টি, ওষুধ, ভ্যাকসীন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে বিরাজমান সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে জিএম প্রযুক্তি।


জিএম-জাত উদ্ভিদ কেবলমাত্র খাদ্যশস্য আবাদের জন্যই ব্যবহার হচ্ছে, তা নয় কিন্তু। মাটি ও ভূ-গর্ভস্থ জলের দূষণের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। জিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে এই দূষণের সমাধানের চেষ্টা চলছে। যেমন, জিএম-জাত ঝাউজাতীয় পপলার গাছকে দূষিত মাটি ও ভূ-গর্ভস্থ জলের বিশোধন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রকৃতিপ্রদত্ত 'ডিএনএ'য়ের কাঠামোকে আমরা সুবিধাজনকভাবে অদলবদল করে ব্যবহার করছি, কাজে লাগাচ্ছি।


আপাতদৃষ্টে, জীবিত প্রাণীসত্তার ওপরে জিএম-জাত কৌশলের প্রয়োগ কৃষিব্যবস্থা, খাদ্য ও ওষুধ উৎপাদন শিল্পে নতুন এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেছে, বলা যায়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাণীসত্তার ডজনকে 'অনুভূমিক স্থানান্তর' (হরাইজন্টাল ডজন ট্রান্সফার) করা হয়। 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' কথা প্রথম শোনা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সিয়েটলে প্রকাশিত এক পেপারে, ১৯৫১ সালে। উদাহরণ হিসেবে ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসার সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়। অর্থাৎ জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিকের সুবিখ্যাত 'ডবল হেলিক্স' আবিষ্কারের দুই বছর আগের ঘটনা এটি। পরবর্তী বছরগুলোতে 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' ওপরে আরো অনেক পেপার প্রকাশিত হতে থাকে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে, 'জিনের অনুভূমিক স্থানান্তর'টি প্রকৃতিতেও বিদ্যমান রয়েছে, এবং এর জৈব গুরুত্ব অসাধারণ। পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের ঊষালগ্ন থেকেই ক্রমবিকাশের ইতিহাসের সঙ্গে সে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে।


২০০৫ সালে রিভারা ও লেইকও প্রকৃতিতে এককোষী প্রাণীসত্তার ক্রমবিকাশে 'জিনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' পুনরুল্লেখ করেন। এই মুহূর্তে বহুকোষী প্রাণীসত্তার ওপরে 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' ব্যাপকতা ও গুরুত্ব সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা নেই আমাদের। তবে কৃত্রিম পদ্ধতিতে উচ্চশ্রেণীর গাছগাছালি ও প্রাণীর ওপরে 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' বিরূপ প্রভাবের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে মানুষ ও প্রকৃতির নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগের ঘনত্ব বেড়েই চলেছে। 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' বিষয়টি সম্বন্ধে বিজ্ঞান এখনও এ-তো এ-তো কম জানে যে এর অপব্যবহার বিপজ্জনক হতে বাধ্য।


আসলে 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' বিষয়টি বিজ্ঞানের 'আঁতুর ঘর' পর্ব এখনও অতিক্রম করেনি। তাই জিএম প্রকৌশলের মাধ্যমে আমরা যে এই 'ডজনের অনুভূমিক স্থানান্তরের' পদ্ধতি ব্যবহার করছি, তাতে যে ঝুঁকিপূর্ণ বিপদ লুকিয়ে নেই, কে জানে? ডজনের এই 'অনুভূমিক স্থানান্তর' প্রক্রিয়া প্রাণীজগতের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং সৃষ্টি হতে পারে অপ্রত্যাশিত অন্য কিছুর।

জিএম-জাত খাদ্যের সঙ্গে খাদ্যের বাণিজ্যকরণটি নিবিড়ভাবে জড়িত। জিএময়ের বাণিজ্যকরণ মানেই প্যাটেন্ট অধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি চলে আসছে। কোন কিছুর প্যাটেন্ট বুদ্ধিজীবিগত সম্পদ অধিকারের (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট-আইপিআর) মধ্যে পড়ছে; যেমন, একজনের গল্প কবিতা, সঙ্গীত, সুর নিজের নামে চালিয়ে দেয়া, বা নামী ঘড়ি প্রস্তুতকারী কি স্পোর্টস কোম্পানির জিনিসপত্র বানিয়ে সেই কোম্পানির নাম ব্যবহার করা, সিডি, ডিভিডির কপি করে বিক্রি করে মুনাফা করা ইত্যাদি সবই আইপিআর-য়ের আওতায় পড়ে। অর্থাৎ নিজের মগজ খাটিয়ে প্রকৃত, খাঁটি কিছু যা করছি এবং প্রয়োজনে আরো নিখুঁত করে উন্নত করছি, সেগুলো প্যাটেন্ট করে একচেটিয়া অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি আমরা। প্যাটেন্টকৃত একচেটিয়া অধিকারের মেয়াদ ১৭ বছর থেকে বিশ বছর মেয়াদী হতে পারে।


কিন্তু জিএমও-কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্যাটেন্ট অফিসগুলো বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, জিএম-জাত শস্য, উদ্ভিদ ও শস্যের ডজন এবং ডজন 'সিকোয়েন্সের' ওপরে প্যাটেন্ট মঞ্জুর করছে। যেমন, জৈব-বৈচিত্রের দিক দিয়ে পৃথিবীর ধনীতম দেশ ব্রাজিলের কথাই ধরা যাক। পৃথিবীর মোট উদ্ভিদ সম্পদের প্রায় ২২ শতাংশই ব্রাজিলে রয়েছে; প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫৫০০০। এবং এ পর্যন্ত জানা এই উদ্ভিদ প্রজাতির অর্ধেকেরও বেশি প্রজাতির প্যাটেন্ট করে রেখেছে বড় সব আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। ভারত উপমহাদেশে রয়েছে, এ পর্যন্ত জানা, ৪৬০০০ প্রজাতির উদ্ভিদসম্পদ।


উপমহাদেশীয় কিছু কিছু প্রজাতিও প্যাটেন্ট হয়েছে। আবার কোন কোন প্রজাতির প্যাটেন্ট প্রক্রিয়া ভারত সরকারের উদ্যোগে বানচাল করা হয়। কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্বচ্ছ হবে। তবে বলতে পারি যে প্রকৃতিপ্রদত্ত উদ্ভিদসম্পদের ব্যাপক প্যাটেন্ট প্রক্রিয়া এবং প্যাটেন্ট অর্জনের উদ্যোগ প্রচেষ্টা যে ধরনের নৈতিক পাপের মধ্যে পড়ে, তা প্রকাশের ভাষা এখনো সৃষ্টি হয়নি। ফলস্বরূপ, জিএম-জাত খাদ্য ও জিএম প্রাণীসত্তা বিষয়ক শাখায় 'জৈব-দস্যুতা' ও 'দেশজ জ্ঞানের' চৌর্যবৃত্তি নামক দুটো নতুন পরিভাষার সংযোজন হয়েছে। কারণ, প্রথমত, প্যাটেন্টের মাধ্যমে দেশজ সৃজনশীলতা ও প্রয়োগবিধিকে নিজের দখলে নেয়া হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত, চুরিকৃত জ্ঞানের প্যাটেন্ট, প্যাটেন্টধারীকে উদ্ভিদসম্পদ ও দেশজ জ্ঞানের ওপরে যে একচেটিয়া অধিকার দেয়, তার রয়েছে সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক প্রভাব।


উপমহাদেশের ক্ষেত্রে, উদ্ভিদসম্পদ ও দেশজ জ্ঞানের সম্ভবত প্রথম অপহরণের সূত্রপাত হয় ১৯৯৫ সালে। খ্যাতনামা মেগাডজন নিউ সায়েন্টিস্ট ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে 'পাইরেটস ইন দি গার্ডেন অব ইন্ডিয়া' শিরোনাম দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি যে, যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারকে হলুদের প্যাটেন্ট দেয়া হয়েছে। এই হলুদ সেই হলুদ, যাকে ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন রান্না অসম্ভব; যে হলুদবাটা ছাড়া বিয়ের হলুদ হতে পারে না; যে কাঁচা হলুদের রস সকালে খালি পেটে আমাদের অনেককেই খেতে হয়েছে।


ঘা পাঁচড়া সারাতে গুঁড়ো হলুদের মতো ওষুধ হয় না, আলজাইমার, গেঁটেবাত থেকে শুরু করে এমনকি ক্যান্সারকে উৎসাহিত করতে সক্ষম এমন এনজাইমের উৎপাদন রোধসহ আরো অনেক গুণাবলী হলুদ ধারণ করে আছে। হলুদের মাহাত্ম্য বলে শেষ করা যাবে না। বিবিধ কারণে ও উপলক্ষে হলুদের ব্যবহারবিধি আমরা শিখেছি অনেক অনেক বছর, একাধিক প্রজন্ম ধরে। সৃষ্টি হয়েছে দেশজ জ্ঞানের বিশাল ভা-ার, যাতে সবারই প্রবেশাধিকার রয়েছে। আমাদের সবার পরিচিত নামের কথাই ধরা যাক। নিম ডালের মেসওয়াক থেকে শুরু করে, নিমপাতা ভাজা খাওয়া, নিমপাতার গরম জলে গোসল করা, বসন্ত রোগীর নিমপাতা ছড়ানো বিছানায় শোয়াসহ নিমের আরো অনেক মাহাত্ম্য প্রাচীন ভারতের লেখায় উল্লিখিত রয়েছে। নিম বিষয়ে আমাদের জানাশোনাও সবার জন্য প্রবেশগম্য দেশজ জ্ঞান।


