গুজরাটে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ও রাজনীতির জটিল সম্পর্কের খোঁজ করেছেন এক বিদেশি গবেষক৷ কতটা পারলেন ? খতিয়ে দেখলেনসব্যসাচী ভট্টাচার্য
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, দাঙ্গার দ্বারা রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা যায় কি না এই এক্সপেরিমেন্ট চলছে৷ এই পরীক্ষার ফল এখনও জানা যায়নি, কিন্ত্ত ল্যাবরেটরিতে যেমন এক্সপেরিমেন্ট-এর জন্য জীবহত্যা করা হয় তেমনই চলছে রাজধানীর রাস্তায় মানুষের প্রাণ নিয়ে৷ পশ্চিম এশিয়ায় অনেকগুলি দেশে অনুরূপ মোড় নিয়েছে রাস্তার রাজনীতি৷ প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিজেদের দেশে রাস্তার রাজনীতি এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, যে নিয়ত আশঙ্কা হয় যে দাঙ্গাবাজরা শীঘ্রই মাঠে নেমে পড়বে৷ এই পরিস্থিতিতে দাঙ্গা ও রাজনীতি সম্বন্ধে ওয়ার্ড বেরেনশট-এর লেখা বইটি নিতান্তই প্রাসঙ্গিক৷
২০০১ সাল থেকে বেরেনশট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সম্বন্ধে গবেষণা শুরু করেন৷ ২০০২ সালে ঘটল সবচেয়ে কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ তিনি ২০০৫-০৬ সালে দাঙ্গা বিধ্বস্ত আমেদাবাদে বাস করেছেন, গুজরাটি ভাষা শিখেছেন এবং গত কয়েক বছর দাঙ্গাপীড়িত অথবা দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের কাছ থেকে দাঙ্গার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ অনেকের নাম তিনি প্রকাশ করতে অপারগ, কেননা তাঁদের বিপদ ঘটতে পারে৷ তিনি লিখছেন যে, এই বই তার পক্ষে লেখা অসম্ভব হত যদি না 'অনেক মানুষ তাদের জীবনে আমাকে প্রবেশ করতে দিত'৷
যদিও সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে বেরেনশট নিজেকে প্রয়োজনীয় নিরপেক্ষতার দূরত্বের গণ্ডির মধ্যে রাখতে চেষ্টা করেছেন, তবু এটা স্পষ্ট যে দলীয় বিবাদের বাইরে থাকলেও তিনি নৈতিক বিতর্কের বাইরে অবস্থান করেন না৷ তিনি আশা করেন যে তার এই বইটি ক্রুদ্ধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে, কেবলমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করার অভ্যেসের পরিবর্তে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার পৌনঃ পৌনিক ধারা কী কারণে উদ্ভূত হয়েছে তার বিচার বিবেচনা করতে সাহায্য করবে৷ সবচেয়ে ভালো লাগে এই দেখে যে এই সমাজবিজ্ঞানী প্রথাগত গবেষণার বাইরে প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে সমাজ এবং মানুষের দিকে তাকিয়েছেন৷ 'আমি মহল্লার নেতাদের সঙ্গে সরকারি অফিসে যেতাম, আমি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়েছি, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে চা নাস্তা করেছি, সন্ধ্যায় পথের ধারে পাথরের বেঞ্চে বসে বন্ধু-প্রতিবেশীদের কাছে স্থানীয় গুন্ডাদের কীর্তি সম্বন্ধে গপ্পো শুনেছি , আবার সাংবাদিক, সরকারি অফিসার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের ইন্টারভিউ করেছি'৷
মোটামুটি বইটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ প্রথম, সমাজ এবং সরকারের মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয়৷ দ্বিতীয়, প্রাত্যহিক জীবনে সরকারে সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং তৃতীয়, মধ্যস্থতা অথবা দালালি এবং রাজনীতি৷