ইউরোপীয় প্যাটেন্ট অফিস ডব্লিউ. আর এ্যান্ড কোম্পানিকে এই নিমের প্যাটেন্ট মঞ্জুর করে। প্যাটেন্টের কাজই এই সার্বজনীন প্রবেশগম্যতাকে শৃঙ্খলবদ্ধ করা, হলুদ বা নিম-ব্যবহার করতে চাও তো, সাদা বাংলায় যার অর্থ-ছাড় কড়ি মাখো তেল। কারণ, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার রয়েছে বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য 'ট্রেড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি' নামে শক্ত এক অস্ত্র। আমাদের কপাল ভাল যে শিবদের মতো কিছু আইকন পৃথিবীতে রয়েছে। ১৯৯৬ সালে এই দুই প্যাটেন্টের বিরুদ্ধে প্রচ- আপত্তি ঘনীভূত হতে থাকে। ভারত শেষ পর্যন্ত প্যাটেন্টবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ী হয়; প্যাটেন্ট দুটো শেষপর্যন্ত নাকচ হয়ে যায়। তবে প্যাটেন্ট নামক সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হতে আরও কিছু সময় লাগবে। কারণ, অনাদিকাল থেকে নিত্যদিনের জীবনে আমরা আরও অনেক অনেক ধরনের লতাপাতা, শিকড়, ডালপালা ব্যবহার করে আসছি, এবং সেগুলোর অনেকগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের প্যাটেন্ট অফিসের মঞ্জুরের অপেক্ষায় রয়েছে।


জিএম-জাত খাদ্য ও প্রাণীসত্তার ক্ষেত্রে, একেই জৈব-দস্যুতা বলা হচ্ছে। এই জৈব-দস্যুতার দরুন কেবল উপমহাদেশই নয়, এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার সব দেশই ক্ষতির শিকার। কারণ, ইত্যবসরেই কৃষি ও ওষুধ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রয়্যালটি বাবদই প্রচুর অর্থ দিতে হচ্ছে।

(বাকি অংশ আগামীকাল)

উৎসঃ   জনকন্ঠ



জিন পরিবর্তিত খাদ্য

নাদিরা মজুমদার

(গতকালের পর)

হলুদ ও নিম পর্ব ভারতকে দেশজ জ্ঞান সংগ্রহ করে সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রকা- এক উপাত্ত-ব্যাংক তৈরিতে উৎসাহিত করে; ভারত সেইভাবে কাজও করে যাচ্ছে।

চালের কথাই ধরা যাক। তার অবস্থাও ভাল নয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত রাইস টেক নামের এক কোম্পানি সুপরিচিত বাসমতি চালের প্যাটেন্ট পায়; এবং এমনকি জিএম-জাত বাসমতি চালও সৃষ্টি করে; কিন্তু বিক্রি করতে থাকে আসল বাসমতি চাল বলে। রাইস টেকের এই 'চাল' ভারত ও পাকিস্তানকে খুবই চটিয়ে দেয়। দুই দেশ যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ করে বসে। একইভাবে থাইল্যান্ডও তার জেসমীন চালের প্যাটেন্ট চ্যালেঞ্জ করে বসে। ফলে, রাইস টেকের বাসমতি ও জেসমীন চালের প্যাটেন্ট নাকচ করে দেয়া হয়। তবে দেশজ উদ্ভিদসম্পদের প্যাটেন্ট বিতর্ক আরো ঘনীভূত হতে শুরু করে। প্যাটেন্ট অফিস ও ট্রেডমার্ক অফিস রাইস টেকের কুড়িটি প্যাটেন্টের মধ্যে পনেরোটি নাকচ করলেও জিএম-জাত চালের প্যাটেন্ট বজায় রাখে। বাসমতি ও আমেরিকার দীর্ঘ-দানার চালের মধ্যে ডজন পরিবর্তন করে সৃষ্ট চাল, যেমন, রাইস টেক- টেক্সমাতি, জেসমাতি, কাসমাতি ইত্যাদি নানা নামের চাল বাজারজাত করে থাকে। তাছাড়াও 'এই চাল বাসমতি চালের চেয়েও উত্তম' লেখার অধিকার অর্জন করে। এই প্রসঙ্গে আমাদের খাঁটি আমন কি আউশ চাল বা পোলাউয়ের বিখ্যাত কালোজিরার চালের হাল কি, কে জানে! একইভাবে, ডায়াবেটিসের নিরাময়কারক হিসেবে বেগুনগাছ, তেতো উচ্ছে/করল্লা, মালাবার প্লাম বা রোজ অ্যাপল নামে পরিচিত গাছের (গাছের রসের জন্য) প্যাটেন্ট অর্জনের বেপরোয়া প্রচেষ্টাও ভারত আপাতত রোধ করে। ভারতের আশঙ্কা যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের দৃষ্টান্ত ধরে ইউরোপও যদি বেপরোয়া হয়ে ওঠে তো কদ্দিন পর্যন্ত জৈব-দস্যুতা ও দেশজ জ্ঞানের অপহরণ আটকে রাখা যাবে, বলা কঠিন।

জিএম-জাত খাদ্য ও প্রাণীসত্তার পক্ষে যেমন প্রচুর যুক্তি রয়েছে, তেমনি বিপক্ষেও রয়েছে প্রচুর যুক্তি। আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থাসহ 'লেবেলিংয়ের অনুপস্থিতির দরুন, প্যাটেন্টের মাধ্যমে জৈব-দস্যুতা ও দেশজ জ্ঞানের বেআইনী দখলি ছাড়াও রয়েছে পরিবেশসম্পর্কিত ঝুঁকি। যেমন, বি.টি. ডজন সন্নিবেষ্টিত শস্যাদি নিজেদের মধ্যে যে প্রাকৃতিক কীটনাশক বিষ তৈরি করছে, সেই শস্যাদির পুষ্পরেণু ভক্ষণের কারণে 'মর্নাক' প্রজাপতির শুককীটসহ বন্ধুসুলভ আরও অন্যান্য পোকামাকড়ও ব্যাপকহারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ঠিক যেই অবন্ধু শুককীট ও পোকামাকড়কে দমন করতে চাই, কেবল এমন বি.টি.ডজন ডিজাইন আমরা করতে জানি না। ফলে, বন্ধু-অবন্ধু নির্বিশেষে সব শুককীট ও পোকামাকড়কেই বি.টি.ডজন মেরে ফেলে। আবার, জিএম-জাত কীট-নাশকের বিরুদ্ধে পোকামাকড় যে নিজেদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে না, কে জানে! কারণ, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধকৃত ডিডিটি নামক কীটনাশকের বিরুদ্ধে কোন কোন মশা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। তাই বি.টি. ডজনের বিরুদ্ধে কোন কোন পোকামাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললেও তুলতে পারে। একইভাবে, আগাছা-প্রতিরোধক ডজন সন্নিবিষ্ট শস্যাদির ক্ষেত্রে, ক্রস-ব্রীড বা সংকরপ্রজাতির মাধ্যমে আগাছাও 'আগাছা-প্রতিরোধক' ডজনের স্থানান্তর প্রক্রিয়া ঘটিয়ে 'সুপার আগাছা'র জন্ম দিতে পারে। ফলে, আগাছাও 'আগাছা-প্রতিরোধক হবে। তাছাড়াও, জিএম-জাত শস্য খেতের কাছাকাছি জিএম-জাত নয়, এমন শস্যখেত থাকলে- সেই শস্যাদি সংকর প্রজাতি বা ক্রস-ব্রীডের মাধ্যমে জিএম-জাত হতে পারে; হয়েছেও। অনিচ্ছাকৃত হলেও এমন অবস্থায় কৃষককে তখন প্যাটেন্টবিধি লঙ্ঘনের মামলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। জিএম-জায়ান্ট মনস্যান্টো ইত্যবসরেই কৃষকদের বিরুদ্ধে প্যাটেন্টবিধি লঙ্ঘনের মামলা দাখিল করেছে। ডজনের এই অনিচ্ছাকৃত স্থানান্তর বা ক্রস-ব্রীড এড়ানোর একটি উপায় হলো, জিএম-জাত শস্যাদি পুষ্পরেণু উৎপাদনে অক্ষম হবে; আরেক উপায় হলো যে জিএম-জাত এবং অজিএম-জাত শস্য খেতের মধ্যে দূরত্ব এমন হবে, যাকে বাফার-জোন বলা হয়, যেন বাতাসের মাধ্যমে পুষ্প-রেণু বাফার-জোনের সীমানা অতিক্রম করতে না পারে।

তাছাড়াও, আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যের ওপরে জিএম-জাত খাদ্য ও প্রাণীসত্তা নেতিবাচক প্রভাব কতটুকু ফেলতে পারে, সেই সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু আমাদের জানা নেই। তবে সন্নিবিষ্ট জিন এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আশঙ্কার কারণেই তাই সয়াবীণে ব্রাজিল নাটের জিন সন্নিবিষ্টকরণসহ আরো কয়েকটি প্রচেষ্টা র্বজনও করা হয়। তদুপরি, জিএম-জাত খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরে সুদূরপ্রসারী প্রভাবও ফেলে থাকে হয়ত। যেমন, সম্প্রতি ফরাসী বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ইঁদুরকে মনস্যান্টো'র জিএম-জাত ভুট্টা খাওয়ান; বিজ্ঞানীর দলটি দেখেন যে ইঁদুরগুলো, ফলস্বরূপ, টিউমার সমেত কিডনী ও যকৃতের সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এই গবেষণার প্রেক্ষিতে ফরাসী সরকারসহ ইউরোপের অনেক দেশই মনস্যান্টো'র জিএম-জাত খাদ্যের আমদানি আপাতত বন্ধ করে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও মানুষ ও প্রাণীজগতের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখতে বাধ্য করছে। ফরাসীদের গবেষণায় উৎসাহিত বিজ্ঞানীরাও ইঁদুরের ওপরে অনুরূপ গবেষণা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে রুশ গবেষণার শুরু" হবে এবং তাদের গবেষণার চমক হলো যে এটি পরিচালিত হবে 'রিয়েলিটি শো'য়ের কায়দায় এবং পাঁচ প্রজন্মের ইঁদুরের ওপরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হবে। রুশ বিজ্ঞানীদের এমন কায়দা গ্রহণের কারণ হয়ত যে ফরাসি গবেষণালব্ধ ফল প্রবল বাক-যুদ্ধের সূচনা করেছে। ফলে, 'রিয়েলিটি শো' হলে, কারো পক্ষেই সন্দেহ পোষণের খুব একটা অবকাশ থাকবে না।