কিন্ত্ত এই সব শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে যে এ সব বাঁধা বুলি, অধ্যাপকেরা যা হরদম আওড়ে থাকেন৷ কিন্ত্ত গবেষণার ফল ধীরে প্রকাশ পায় লেখকের প্রত্যক্ষ নৃতাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার মধ্যে৷ যেমন তৃতীয় পরিচ্ছেদ, 'চামচাদের আবির্ভাব'৷ একজন স্থানীয় মোড়ল ও তার অনুগত কয়েকজন সারা দিন কী করে লেখক তালিকাবদ্ধ করেছেন৷ এদের কাজ হল মূলত দালালি --- অথবা মধ্যস্থতা শোনায় ভালো৷ মধ্যস্থতা দরকার দুই পক্ষের মধ্যে --- এক পক্ষে সাধারণ মানুষ , অপর দিকে হাসপাতাল, ইস্কুল, মিউনিসিপ্যালিটি, রেশনের দোকান, ইত্যাদির কর্তৃপক্ষ৷ অনেক সময়ে কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত, দু'জন স্থানীয় মানুষের সম্পত্তির বিবাদ, কিংবা বিয়ে-সাদি নিয়ে গোলমাল, কিংবা ভাড়াটে উচ্ছেদ এ সব ব্যাপারেও মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়, তবে এ সব সংখ্যায় কম৷ আসলে দালালির কাজটা হল সরকারি বা প্রায়-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ-স্থাপন এবং তাদের যে জনসেবা দেয় সাধারণ মানুষকে সেটা পাইয়ে দেওয়া৷ এ জন্য মধ্যস্থ সর্বদা নানা সার্টিফিকেট লেখে, চিঠির মুসাবিদা করে দেয়, যোগাযোগ করে দেয় ইত্যাদি৷ এবং চামচারা নীচের মহলে মধ্যস্থতা করে৷
এই ছবিটা আমরা হাড়ে হাড়ে চিনি সুতরাং এই পর্যন্ত গবেষণা জলবত্ তরলং৷ কিন্ত্ত এই চমত্কার ব্যবস্থা আমেদাবাদে অথবা অন্যত্র এমন জবরদস্ত হয়ে বসল কী ভাবে? লেখকের উত্তর এই: গণতন্ত্রের মহিমায় জনকল্যাণ সরকারের কর্মসূচীতে ঢুকেছে৷ কিন্ত্ত জনসংখ্যা ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের সংখ্যার তুলনায় জনসেবার পরিকাঠামো ও অর্থব্যয় এখনও অতি সামান্য৷ সে জন্য অর্থব্যয় করতে সরকার অনিচ্ছুক না হলেও অপারগ৷ সুতরাং জনকল্যাণের দৌলতে যা বিতরিত হয় জনসাধারণের কাছে তার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেক সময় সব লোক সেটা পায় না, কেউ কেউ পায়৷ ঠিক যেমন বাজারে কোনও মাল না পাওয়া গেলে ব্ল্যাক মার্কেট হয়, তেমনই অবস্থা৷ অভাবের দেশে সকলেই যদি প্রাপ্য না পায় তবে কে কে পাবে এটা মধ্যস্থতার দ্বারা নির্ণীত হয়৷
অনেক সময় আমরা ইউরোপ আমেরিকা ইত্যাদি নাম আওড়ে বলি যে সেখানে এই রকম দালালি তো নেই৷ তার মানে কি সাহেবরা এ সব নীতি -বিগর্হিত ব্যাপারের বিরুদ্ধে, তাদের আমাদের চেয়ে উচ্চতর নীতিবোধ রয়েছে? তা নয়, তাদের দেশে এমন অভাবটা নেই, জনসেবার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত, পাইয়ে দেওয়ার দালালদের জায়গা বিশেষ নেই, এবং এই ব্যবস্থা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বলে লোকেরা সাময়িক অভাব হলেও দালাল-চামচাদের দেখা পায় না৷ ও সব দেশে আরও উঁচু স্তরে নীতিবিহীন কাজ যথেষ্ট চলে, যেমন ব্যাঙ্ক ও বড়ো মাপের লগ্নির ব্যবসায়, কিন্ত্ত হাসপাতাল অথবা সরকারি ইস্কুলে ভর্তি হতে দালাল-টালাল দরকার হয় না৷ এই হল পার্থক্য৷
আমেদাবাদের কতকগুলি স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের কথাও লেখক বলেছেন৷ মোঘল আমলের থেকে পুরনো এই শহরে একটা স্থানীয় আত্মশাসন ব্যবস্থা ছিল, দালাল আর চামচাদের অভ্যুদয়ের আগে৷ শহরে ছিল অনেকগুলি 'পোল' (পল্লি ), প্রতিটির নির্বাচিত পঞ্চায়েত ছিল, তাদের কাজ ছিল জল সরবরাহের জন্য কুয়ো , টোল-পাঠশালা, পাড়ার সুরক্ষার জন্য পাহারাদারি ইত্যাদি দেখাশুনা করা৷ পাশাপাশি ছিল নির্বাচিত মহাজন -সঙ্ঘ যারা ব্যবসায়িক ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী৷