জেনেটিক প্রকৌশল, মলিকিউলার বয়োটেকনোলজি, জৈব-প্রযুক্তি ইত্যাদি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, প্রযুক্তিটি অতি নবীন এবং বিভিন্ন প্রেক্ষিত ও অবস্থাগত ও বেষ্টিত পরীক্ষাপ্রক্রিয়া, মূল্যমান, গুণ, গঠন ইত্যাদির সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করার কোন ইতিহাস তার নেই, এখনো অর্জন করেনি সে। তদুপরি, উদ্ভিদসম্পদের প্যাটেন্টকরণের ফলে কৃষককে বংশ পরম্পরায় অর্জিত তারই চিরায়ত দেশজ জ্ঞানকে কিনতে হচ্ছে; জৈব-প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল কর্মকা-, তাই গরিব কৃষকের পক্ষে নতুন এই প্রযুতির মালিকানা পেতে বেশ কঠিন হবে। জিএমের আরেকটি বড় সমস্যা হলো- জৈব-বৈচিত্র্যকে সঙ্কুচিত করে আনা; ফলস্বরূপ, রোগ ও পোকামাকড়ের সহজ আক্রমণ উৎসাহিত হবে। জিএম-জাত খাদ্য উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য-ঘাটতি ও ক্ষুধা নামক মহাব্যাধির সমাধান করবে কিনা বলা কঠিন। কারণ, বিশ্বায়িত পৃথিবীতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য থাকলেও খাদ্য ঘাটতি ও ক্ষুধা-বার বার দেখা দিয়েছে, দেখা দেবে। (সমাপ্ত)


nadirahmajumdar@gmail.com


Indira Gandhi packed green revolution with militarisation of the state.It denied the land reforms most essential.Itchanged traditional harvesting and moden farming was tagged with chemicals,frtilizers,machines,big dams,electricity and so on.


Production cost began to multiply intensifying agrarian crisis which resulted in Operation Blue Star,Bhopal Gas Tragedy and Nuclear energy.


Economic problems and the problems of production destroyed productive relations and equations.


Indira did this charishma all on the name of development projecting socialist model.


Enmasse suicide phenomenon in rural peasantry is the best contribution of disastrous green revolution which killed rural India.Killed cereals all the way promoted market linked cash crops introducing starvation  all round.


The killing enhanced with it`s ultimate  transformation into genocide  culture with urbanisation on the name of industrialisation divesting  the manufacturing and excluding the entire toiling masses out of production system.


It resulted in near zero agrarian growth rate as well as zero level industrial growth and the economy simultaneously was tagged with United States of America.


This is the growth story of exclusion and genocide,internal security problems.


This is the growth story of strategic selling off the resources and India becoming US periphery.


The growth saga later was injected with Mandal versus Kamandal war political and the politics became religion.


This religion became the surrogate mother of all reforms to undermine Indian economy all round.


This is the basic theme of first round of Green Revolution started with PL 480 and ended in nuclear alliance with United States of America.


The mandate created to install a default business friendly government to push free inflow of foreign capitals and US weapons,thus,may not stop Monsanto and genetically modified crops to poison Indian people starving for food.


However,ET reports that A government committee may have given genetically modified crops a shot in the arm but the Sangh Parivar allies are in no mood to allow field trials

Bhagwati Prakash Sharma, national co-convenor of Swadeshi Jagaran Manch (SJM), is a busy man these days. On August 19, he will lead a meeting of national leaders of 35 mass or ganizations in Delhi, including farmers, traders and even the BJP's student wing. It's just the beginning. In October, between Dussehra and Diwali, a massive jamboree of over 100 groups will meet in an event styled Swadeshi Sangam. The agenda is wide -from genetically modified (GM) crops to foreign direct investment (FDI) to the World Trade Organization (WTO).

Opposition of monsanto by Swadeshi Sangam sounds like the echo of BJM in opposition to labor reforms.

Result bound to be ditto.

As love jihad turnaround happens to be in vogue.

Meanwhile, Industry body Assocham has pitched for allowing field trials in biotechnology (BT) crops, terming it as a 'pro-poor' step that will help in raising food production to feed the country's rising population.


On July 18, the Genetic Engineering Approval Committee, that works under the Environment Ministry, had given green signal for field trials of genetically-modified rice, mustard, cotton, chickpea and brinjal.


The Associated Chambers of Commerce and Industry of India (Assocham) in a paper titled 'Analysis on GM Crops in India' said, "There is a need for the government to take a pro-poor stand by allowing large-scale production of genetically modified (GM) crops.


"... Develop technologies for long-term agriculture sustainability without considering social discourses which shall hamper food security ambitions to meet growing demands of country's burgeoning population."


The industry body also said that biotechnology is vital for fulfilling the socio-economic needs of the country's growing population.


"Biotechnology applications in agriculture should be a part of the package of solutions to address socio-economic needs of our growing population which is likely to reach 150 crore by next decade," said Assocham Director General D S Rawat while releasing the paper.


With a view to deliver best value of the produce to farmer, the government and the industry should work together to identify high priority crops useful for the country and provide necessary policy support, Rawat added.

Business Standard reports something different:


Three weeks after the Bharatiya Janata Party (BJP) overruled field trials for 15 genetically modified (GM) crops, a group of members of Parliament from BJP and the Shiv Sena are heading to the US on a week-long study tour sponsored by global seed giant, Monsanto. The group departs on Saturday.


The MPs will first attend a 'Farm Progress Show' in Iowa, then visit the Monsanto headquarters in St Louis, Missouri. The trip will cost an estimated $6,000 (Rs 363,540) per head for travel, food and accommodation, according to a Monsanto spokesperson, who confirmed the company would bear these costs.


"In line with industry practice, we have extended invitations to farmers, industry experts, media and members of Parliament across the political spectrum to visit the show and experience for themselves the advances in agriculture all over the world," said the spokesperson. "Parliamentarians with interest in agriculture and seeking to advance their knowledge of agricultural technology, across party lines, responded to the invitation."


On July 29, Environment & Forests Minister Prakash Javadekar overruled the recommendations of the Genetic Engineering Appraisal Committee (GEAC) and put a halt to the field trials of 15 GM crops, including of brinjal and rice, after protests from pro-Rashtriya Swayamsevak Sangh (RSS) bodies, Swadeshi Jagran Manch and Bharatiya Kisan Sangh.


But, the Monsanto spokesperson said, the trip bore no relation to the ruling party's decision to put GM crop trials on hold. The 'Farm Progress Show' is a three-day event that has been held in Iowa since 1953 and attracts thousands of farmers and delegates every year.


"The visit is from August 24 to 30. Monsanto has arranged this visit. We will visit their plant to see the latest technology related to the agriculture sector," Prataprao Ganapatrao Jadhav, the Shiv Sena MP from Buldhana, Maharashtra, said in an interview.


His party colleague in the Lok Sabha, Krupal Balaji Tumane, MP from Ramtek in Maharashtra, confirmed he was part of the group. "Apart from Iowa, we are also scheduled to visit Washington," he said. Tumane and Jadhav said others in the group included two MPs from Andhra Pradesh, one each from Gujarat and Rajasthan and four each from Uttar Pradesh and Bihar.


Others in the group, such as BJP MP from Siwan Om Prakash Yadav and the party's Bulandshahr MP, Bhola Singh, were unavailable for comment.


However, BJP MP from Aligarh, Satish Gautam, claimed he had opted out of the visit. Gautam said party president Amit Shah asked all party MPs in Uttar Pradesh to prepare for the by-elections to a dozen Assembly seats in the state. "There will be a by-election to the Noida Assembly seat and I have decided to devote my time to election work," he said. The by-elections are unlikely before mid-October.


Monsanto declined to reveal the size of the delegation but said invites had been sent to "18 to 20 people". MPs were invited on the basis of their interest in the use of technology in agriculture.


When contacted, a senior agriculture ministry official said the ministry was not aware of the MPs' visit to the US. "If it is a private visit organised by a company for individual MPs, they are not required to keep us in the loop. Such visits need the agriculture ministry's approval only in cases where the government is involved," the official explained.


Earlier this month, junior agriculture minister Sanjeev Kumar Balyan said in reply to a Parliament question in the Lok Sabha that the government policy was to allow GM crops after full scientific evaluation of their bio-safety and impact on the environment and on consumers. This is also BJP's stated position, as stated in its election manifesto.


HIT & TRIAL


2010 Feb: Then environment minister Jairam Ramesh puts commercial release of Monsanto Bt Brinjal on hold; field test for other varieties and crops continue


2012 May: Supreme Court sets up expert panel to review the issue


Aug: Parliament's standing committee on agriculture demands moratorium on field trials of all GM food crops and a complete policy overhaul


Oct: SC's expert panel suggests a moratorium on GM trials; Centre opposes this, puts its nominee on panel


2013 Mar-Jun: Genetic Engineering Appraisal Committee recommends trials for some GM food crops but the then minister Jayanthi Natarajan puts the plan on hold


Jul: SC panel's majority report advises moratorium; govt nominee bats for trials


Aug: Natarajan writes to PMO opposing trials of GM food crops; the then PM and agriculture minister bat for GM


2014 Feb: As environment minister, M Veerappa Moily renews lapsed clearances for food crop varieties


Jul 17: Under Prakash Javadekar GEAC recommends GM trials for 13 food crop varieties


Jul 29: Swadeshi Jagaran Manch and other RSS affiliates object; Javadekar puts final decision on hold


Aug 23: MPs from various parties, including BJP and the Shiv Sena, leave for the US on a Monsanto-funded study tour


PM calls for linking farms to labs

By KA Badarinath Jul 29 2014

Tags: News

Urges agriculture scientists to find technology-based solutions to raise output

Prime minister Narendra Modi pushed for self-sufficiency and export of farm products while seeking to raise farm incomes through scientific innovation and linking farms to labs.