লেখক এই ব্যবস্থাটিকে বাড়াবাড়ি করে প্রশংসা করেছেন, স্পোডেক, জিলিয়ন, ইত্যাদি লেখকদের গবেষণায় অন্য রকম ছবি পাওয়া যায় --- বিশেষ ওই ব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক চরিত্র৷ যাই হোক বেরেনশট-এর মতে স্বাধীনতার পর থেকে প্রাচীন ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটতে থাকে, নূতন স্বায়ত্ব শাসন ও নূতন জনসেবার প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সঙ্গে দালাল ও চামচাদের উত্থান হল আমেদাবাদে৷ তার মতে আগে যারা মহাজন সঙ্ঘ এবং পঞ্চ (পঞ্চায়েত)-এর মোড়ল ছিল তারা ব্যবসা, আইন, প্রশাসন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করে গণ্যমান্য হয়ে থাকত, কিন্ত্ত এখন আমেদাবাদের পোলগুলিতে গণ্যমান্য যারা তাদের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি কেবল বহিঃস্থ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাখামাখির জন্য৷
অর্থনৈতিক অভাব এবং আমেদাবাদের পল্লীর ইতিহাস, এই দুই কারণ বেরেনশট তুলে ধরেছেন দালাল-চামচাদের রাজত্ব ব্যাখ্যা করতে৷ কিন্ত্ত এর সঙ্গে দাঙ্গার সম্পর্ক কি? 'পারস্পরিক সুবিধাদানের রাজনীতি', 'অর্থশক্তি ও পেশি-শক্তি' এবং 'মধ্যস্থতা ও আইডেনটিটি পলিটিক্স্' পরিচ্ছেদগুলিতে বেরেনশট সেটা ব্যাখ্যা করেছেন৷ রাস্তার একটা রাজনীতি আছে --- প্রতি পোলে বা 'চণ্ডলে' (শ্রমিকদের বাসস্থান), রাস্তার ধারে 'ওটলা' (রোয়াক গোছের, বা পাথরের বেঞ্চি) দালালদের কর্মক্ষেত্র , 'দাদা' এবং 'মাথাভারি' (গুন্ডা) দলের সঙ্গে সেখানেই তাদের যোগাযোগ, সরকারের ছোটোখাটো কর্মচারীর 'চা-পানি' (বকসিস) পায় তাদেরই হাত থেকে, সাধারণ লোক রাস্তা থেকে নেতাদের 'প্রভাব' ব্যবহার করতে পারে চামচাদের মাধ্যমে, ইত্যাদি৷ অপর দিকে বিধানসভার, নেতৃবৃন্দের, ভারতীয় জাতীয় দলগুলির একটা রাজনীতি রয়েছে৷ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, বেরেনশট দেখেছেন, কেননা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থার প্রয়োজন, সুবিধার ভার অনুসারে, উচ্চ থেকে উচ্চতর 'প্রভাব'৷ আর প্রভাবশালীদের প্রয়োজন রাস্তার রাজনৈতিকদের, নির্বাচনে সময় কেবল নয়, ক্ষমতা সংগ্রহ ও ব্যবহারের প্রাত্যহিক ক্ষেত্রে৷ উঁচু মহলে রাস্তার দালালদের 'হফ্তা' না-ও পৌঁছতে পারে, কিন্ত্ত দালাল -চামচাদের লোক জড় করার ক্ষমতা, কিংবা 'দাদাদের' যে ক্ষমতা আছে 'ধক্' (সাধারণ মানুষের মনে ভীতি) সৃষ্টি করার, সেগুলি প্রয়োজন৷ কেবল দাঙ্গার সময় এটা সত্য নয়, প্রতি দিনের জীবনে এটা সত্য৷
এই যে যৌথ কারবার সেটা কংগ্রেস যখন আমেদাবাদে প্রতাপশালী তখনও ছিল৷ ১৯৫৬ সাল থেকে কংগ্রেস আমেদাবাদে হটে যেতে শুরু করে --- তখন 'মহা গুজরাট' আন্দোলনের বিপক্ষে কংগ্রেস পার্টি, কিন্ত্ত গুজরাটের জনতা ইন্দুলাল যাজ্ঞিক-এর নেতৃত্বে বোম্বাই থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র গুজরাট প্রদেশ চায়, শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে হল সেই দাবি, কিন্ত্ত কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা সেই থেকে নিম্নগামী৷ তা ছাড়া বহু গুজরাট নেতা মোরারজি দেশাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দিরা কংগ্রেসের বিরোধিতা করে, তখন অন্তর্দ্বন্দ্বে দলের ক্ষতি হয়৷ মাধবসিং শোলাংকি জাতপাতের রাজনীতি করে ১৯৮০-৮৫ সালে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন কিন্ত্ত হয়তো নৈতিক ক্ষতি হয়েছিল এবং সেই একই কৌশলে সঙ্ঘ পরিবার কংগ্রেসকে শীঘ্রই টেক্কা দেয়৷ ১৯৮৫-এর পর থেকে কংগ্রেস গুজরাটে কোনও নির্বাচনে চল্লিশ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে ভোট ১৯৮০ সালে ১৪ শতাংশ থেকে ১৯৯৫ সালে ২২ শতাংশে পৌছায়৷