Modi asked agriculture scientists to find technology-based solutions to increase productivity in the shortest possible time through judicious use of limited land resources.


He was speaking on the occasion of the foundation day of Indian Council Agriculture Research (ICAR). The prime minister also emphasised on the need to push up the incomes of millions of farmers to make agriculture a viable and profitable preposition.


Modi's emphasis on higher farm productivity and incomes draw on the government's priority to boosting agricultural growth and ensuring better living standards for farmers and rural folk, besides tackling inflation and ensuring higher productivity.


In the run up to the Lok Sabha elections, Modi had promised to raise farm incomes by at least 50 per cent by removing price-led distortions, scientific intervention and modernising farmland infrastructure.


Modi's emphasis on agri-productivity and exports come in the wake of India's tough stand at the recent ministerial conclave at WTO on farm subsidies and stock limits holdings.


India insisted on a solution to the dispute between developed and developing economies on farm subsidies conditional to signing the trade facilitation agreements.


India is not comfortable with 10 per cent subsidy limit on farm products being insisted upon by the developed economies, particularly the United States.


Modi's push for scientific intervention to raise farm productivity and agricultural incomes also figured prominently at the presidential address by Pranab Mukherjee to the new Lok Sabha.


The government's maiden budget also talked about making farming profitable and competitive by setting up an agriculture technology infrastructure fund. It also announced setting up two more ICAR type institutes in Assam and Jharkhand.


Several other measures, including the setting up of two new agriculture universities, two horticulture universities, the campaign to gauge soil health and mobile soil testing laboratories were announced, apart from a price stabilisation fund.


"We have to prove two points. One, how can we make farmers capable of feeding the whole country and the world? Second, how can we fill the pockets of our farmers by making agriculture more profitable?" Modi told the ICAR gathering.


He also pointed to the fact that India continues to depend hugely on imports for meeting demand for edible oil and pulses despite being an agrarian economy.


"Even today, production of pulses and oilseeds is a big challenge. There is need to increase production of pulses. The poorest of the poor should also get pulses that have high protein. We need to work in this direction," he said.


Modi asked ICAR to set clear cut goals for the next 14 years in the run up to its centenary celebrations. He pointed to global concerns on depleting natural resources and challenges posed by climate change. He also proposed the idea of "blue revolution" in fisheries on the lines of green revolution in the farm sector and white revolution in dairying.


He suggested the setting up of radio stations by agriculture colleges and universities to create awareness among farmers. He also talked about the need to address the challenge of taking farm research from 'lab-to-land' by making efforts to convince farmers about the efficacy of new farm techniques in simple ways.


"Food demand is huge and this is an opportunity for us. The biggest challenge before us is how do we take research work from lab to land. Unless this work does not reach the fields, we cannot get results," he said.


He asked ICAR to digitise database of all agriculture research work in the country during the next four-five years, besides harnessing the potential of Himalayan herbal medicine as China was ahead in this area.


On the impending water crisis, he asked ICAR to explore scientific approach to manage water according to changing weather cycles.

http://www.mydigitalfc.com/news/pm-calls-linking-farms-labs-808



Aug 17 2014 : The Economic Times (Bangalore)

Which Way on GM, PM?

Suman Layak






A government committee may have given genetically modified crops a shot in the arm but the Sangh Parivar allies are in no mood to allow field trials

Bhagwati Prakash Sharma, national co-convenor of Swadeshi Jagaran Manch (SJM), is a busy man these days. On August 19, he will lead a meeting of national leaders of 35 mass or ganizations in Delhi, including farmers, traders and even the BJP's student wing. It's just the beginning. In October, between Dussehra and Diwali, a massive jamboree of over 100 groups will meet in an event styled Swadeshi Sangam. The agenda is wide -from genetically modified (GM) crops to foreign direct investment (FDI) to the World Trade Organization (WTO).

Swadeshi Warriors In each of these, the SJM has scored wins since the Narendra Modi government assumed power on May 26. It seems Sharma and the SJM are now moving in quickly to occupy vacant space -vacated by the now defunct National Advisory Council (NAC), which was almost a personal prelature of Congress president Sonia Gandhi. In the past two months, only the SJM has managed to challenge the almost unquestioned authority of Narendra Modi.

Consider the SJM's recent successes: it has been opposing the Doha round of negotiations at the WTO for sometime now, and it took a BJP-led government to block it, precisely on the points SJM has been advocating. FDI in retail has been another pet peeve and minister of state for commerce and industry Nirmala Sitharaman has ruled out FDI in mul ti-brand retail. But the real deal was GM crops, something the prime minister ap pears keen to push. SJM has been oppos ing GM crops and their field trials too. "If you want to do trials, they must be inside greenhouses," Sharma says.

The Narendra Modi-led government took two steps forward on GM crops in the two months it has been in office. It was forced to take one back after the SJM as well as former BJP ideologue and envi ronmental activist KN Govindacharya raised their hands in protest.

The GM crops issue will test the SJM's will as well as the resolve of this government.

The IB Report Activist organizations like Greenpeace, Vandana Shiva's Navdanya and Suman Sahai's Gene Campaign were named in a report by the Intelligence Bureau. The report's subject line is `Concerted efforts by select foreign-funded NGOs to take down Indian development projects'. The report was leaked soon after the BJP-led National Democratic Alliance (NDA) came into office. It picked on anti-GM crop agitations along with other issues like anti-coal and anti-nuclear movements, and sought to paint these protests as activities controlled by foreign masters that are aiming at slowing down India's growth.

The widely circulated report (ET Magazine also downloaded a copy) instilled some fear, damaged some credibility, but mostly made the Modi government's intentions clear. It wanted to clear impediments coming in the way of its growth agenda.

That was till it faced stiff opposition on GM crops from one of its own. It is not that the SJM has now changed its colours; it has always opposed GM crops. But its pedigree, closeness to the RSS and its mooring in swadeshi philosophy make it a large obstacle on the course adopted by this government on GM crops.

The Genetic Engineering Appraisal Committee (GEAC) that had not met for almost two years met on July 18 (53 days after the Modi government took over) and cleared three applications for import of GM soyabean oil. It also accepted 13 requests for confined field trials of different GM crops. In the earlier government, Sharad Pawar as agriculture minister was a strong votary of GM seeds in India and had often spoken in favour of Bt cotton. On the other hand, Jairam Ramesh as environment minister had announced a moratorium on the field trials of Bt brinjal in 2010 and his successor Jayanthi Natarajan had refused to sign off requests for field trials that were already approved by the GEAC.

The committee thereafter had stopped meeting. Ramesh had queered the pitch further by mandating that each trial must also get a no-objection from respective state governments. When Veerappa Moily took over as the minister, he started clearing the decks for restarting field trials. In February-March 2014 the GEAC revalidated some of its own clearances issued earlier and Moily okayed them.

The issue is also before the Supreme Court (SC) and there was reason to hurry. Gene Campaign, an organization started by geneticist Suman Sahai, had filed a public interest litigation (PIL) in 2004 on this subject.

SC Steps in

Another PIL had been filed later by Aruna Rodrigues and the Supreme Court was hearing the two petitions together -which prayed that the country did not have the wherewithal to deal with the science behind GM crops and field trials should not happen till a proper regulatory mechanism was in place.

The SC had appointed a committee of six experts. Five of them filed a report recommend ing a 10-year moratorium on field trials in September 2012 while the sixth member, RS Paroda (a former director general of the Indian Council of Agricultural Research and a bureaucrat with a long history in government), filed a dissenting report later. The apex court sought the government's response in April 2014.

Sahai told ET Magazine: "We have now moved an application with the Supreme Court asking it to accept the report of the five members of the expert committee that proposed a 10-year moratorium."

Sahai says the BJP election manifesto itself was very cautious. It said: "GM foods will not be allowed without full scientific evaluation on the long-term effects on soil production and biological impact on consumers." The new agriculture minister Radha Mohan Singh had said after taking over that GM crops will be allowed "only if essential".

Genetically Modi-fied?

"You have to ask, who is pushing it," says Sahai, clearly hinting that it is the prime minister who is firmly in the GM court. One does not need to look far for confirmations. The agricul tural group of the Association of Biotechnology Led Enterprises (ABLE AG) comprises compa nies that want to produce and market GM seeds in India. Its chairman Ram Kaundinya was in Ahmedabad last week to speak to the students of the IIM there on biotechnology and GM crops. Kaundinya says: "Gujarat was one of the states that ap proved most field trials of GM crops and backed Bt cotton very strongly and we had strong hopes after this government took over."

ABLE was started by Biocon cofounder Kiran Mazumdar-Shaw for biotech companies and when the agricultural products companies joined up they created the AG within it.

ABLE AG has among its members MNCs like Monsanto, Bayer, BASF, Dow, Advanta and DuPont as well as Indian companies like Mahyco, Rasi Seeds and Shriram Bioseeds. In the wake of the GEAC's approval for field trials of 15 GM crops, Govindacharya tweeted that it was "an anti-national decision". And when environment minister Prakash Javdekar promptly countered that the GEAC approval did not mean a government approval and then later told the SJM members that the approvals have been put on hold, the seed makers were disappointed. The debate on GM crops can go on.

Both sides claim science is on their side.

Kaundinya says: "Gujarat has seen an almost 10-fold increase in production of cotton after it adopted Bt cotton. The results are there for all to see. If you stop trials now you will stop research." Apart from cotton and brinjal, the industry is also working on maize, canola, rice, wheat, potatoes, cauliflowers and some other vegetables.

Sides Face-off

SJM has major issues on the need for farmers to buy seeds every year. Kaundinya tried to allay fears over seeds. Hybrid seeds have to be bought every year and GM hybrid seeds are no different. On the other hand normal seeds known as `varieties' do not need to be procured every year, and GM varieties too are one-time purchases for farmers who can then procure their own seeds from their harvest.

Gene Campaign's Sahai says the GM industry floats two balloons, the science balloon and the hunger balloon. She wishes to puncture both. "What we want is the data," she says. "It is simple. We do not trust the companies so we ask them to show us the data." She laments that even GEAC meeting minutes are now not being made public. Sahai points out that the Gene Campaign PIL was filed in 2004 only after her RTI application seeking data bore no result.

Sharma of SJM draws attention to a recall in 2000, when over 300 food products were found to contain StarLink corn that had not been approved for human consumption, triggering the first ever recall of GM food. It was approved for animal feed only by the US FDA in 1998, but the corn found its way into products for human consumptions including taco shells of Taco Bell. Traces of StarLink -created by a company called Plant Genetic Systems, which had become Aventis CropScience when the incident took place -were detected as late as August 2013 in Saudi Arabia. Sharma agonizes that soon imported GM soyabean oil will be sold in India and in five years GM rice, wheat and vegetables too will reach the market.

He is ready to throw down the gauntlet on this one. The seedmakers wish Modi will pick it up. For the industry worldwide the biggest markets for GM crops are small farmers. That makes India crucial. If they can win here, much more of the developing world will follow.

Bangladesh dares where India fears to tread

After Jairam Ramesh's moratorium on Bt brinjal announced in 2010, the product travelled to Bangladesh.

The country is now rife with debate on whether it did the right thing and if the crop failed or succeeded. The agriculture minister of Bangladesh has even accused pesticide companies of bribing protesters to file court cases against the product.

The seed was developed by Mahyco, the Indian partner of Monsanto, in which Monsanto owns around 25% share. It was donated to public sector partners in India, Bangladesh and the Philippines. In the Philippines too courts have stopped use of Bt brinjal.

In Bangladesh, the Bangladesh Agricul tural Research Institute aided by Cornell University and USAID have developed the seed and around 20 farmers across the country have cultivated the brinjals.

Suman Sahai of Gene Campaign claimed that Bt brinjal has failed in Bangaldesh. On the other hand Mahyco and the International Service for Acquisition of Agri-Biotech and Applications (ISAAA) provided ET Magazine with a CD and a 40-page book documenting the success of the crop.

A June 5 report in UK newspaper The Guardian that claimed to have interviewed 19 out of the 20 farmers who cultivated Bt brinjal said the results were largely mixed, with neighbouring farms in Jamalpur (124 km from Dhaka) showing very different results.

While no clear view can emerge, what is becoming clear again is the markets of South and Southeast Asia remain crucial for the GM crops industry.










পুনর্ভাবনায় পরিবেশের বিজ্ঞান ও রাজনীতি

পার্থ চক্রবর্তী

আরো একটি পরিবেশ দিবস পেরিয়ে যাচ্ছি। একটু ফিরে দেখা, কাটা-ছেঁড়া, পরিবেশের বিজ্ঞান ও রাজনীতি নিয়ে প্রচলিত তত্ত্বের পরিসরকে। রইল প্রথম কিস্তি।



পরিবেশবাদ এখন পৃথিবী জুড়েই রাজনীতির মূলধারায় বয়ে চলেছে। পরিবেশবাদ আজ আমাদের স্কুলপাঠ্যে, যাপিত জীবনে, রাজনৈতিক দর্শনে, রাজনীতির কল্পনায়। সমকালীন পরিবেশের সমস্যার সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ কিংবা সমর্থন এই লেখার উদ্দেশ্য নয়; আমরা পরিবেশকে ঘিরে গড়ে ওঠা ধারণাসমূহ এবং তাদেরকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরিবেশবাদ, আমাদের রাজনৈতিক চর্চা/চর্যায় কিভাবে প্রতিফলিত হয়, তা দেখার চেষ্টা করব। এই লেখায় আমরা পরিবেশবাদের প্রচলিত তত্ত্ব-পরিসরগুলোকে ফিরে দেখব, সমকালীন রাজনৈতিক ভাষ্যের এবং তার অনুসঙ্গে বিজ্ঞানের জ্ঞানের সম্পর্ক দেখার চেষ্টা করব; পরিবেশবাদের ধারণাভূমিকে প্রশ্ন করব, প্রশ্নগুলোকে প্রেক্ষিতে বুঝতে চাইব। কিন্তু কেন এই অনুশীলন? কারণ, পরিবেশবাদের পরিচিত সন্দর্ভ আমাদের কিছুটা সংশয়ী, অনিশ্চিত করে তুলেছে। অনেক ভাবনারা ঘিরে রয় আমাদের; আপাতত আমরা কিছুটা সংক্ষেপিতভাবেই, এই লেখায় পরিবেশবাদের ভাবনার অভ্যন্তরে দুটি প্রশ্নকে, দুটি প্যারাডক্সকে চিহ্নিত করে আলোচনাটা শুরু করতে চাইছি । এই আলোচনা আবার একই সাথে নিজেদের সঙ্গেও।


প্রথম প্যারাডক্স - আমাদের কাছে "পরিবেশ' নামের ধারণাটি আসে এক নেতির মধ্যস্থতায়; পরিবেশকে আমরা বুঝি না-মানুষের এক নৃকেন্দ্রিক ধারণাভূমিতে। পৃথিবীতে যা কিছু না-মানুষ, না-সমাজ, না-সংস্কৃতি ইত্যাদি, তাই হল প্রকৃতি বা পরিবেশ। অন্যভাবে বললে, প্রকৃতি যেন মানুষ/সমাজ/সংস্কৃতি ইত্যাদি বর্গ বা ক্যাটিগরিগুলির অপর; প্রকৃতি আর সংস্কৃতি যেন এক দ্বৈতবাদী জলবিভাজিকায় দুটি পৃথক ধারণাপ্রবাহ। পরিবেশের সমস্যাগুলিও আমরা দেখি এই নির্মিত দ্বিত্ত্বের মধ্যে দিয়ে প্রতিসরিত হয়ে আসা আলোতে। আমরা যেমন জেনেছি যে সংস্কৃতির দূষিত প্রবাহটি কলুষিত করেছে নিষ্কলুষ প্রাকৃতিক প্রবাহটিকে। অপরদিকে এই সমস্যার সমাধানে, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে/সন্দর্ভে, আবার মানুষ/সমাজ/সংস্কৃতিরই হস্তক্ষেপের আবেদন আমরা শুনেছি। যেন প্রকৃতির সাথে আরো বেশী (এবং সঠিক) সাংস্কৃতিক নিবিড়তা, সংশ্লিষ্টতা, প্রকৃতিকে সংস্কৃতির দূষণ থেকে রক্ষা করবে। মানুষই না-মানুষকে মানুষের (অ)মানবিকতা থেকে মুক্ত করবে। আমরা প্রশ্ন করি, প্রকৃতি যদি সংস্কৃতির অপর হয়, তা হলে মানবিক সংস্কৃতি দিয়ে কিভাবে এক না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ হবে? মানবিক সংস্কৃতি কি ভাবে সংজ্ঞায়িত করবে না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ? মানবিক সংস্কৃতি তবে কি আদৌ না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ করতে পারে? তা হলে আমরা কিভাবে ভাবব প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বকে? দ্বিত্ত্বকে কি নতুনভাবে ভাবব, না কি দ্বিত্ত্বের ধারণাটিকেই প্রশ্ন করব, না কি বহুত্বের কথা বলব, না কি দ্বিত্ত্বের ধারণাকে অতিক্রম করে অন্য কোথাও অন্য কোনখানে যাওয়ার কথা ভাবব?


দ্বিতীয় প্যারাডক্স - পরিবেশের অবনমনের বাস্তবতা আমরা জেনেছি বিজ্ঞানের পাঠ থেকে (দূষণ, উষ্ণায়ন, ওজোন স্তরের ফুটো ইত্যাদি), আবার একই সাথে পরিবেশের অবনমনের কারণ হিসেবে বিজ্ঞান/প্রযুক্তিকেই জেনেছি এবং আরো জেনেছি যে এই সমস্যার চিকিৎসাও বিজ্ঞান/প্রযুক্তি দিয়েই হবে। তা হলে আমরা কোন বৈজ্ঞানিকতাকে "সঠিক' বলে ধরব? না কি দু-রকম (না কি অনেক রকম) বিজ্ঞান/প্রযুক্তি আছে? না কি বিজ্ঞান এইভাবেই কাজ করে, সমস্যা তৈরী করে আর তার "সমাধান' করে?