সরকার দখল করার পর সঙ্ঘ পরিবার ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা বাড়িয়েছে, সেটাই তো ব্যবস্থা ক্ষমতার সমীপবর্তী মধ্যস্থ আর সুযোগ-সুবিধা প্রার্থীদের মধ্যে৷ স্বার্থের সম্বন্ধ -বন্ধন আরও জোরদার হতে বাধ্য, রাজনৈতিক আদর্শ বন্ধন যদি না-ও থাকে৷ লক্ষনীয় যে বেরেনশট লিখেছেন যে সমস্যাটা কেবল কংগ্রেস বনাম ভাজপা হিসেবে ভাবলেই চলবে না, ভাবতে হবে যে ব্যবস্থা, যে রাজনৈতিক কাঠামো, যে প্রাত্যহিক জীবনের মধ্যে সুবিধা ও সমর্থনের আদান-প্রদান চালু রয়েছে সেই বিষয়ে৷ সেখানেই রয়েছে আসল সমস্যা, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব তার বাহ্যিক প্রকাশ মাত্র৷এই গবেষণা দু'এক বিষয়ে সমালোচনার উদ্রেক করতে পারে৷ যথা সরকারি প্রশাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগের জায়গাটা অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে, বোধ হয় এর কারণ আমেদাবাদ রাজধানী নয় এবং উচ্চ স্তরের আমলা মঞ্চে অনুপস্থিত৷ লেখক বর্ণিত প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতির মধ্যে গরিব মানুষদের কথাটা আরও ভাবার দরকার ছিল৷ লেখক যে দু'পাতা লিখেছেন এ বিষয়ে সেটা যথেষ্ট নয়৷ জনসেবার যেটুকু ব্যবস্থা সরকার করে, গরিবদেরই সেটা দরকার সবচেয়ে বেশি, তারাই মধ্যস্থতার রাজনীতিতে সহজ শিকার, তাদেরই চোখে দালাল আর দাদারা সবচেয়ে শক্তিমান, শিক্ষার অভাবে গরিবদের পক্ষে সরকারি দপ্তর আর আমলাদের কাছে দস্ত্তর মতন চিঠি আর আবেদন করা সহজ নয় , তাদের প্রাপ্য দাবি আদায় করতে দালাল ভিন্ন তাদের গতি নেই --- এ সব মনে না রাখলে মনে হতে পারে যে গরিব মানুষেরা স্বেচ্ছায় এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার অংশীদার৷ রাজনীতির এই ধরনের নৃতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজন ছিল এবং প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতি বিষয়ে এই বইটি পথপ্রদর্শক৷হিন্দু-মুসলিম ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান স্টেট ওয়র্ড বেরেনশট ৷ রেনলাইট / রূপা৷ ৪৯৫ টাকা৷
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, দাঙ্গার দ্বারা রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা যায় কি না এই এক্সপেরিমেন্ট চলছে৷ এই পরীক্ষার ফল এখনও জানা যায়নি, কিন্ত্ত ল্যাবরেটরিতে যেমন এক্সপেরিমেন্ট-এর জন্য জীবহত্যা করা হয় তেমনই চলছে রাজধানীর রাস্তায় মানুষের প্রাণ নিয়ে৷ পশ্চিম এশিয়ায় অনেকগুলি দেশে অনুরূপ মোড় নিয়েছে রাস্তার রাজনীতি৷ প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিজেদের দেশে রাস্তার রাজনীতি এতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, যে নিয়ত আশঙ্কা হয় যে দাঙ্গাবাজরা শীঘ্রই মাঠে নেমে পড়বে৷ এই পরিস্থিতিতে দাঙ্গা ও রাজনীতি সম্বন্ধে ওয়ার্ড বেরেনশট-এর লেখা বইটি নিতান্তই প্রাসঙ্গিক৷