চলতি ধারণার প্রয়োগে পরিবেশবাদ আর বিজ্ঞান


যেহেতু এই লেখা দুটি আপাত বিচ্ছিন্ন প্রশ্নকে ঘিরে, প্রথমেই আমরা পরিবেশবাদ আর বিজ্ঞানকে মিশিয়ে দেব, দেখতে চাইব প্রচলিত ভাবনায় এই দুই বিভেদিত ধারণা কিভাবে মিলেমিশে যায়। যদিও লেখার পরবর্তী অংশে এই দুই ধারণার পৃথকভাবে আলোচনা থাকবে, কিন্তু আমরা দেখাতে চাইব তারা কেমনভাবে অনেকসময়ই মিথোজীবিতায় সম্পর্কিত। নীচের দুটি উদাহরণে আমরা পরিবেশ আন্দোলনের কয়েকটি ধারণাগত অবস্থান ও তার বৈজ্ঞানিক বৈধতার ভিত্তি খুঁজে দেখতে চাইব।


ধারণা ১ – পৃথিবী মা ( mother earth )-এর ধারণা। এই ধারণায় প্রকৃতি যেন এক জড় অচেতন আধার, যার মধ্যে গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ ঠিক মাপে মাপে লেগে আছে; জীবজগৎ যেন এক অপরিবর্তনীয় মাতৃসমা প্রকৃতির কোলে শিশুর মতো লালিত। জীবজগতের সৃষ্টি এবং নিয়তি প্রকৃতি দ্বারা পূর্বনির্ধারিত; মানুষের নির্মম প্রাকৃতিক লুন্ঠন তাই আদতে মাতৃহত্যার সামিল। এই আপাত মরমি মেটাফর অবশ্যই শুধুমাত্র এক অধিবিদ্যা সঞ্জাত ধারণা নয়, আমরা দেখি সে তার বৈজ্ঞানিক বৈধতাও পেয়েছে ইকলজির সন্দর্ভে। এই ধারণার প্রতিবিম্বিত বৈজ্ঞানিক পরিভাষা হল "ইকলজিক্যাল নিচ' ( ecological niche -এর বাংলা কি তবে "বস্তুতন্ত্রের কুলুঙ্গি'? ইকলজিও অবশ্য সব বিজ্ঞানের টেক্সট-এর মতো মেটাফরের মহামারীতে সংক্রামিত); বিজ্ঞানের ভাষ্যেও জীবজগৎকে যেন প্রকৃতির এক কুলুঙ্গিতে স্থান দেওয়া হল। আমরা দেখি এই কুলুঙ্গির ধারণা বিবর্তনবাদেও প্রসারিত, যেখানে তার পারিভাষিক নাম অভিযোজন বা অ্যাডাপটেশন।


ধারণা ২ - আর একটি আকর্ষণীয় ধারণা প্রকৃতির ভারসাম্য ( balance of nature )। এই ধারণায় প্রকৃতি বিভিন্নতায় সমৃদ্ধ এক অত্যন্ত জটিল সংস্থান বা সিস্টেম; এবং সিস্টেমের সামান্য পরিবর্তন হলে তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। প্রকৃতি চলমান পরিবর্তনশীলতার পরিবর্তে যেন কিছু অন্তর্নিহিত সুস্থিত সম্পর্কের মধ্যেই ক্রিয়াশীল। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত অপব্যবহারে এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে; প্রকৃতি এই মানবিক অবিচার সহ্য করবে না, "প্রকৃতির প্রতিশোধ' অবশ্যম্ভাবী, মানবসভ্যতার মৃত্যু আসন্ন। বিজ্ঞানেও ভারসাম্যের ইকলজির ( [equilibrium ecology] ) ধারণায় বৈধতা পেয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্যের রূপক।


দ্বিত্ত্বের বিপরীতমুদ্রা: সংস্কৃতি/প্রকৃতি থেকে প্রকৃতি/সংস্কৃতি


"" In its commonest and most fundamental sense, the term 'nature' refers to everything which is not human and distinguished from the work of humanity" কেট সোপার; হোয়াট ইজ নেচার? কালচার, পলিটিক্স অ্যান্ড দি নন-হিউম্যান


কেট সোপার তাঁর বইটি শুরু করেছেন প্রকৃতির এই সংজ্ঞা দিয়ে যা পশ্চিমে প্রকৃতির ভাবনায় এক আধিপত্যমূলক ধারণা। এই ভাবনা অবশ্যই পশ্চিমে প্রকৃতির একমাত্র ধারণা নয় এবং এই ধারণা আবার শুধুমাত্র পশ্চিমের ভূগোলেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ধারণায় প্রকৃতি কল্পিত হয়েছে মানুষের, মানবিক সংস্কৃতির অপর হিসেবে, আরো অনেক দ্বৈতবাদী ( dualist ) ধারণার আধারে প্রকৃতি/সংস্কৃতির দ্বিত্ত্বে। আধুনিকতার সন্দর্ভে দ্বৈতবাদী ধারণায় মানুষকে আদিম প্রকৃতিকে বশ্যতায়, জয় করায়, নিয়ন্ত্রণে, মনুষ্যত্বের উপযুক্ত করে তোলার তত্ত্বায়ন হয়েছে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ, উৎপাটন এবং ধ্বংস তাত্ত্বিক বৈধতা পেয়েছে। সমাজতাত্ত্বিকরা পরিবেশবাদের ইতিহাসের আলোচনায় আমাদের জানিয়েছেন পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রকৃতির ওপর আধিপত্যকামিতার শিকড় সম্ভবত ছড়িয়ে আছে আরো প্রাচীন ঐতিহাসিক মুহূর্তে। প্রাক-আধুনিক যুগেও ইউরোপে প্রকৃতির ধ্বংসের তত্ত্বায়ন উঠে এসেছিল জুডিয়-খ্রীষ্টীয় নৃকেন্দ্রিক ধারণার মধ্যে থেকে--যে ধারণায় ঈশ্বর সৃষ্টি করেছে আলো আর অন্ধকার, গ্রহ-নক্ষত্রের সাথে পৃথিবী এবং তার সাথে সেই পৃথিবীতে সকল গাছপালা, পশুপাখি আর মানুষ (পুরুষ অ্যাডাম)। ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষের (পুরুষের) অবয়ব/শরীর তৈরী হয়েছে ঈশ্বরের আদলে, যেখানে মানুষই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আর না-মানুষের জন্ম মানুষের ব্যবহারের জন্য; ফলত, না-মানুষ প্রকৃতির মানবিক লুন্ঠন এক বৈধতা খুঁজে পেয়েছিল। পাশ্চাত্যের খ্রীষ্টীয় সংস্করণ পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে নৃকেন্দ্রিক ধর্মবিশ্বাস । ভারতবর্ষেও ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ভাষ্যে প্রকৃতির ধ্বংসের বৈধতা নির্মাণ করা হয়েছিল ঈশ্বরের ইচ্ছাপূরণে মানবিক কর্মকাণ্ড হিসেবে। মহাভারতে যমুনানদীর তীরে (আজকের দিল্লি) খাণ্ডববন দহন করে অগ্নিদেবের খিদে মেটানোয় যথেচ্ছ বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃষিসভ্যতা পত্তনের গল্প আমরা তো শুনেছি


ইউরোকেন্দ্রিক আধুনিকতা, প্রকৃতির এই খ্রীষ্টীয় ধারণায় এক বিচ্ছেদ নিয়ে আসে, যাকে "বিজ্ঞানের বিপ্লব'-ও ( [scientific revolution] ) বলা হয়। ধারণাগতবভাবে এই বিপ্লবে অবশ্য না-মানুষ প্রকৃতির ধ্বংসের খ্রীষ্টীয় কাঠামোটি থেকেই গেল, প্রকৃতির সৃষ্টিতত্ত্বের নতুন সন্দর্ভ লেখা হল। বিজ্ঞানের বিপ্লবে প্রথমসারির অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন রেনে দেকার্ত, যিনি খ্রীষ্টীয় প্রকৃতিকে পুন:সংজ্ঞায়িত করলেন মন/শরীরের দ্ব্যনুকে। প্রকৃতি হল সেই শরীর যাকে মানুষের মন পর্যবেক্ষণ করতে পারে, পাঠ করতে পারে। এই পাঠে মনই প্রাথমিক বা এসেন্স আর শরীর শুধুমাত্র তার অংশসমূহের এক সম্মিলনী। এই পাঠ একভাবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নির্মাণকে বাতিল করে প্রকৃতিকে যন্ত্রের রূপকে, যন্ত্রাংশের রূপকে দেখতে শেখার পাঠ। কার্তেসীয় ধারণায় প্রকৃতি এক বস্তু বা অবজেক্টে খর্বিত হল। অন্য এক বিপ্লবী ফ্রান্সিস বেকন তো প্রকৃতিকে মানুষের দাসীতে রূপান্তরের দাবী তুললেন । পশ্চিমি আধুনিকতার সন্দর্ভে প্রকৃতি/সংস্কৃতি তাই শুধুমাত্র দুটি পৃথক বর্গ নয়, তারা এক ক্রমবিভক্ত কর্তৃত্বের ভিত্তিতে সংগঠিত। ভাবনার এই কাঠামোকে আমরা এঁকেছি গাণিতিক লব/হর-এর রূপকে (চিত্র ১, বাম প্যানেল; যেখানে লব এবং হর যথাক্রমে প্রাথমিক ও গৌণ বর্গ)।


প্রকৃতির যান্ত্রিক রূপকে কার্তেসীয় খর্বীকরণ ( [Cartesian reductionism] ) এবং তার পরিব্যাপ্ত বিচ্ছিন্নতা ও হতাশা পশ্চিমি চিন্তায় নানান প্রতিক্রিয়ায় আকার পেতে থাকে। খ্রীষ্টীয় বিশ শতকের ষাটের দশক থেকে আধুনিকতার অন্তর্বীক্ষণের বিভিন্ন ধারার মধ্যে পরিবেশচিন্তা ও আন্দোলনেরও সূচনা হয়েছে এবং ক্রমেই তা অন্যত্র ছড়িয়েও পড়েছে। এই অন্তর্বীক্ষণের এক প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্ব্যনুককে উলটে দেবার কথা এসেছে, প্রকৃতিকে এসেন্স হিসেবে ভাবার চেষ্টা হয়েছে, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার কথা হয়েছে (চিত্র ১, ডান প্যানেল)।




মানুষকে কার্তেসীয় নৃকেন্দ্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে প্রকৃতি-কেন্দ্রিক ( ecocentric ) ধারণায় অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি আজকের পরিবেশবাদের স্লোগান। মানুষকে প্রকৃতির "নিয়ম' মেনে তার মতো হয়ে উঠতে হবে ( [back-to-the-land, deep ecology] ) অথবা বৈজ্ঞানিক সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে তাকে মানুষের নাগালের, আয়ত্বের বাইরে রাখতে হবে অথবা যে পরিবেশে মানুষ এখনো বসতি গড়ে নি, তাকে সেইভাবেই পৃথক করে রাখতে হবে ( [wilderness idea] ) । প্রকৃতি-কেন্দ্রিকতায় নিহিতার্থে মানুষের কর্মপরায়ণতাই যেন অ-প্রাকৃতিক; তাই প্রকৃতিকে মানুষ থেকে আলাদা করতে হবে, মানুষকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির সংরক্ষণ করতে হবে। জীববৈচিত্র ( biodiversity ) সংরক্ষণ করতে হবে, তদের মানুষের এক্তিয়ারের বাইরে রাখতে হবে, সংরক্ষণের রাজনীতি করতে হবে। পশ্চিমে/উত্তরে বামপন্থী উদারনৈতিক রাজনীতিতে এই সংরক্ষণবাদ সক্রিয়; পশুপ্রেমী, ভেগান, নিরামিষী রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা আজ ক্রমবর্ধমান।


আত্মসমীক্ষায় তিন উদাহরণ


প্রকৃতি/সংস্কৃতির দ্ব্যনুকের ধারণা থেকে আমাদের রাজনৈতিক সৃজন ও অবস্থান কখনো সমস্যায়িত এবং কখনো কখনো কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনটি পৃথক উদাহরণে প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের ভাবনা কিভাবে আমাদের চর্চা আর চর্যায় জড়িয়ে যায়, তা এবার বুঝতে চেষ্টা করি। প্রথম উদাহরণে আমরা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াকে ফিরে দেখব, দ্বিতীয়টিতে এক পরিবেশবাদীর ভাবনার বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করব আর শেষটিতে শুধুমাত্র একটি আকাদেমিক ভাবনা উদ্ধৃত করব।


উদাহরণ ১ - আমরা মিজো পাহাড়ের দুর্ভিক্ষের খবর জেনেছি, জেনেছি তার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা, দেখেছি ১৯৫৯-এর দুর্ভিক্ষের পরে "মিজো ন্যাশনাল ফেমিন ফ্রন্ট' থেকে "মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট'-এর রাজনৈতিক পালাবদল, লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মিজো রাষ্ট্রের দাবীর আন্দোলন। আমরা বলি, লিখি আদিবাসী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা- প্রগতিশীল রাজনীতিক হিসেবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের প্রতি সমব্যাথী হই, তাঁদের প্রতিবাদের শরিক হই। কিন্তু কেন এই দুর্ভিক্ষ? কেন প্রতি পঞ্চাশ বছরে আদিবাসী মানুষেরা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েন? এর একটা বায়লজিক/ইকলজিক উত্তর তাঁরাও জানেন- তাঁরাই আমাদের জানিয়েছেন, প্রতি অর্ধশতাব্দীতে মিজো পাহাড়ের বাঁশবনে ৩/৪ মাসের জন্য একবার করে ফল আসে। এই ফল মাটিতে পড়ে নতুন বাঁশগাছের, বাঁশবনের জন্ম দেয়। আবার সেই ফল খেয়েই প্রতি ৪৮ বছরে একবার করে বাঁশবনের ইঁদুরের অসম্ভব দ্রুত কিন্তু ক্ষণস্থায়ী বংশবৃদ্ধি হয়। আর বাঁশের ফলনের পর ইঁদুরের খাবারও ফুরিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলবেন যে এই প্রাকৃতিক নিয়মে বাঁশগাছ আর ইঁদুরের সহাবস্থান তাদের দুই প্রজাতির বেঁচে থাকা এবং বিবর্তন নিশ্চিত করে। এবার যখন আদিবাসী মানুষ এই প্রাকৃতিক "ভারসাম্য' নষ্ট করে চাষবাস শুরু করলেন তখন লক্ষ লক্ষ ইঁদুর আর ৩/৪ মাসের বাঁশফলের ফলনের পরে মারা গেল না - তারা দিব্যি মানুষের তৈরী ধান খেয়ে বহাল তবিয়তে বেঁচে রইল। মিজো পাহাড়ের মানুষ এবার এক ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটে পড়লেন, দুর্ভিক্ষের কবলে পড়লেন। সমস্যা হল এই ইকলজির রাজনীতিতে আমরা শিকারকে জানি কিন্তু শিকারীকে চিনি না; আমাদের চেনা শিকারীরা এখানে নেই, এখানে পুঁজি নেই, কর্পোরেট স্বার্থ নেই, মডার্নিজম নেই, এমনকি রাষ্ট্র-ও সেভাবে নেই। সঙ্গতভাবেই মনে হয় যেন আদিবাসীরা নিজেরাই তাঁদের অবস্থার জন্য দায়ী। তাঁরাই যেন প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করেছেন, তাকে ধ্বংস করেছেন।


উদাহরণ ২ - পরিবেশবাদী ভাবনা কিভাবে এক স্ববিরোধী রাজনৈতিক ভাষ্যে আটকা পড়ে, ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে তা আমরা বন্দনা শিভার উদাহরণে বুঝতে চেষ্টা করব। খাদ্য নিরাপত্তার পক্ষে এবং কৃষিতে বহুজাতিক পুঁজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বন্দনা শিভার ক্রিটিক আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শিভার পরিবেশবাদের পাঠ একদিকে যেমন র‌্যাডিকাল লোকায়তিক কিন্তু কখনো কখনো তাঁর স্বদেশী জাতীয়তাবাদী অবস্থান আমাদের সংশয়ী করে। তিনি যেমন লোকায়তিক অবস্থান থেকে বিদেশী পুঁজির বিরুদ্ধে দেশীয় প্রচলিত কৃষিকে দাঁড় করান, আবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগ্যানাইজেসনের বিরুদ্ধে স্বদেশিয়ানার পক্ষে দাঁড়ান। তাই ১৯৯৮ সালের বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক স্বদেশিয়ানার ধারণা বন্দনা শিভার কাছে বিশ্বায়িত পুঁজির বিরুদ্ধে আকর্ষণীয় হাতিয়ার বলে মনে হয়। একই ভাবে গত দু'শ বছরে পৃথিবী জুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে তিনি কৃষি সভ্যতার অন্তর্নিহিত প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙ্গে পরার যুক্তি দেন । এই যুক্তির অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে তিনি বিজ্ঞান/প্রযুক্তিকে পরিবেশের সকল সমস্যার কারণ স্বরূপ কাঠগড়ায় দাঁড় করান, আবার একই সাথে পরিবেশের সমস্যার ব্যাখ্যায় বৈজ্ঞানিক তথ্য/তত্ত্ব ব্যবহার করেন। এমনকি যখন "স্টোলেন হারভেস্ট' বইতে ট্রাডিশনের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন - প্রদীপের সরষের তেলের ধোঁয়া এনভিরনমেনটাল পিউরিফায়ার, তখন তিনি এক যৌক্তিক বিজ্ঞানবাদকেই বৈধতা দিয়ে দেন।


আবার পরিবেশ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিবেশবাদ স্বদেশী/সংরক্ষণবাদের সাথে ধারণাগতভাবে জীববৈচিত্র রক্ষার কর্মকাণ্ডে মিশে যায়। এই ধারণাতেও এক অপরিবর্তনশীল প্রকৃতির কল্পনা করা হয় যেখানে বহুবিচিত্র জীবজগতের অস্তিত্ত্ব যেন শুধুমাত্র মানুষের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমিত। এই ধারণায় স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়ে যায় ইকলজির বিবর্তনের সম্ভাব্যতার কথা, ইকলজির চলমান গতিশীলতার কথা। বাদ পড়ে যায় সেই সব জীবাশ্মের কথা যারা আমাদের অন্তত কিছুটা দুর্বলভাবে হলেও জানিয়েছে যে বিবর্তনের ইতিহাসে পৃথিবীতে মানুষ আসার আগেই ৯৯.৯ শতাংশের বেশী জীবকূল লুপ্ত হয়ে গেছে। লক্ষ বছরের প্রাণের ইতিহাস থেকে সরে এসে আমাদের সন্নিহিত ইকলজির দিকে ফিরলেও জীববৈচিত্রের ধারণা সমস্যায়িতই থাকে, এমনকি উলটেও যায় কখনো। আমরা দেখতে পাই, আজকের জীববৈচিত্র শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফল নয়, এটি ভীষণভাবেই মানুষের কার্যক্রমের ফসলও। মনস্যান্টো বা ডিউপন্ট-এর কর্পোরেটীকরণের অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের "স্থানীয়' পশু-গাছপালা বিশ্বায়িত হয়েছে, সংস্কৃতিতে আত্তীকৃত হয়েছে। আলু, টমেটো, তেলাপিয়া, কাঁচালঙ্কা তবে কি প্রাকৃতিক, না কি সাংস্কৃতিক? যখন শিভা দেশীয় (প্রাকৃতিক) বীজ-ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার কথা বলেন, তখন কোনটা দেশী আর কোনটা বিদেশী বীজ, কি ভাবে তা নির্ধারিত হবে?

শিভার পরিবেশবাদের আলোচনায় সম্ভবত সবচেয়ে হতাশাজনক প্রবণতা হল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অসম্পূর্ণ তথ্যের পরিবেশন। তিনি "স্টোলেন হারভেস্ট' বইয়ে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত সয়াবীনের আলোচনায় মন্তব্য করেন -" infants fed with soy-based formula are daily ingesting a dose of estrogens equivalent to that of 8 to 12 contraceptive pills' । রিচার্ড লিয়নটিন এই বইয়ের আলোচনায় দেখান, শিভা যে লেখা থেকে এই তথ্য পেয়েছেন, সেই লেখাতেই স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে এই হরমোন আদতে স্টেরয়েড নয় এবং মানবশরীরে তার সক্রিয়তা অত্যন্ত সীমিত (লিয়নটিন, ২০০০ b )।


সমকালীন পরিবেশবাদে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তার উৎপাদিত জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অরগ্যানিজম (জিএমও) আরো একটি বিসম্বাদী পরিসর। পরিবেশবাদীদের বায়লজির প্রসঙ্গে জিএমও সম্পর্কিত মূল আপত্তি সবসময়ই থেকেছে প্রকৃতির "স্বাভাবিক' বংশগতির নিয়ম ভেঙ্গে তার ম্যনিপুলেশন করানোর মধ্যে। সমস্যা হল এই ক্রিটিক সংজ্ঞার্থেই কৃষিরও ক্রিটিক। ইতিহাসের প্রথম চাষ এবং পশুপালনের দিন থেকেই মানুষ জীবজগতকে জিনগতভাবে পরিবর্তন ও নির্বাচন করে এসেছে। একভাবে কৃষি আর গৃহপালনের ইতিহাস তো জিনের ম্যানিপুলেশনের "অস্বাভাবিক' ইতিহাস। আজকের চাষবাস হাজার বছরের জেনেটিক নির্বাচন আর তাদের সংকরে তৈরী হওয়া এবং কোন যুক্তিতেই এই নির্বাচন আকস্মিক নয়; মানুষের সক্রিয় ও সুচিন্তিত অংশগ্রহণের (এক্সপেরিমেন্ট?) মধ্যে দিয়ে এই সব হাইব্রীড তৈরী হয়েছে। কৃষি তো শুধুমাত্র "কাজ' নয়, কৃষি এক মানবিক সংস্কৃতিও (হয়ত, ইংরেজি এগ্রিকালচার কথাটা এখানে বেশী উপযুক্ত); জিএমও সৃষ্টি করা রামা কৈবর্ত্ত, রহিম শেখ, গফুর মিঞা কিংবা উপেন আর তাদের পূর্বপুরুষ/নারীদের সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা এক অনুপম (বি)জ্ঞান।


তা হলে কি আমরা জিএমও -কে বুঝছি, ভাবছি? প্রশ্নাতীতভাবেই কর্পোরেট লালিত বিটি-তূলো চাষ আর কৃষক-কৃষকীর (আত্ম)হত্যার সম্পর্ক প্রথাগত কৃষিসংস্কৃতি থেকে ভিন্ন; শিভা আমাদের দেখিয়েছেন কৃষক-কৃষকীর মৃত্যুতে কর্পোরেট পুঁজির আয়োজন, অংশগ্রহণ আর সম্পাদনের সক্রিয় ভূমিকা। আমরা এখানে শিভার ভাবনাকে আরো একটু প্রসারিত করতে চাইব; আমাদের ভাবনায় জিএমও শুধুমাত্র এক "অস্বাভাবিক' প্রাণ নয়, জিএমও-কে আমরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-অর্থ ও অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত আহরণ-বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার ( intellectual property rights ) ইত্যাদির নেটওয়ার্কে গড়ে ওঠা উৎপাদন হিসেবে দেখছি। এই লেখার পরিসরে জিএমও সম্পর্কীত ভাবনার বিস্তারিত আলোচনা করছি না, পরের অংশে আমরা শুধু বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রসঙ্গটি ছুঁয়ে যাব।


উদাহরণ ৩ - প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্বিত্ত্ব আর বৈজ্ঞানিক নির্ধারণবাদের এক (অ)সুন্দর সমাপতন হতে দেখি বিজ্ঞানের ইতিহাসের ভাষ্যে। ভারতবর্ষে এখন তার বৈজ্ঞানিক অতীতকে খোঁজার চেষ্টায় অনেক বই লেখা/সম্পাদনা হচ্ছে। বি ভি সুব্বারায়াপ্পা সম্পাদিত "মেডিসিন অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস ইন ইন্ডিয়া' ( Volume IV, part 2 of History of Science, Philosophy and Culture in Indian Civilization ) ম্যাগনাম ওপাসটি সুব্বারায়াপ্পা শুরু করছেন এই ভাবে- " The struggle for existence and the survival of the fittest that characterised the biological evolution leading to the emergence of man, were external and internal alike. The incessant human struggle, from pre-historic times to the present, for existence as a distinct biological species overcoming often the hostile environment on the one side and, on the other, the diseases that afflict him both externally and internally has been indeed a fascinating story'. সুব্বারায়াপ্পার ভাষ্যে "আমাদের' বিজ্ঞানের ইতিহাসও পশ্চিমের মতোই প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে, তাকে পরিবর্তন করে এক স্থূল ডারউয়িনিয় বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে "এগিয়েছে'। লেখার শেষে এই প্রাচ্যবাদী ( orientalism ) নির্মাণকে আমরা আবার ফিরে দেখব।


*(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)


**(লেখাটি তেপান্তর পত্রিকায় পূর্বপ্রকাশিত)



মন্তব্য:


১। এই লেখায় যা সরাসরি নেই - প্রথমত, পরিবেশের রাজনীতিতে পুঁজিবাদ ও পরিবেশের অবনমনের সম্পর্ককে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রশ্নগুলি। পুঁজিবাদী কনজামসনের উদ্বৃত্ত হিসেবে যদি পরিবেশের অবক্ষয় হয়ে থাকে, তা হলে মেইনস্ট্রীম পুঁজিবাদ পরিবেশ শোধন নিয়ে আজ এত উৎসাহিত কেন? এই অনুরাগ কি পুঁজিবাদের "মানবিক মুখ' না কি নমনীয় পুঁজিবাদ এক নতুন বাজারের সন্ধান পেয়েছে? সবুজ-প্রযুক্তি কি পুঁজিবাদী ইউটোপিয়ার নতুন আবিষ্কার? জিজেক যেমন পুঁজিবাদের নমনীয়তার কন্টেক্সটে বলবেন, কুমেরুর বরফ গলে গেলে পুঁজি সেখানে হয়তো একদিন রিয়েল এসটেট-এর দালালি শুরু করবে। তাই পরিবেশ-ব্যবসায়ী আল গোর যখন আমাদের "পীড়াদায়ক সত্য'-এর গল্পে বলেন পৃথিবীর উষ্ণায়ন (রাজ)নৈতিক প্রশ্ন, এবং বলে নোবেল প্রাইজ পান, তারপর প্রাইজ পেয়ে বলেন পরিবেশের রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল "কার্বন ক্রেডিট' প্রণয়ন করা, তখন আমরা সংশয়ী হই, ক্রিটিক্যাল হই। ক্রিটিক্যাল হওয়া আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে দাঁড়ায় (সম্পূর্ণ বক্তৃতাটি এখানে দেখুন- http://nobelprize.org/nobel_prizes/peace/laureates/2007/gore-lecture_e

n.html ) । দ্বিতীয়ত, প্রকৃতি-ভাবনার কাঠামোয় এবং পরিবেশ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে নারীবাদী বিসম্বাদী ক্রিটিক। সরাসরি উদ্ধৃত না করলেও নারীবাদী ভাবনা অনেকসময়ই ছুঁয়ে থেকেছে এই লেখাকে। শেফালি মৈত্রের "নৈতিকতা ও নারীবাদ' (২০০৩) বইতে "নারী-নিসর্গনীতি' প্রবন্ধটি নারীবাদী পরিবেশ ভাবনার একটি সুন্দর সারসংক্ষেপ।


২। প্রকৃতির ধ্বংসের ইতিহাসে খ্রীষ্টীয় ভাবনার প্রভাব নিয়ে লিন হোয়াইটের ( 1967 ) বহুল পরিচিত " The Historical Roots of Our Ecological Crisis' Science 155, 3767-3772. পশ্চিমে, বিশেষত আমেরিকায় হোয়াইট ও অন্যান্যদের চিন্তা কিভাবে পরিবেশবাদের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে, তার আলোচনায় দেখুন জন মেয়ার (২০০১)। এই বিষয়ে একটি সমন্বিত সাম্প্রতিক লেখা, Phillip Pattberg ( 2007 ), " Conquest, Domination and Control: Europe's Mastery of Nature in Historic Perspective', Journal of Political Ecology, 14, 1-9.


৩। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কৃষিসভ্যতা পত্তন "আদিবাসী' মানুষ আর তার সভ্যতার পতনের ইতিহাস। এই পতনের ইতিহাস সম্পৃক্ত হয়ে আছে বনাঞ্চল তথা প্রকৃতির ধ্বংসের ইতিহাসে (মাধব গ্যাডগিল ও রামচন্দ্র গুহ (১৯৯৩))।


৪। পশ্চিমি ভাবনায় প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের ইতিহাস ও তার বিশ্লেষণ করেছেন অনেকেই। এঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী ক্রিটিক ডোনা হারাওয়ে, ভ্যাল প্লামউড, কেট সোপার। নৃতত্ত্বের প্রেক্ষিতে ব্রুনো লাতুরের (১৯৯৩) দার্শনিক বিশ্লেষণ; প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের সর্বব্যাপী ও অত্যধিক প্রয়োগের একজন ক্রিটিক জন মেয়ার (২০০১)।


৫। পরিবেশবাদের বিভিন্ন ধারার তথ্য রামচন্দ্র গুহ-র "এনভিরনমেন্টালিজম: এ গ্লোবাল হিস্টরি' থেকে অনুসরণ করা হয়েছে।


৬। বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দেখুন বন্দনা শিভার " Power Shift in India'http://www.yesmagazine.org/article.asp?ID=841 । জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে শিভা একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন- In India, 1800 is the watershed for the consolidation of colonial regimes. For centuries before 1800 our population had been stable. When you depend on the land, you know there are five people who can be supported. You work your society out so you have five. When you are selling your labor power on an uncertain basis, in an unstable wage market, you know that having ten is better than having five. So dispossession from the Earth's natural wealth is at the root of instability and population growth. সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি এখানে দেখুন-http://www.yesmagazine.org/article.asp?ID=570

http://www.guruchandali.com/default/2010/06/06/1275796046259.html#.U_psXMWSxJk





৫ই জুন, ২০১০


প্রকাশঃ 06 June 2010 09:17:26 IST #


No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...