২০০১ সাল থেকে বেরেনশট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সম্বন্ধে গবেষণা শুরু করেন৷ ২০০২ সালে ঘটল সবচেয়ে কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ তিনি ২০০৫-০৬ সালে দাঙ্গা বিধ্বস্ত আমেদাবাদে বাস করেছেন, গুজরাটি ভাষা শিখেছেন এবং গত কয়েক বছর দাঙ্গাপীড়িত অথবা দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের কাছ থেকে দাঙ্গার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ অনেকের নাম তিনি প্রকাশ করতে অপারগ, কেননা তাঁদের বিপদ ঘটতে পারে৷ তিনি লিখছেন যে, এই বই তার পক্ষে লেখা অসম্ভব হত যদি না 'অনেক মানুষ তাদের জীবনে আমাকে প্রবেশ করতে দিত'৷
যদিও সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে বেরেনশট নিজেকে প্রয়োজনীয় নিরপেক্ষতার দূরত্বের গণ্ডির মধ্যে রাখতে চেষ্টা করেছেন, তবু এটা স্পষ্ট যে দলীয় বিবাদের বাইরে থাকলেও তিনি নৈতিক বিতর্কের বাইরে অবস্থান করেন না৷ তিনি আশা করেন যে তার এই বইটি ক্রুদ্ধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে, কেবলমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করার অভ্যেসের পরিবর্তে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার পৌনঃ পৌনিক ধারা কী কারণে উদ্ভূত হয়েছে তার বিচার বিবেচনা করতে সাহায্য করবে৷ সবচেয়ে ভালো লাগে এই দেখে যে এই সমাজবিজ্ঞানী প্রথাগত গবেষণার বাইরে প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে সমাজ এবং মানুষের দিকে তাকিয়েছেন৷ 'আমি মহল্লার নেতাদের সঙ্গে সরকারি অফিসে যেতাম, আমি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়েছি, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে চা নাস্তা করেছি, সন্ধ্যায় পথের ধারে পাথরের বেঞ্চে বসে বন্ধু-প্রতিবেশীদের কাছে স্থানীয় গুন্ডাদের কীর্তি সম্বন্ধে গপ্পো শুনেছি , আবার সাংবাদিক, সরকারি অফিসার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের ইন্টারভিউ করেছি'৷
মোটামুটি বইটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ প্রথম, সমাজ এবং সরকারের মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয়৷ দ্বিতীয়, প্রাত্যহিক জীবনে সরকারে সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এবং তৃতীয়, মধ্যস্থতা অথবা দালালি এবং রাজনীতি৷
কিন্ত্ত এই সব শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে যে এ সব বাঁধা বুলি, অধ্যাপকেরা যা হরদম আওড়ে থাকেন৷ কিন্ত্ত গবেষণার ফল ধীরে প্রকাশ পায় লেখকের প্রত্যক্ষ নৃতাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার মধ্যে৷ যেমন তৃতীয় পরিচ্ছেদ, 'চামচাদের আবির্ভাব'৷ একজন স্থানীয় মোড়ল ও তার অনুগত কয়েকজন সারা দিন কী করে লেখক তালিকাবদ্ধ করেছেন৷ এদের কাজ হল মূলত দালালি --- অথবা মধ্যস্থতা শোনায় ভালো৷ মধ্যস্থতা দরকার দুই পক্ষের মধ্যে --- এক পক্ষে সাধারণ মানুষ , অপর দিকে হাসপাতাল, ইস্কুল, মিউনিসিপ্যালিটি, রেশনের দোকান, ইত্যাদির কর্তৃপক্ষ৷ অনেক সময়ে কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত, দু'জন স্থানীয় মানুষের সম্পত্তির বিবাদ, কিংবা বিয়ে-সাদি নিয়ে গোলমাল, কিংবা ভাড়াটে উচ্ছেদ এ সব ব্যাপারেও মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়, তবে এ সব সংখ্যায় কম৷ আসলে দালালির কাজটা হল সরকারি বা প্রায়-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ-স্থাপন এবং তাদের যে জনসেবা দেয় সাধারণ মানুষকে সেটা পাইয়ে দেওয়া৷ এ জন্য মধ্যস্থ সর্বদা নানা সার্টিফিকেট লেখে, চিঠির মুসাবিদা করে দেয়, যোগাযোগ করে দেয় ইত্যাদি৷ এবং চামচারা নীচের মহলে মধ্যস্থতা করে৷
এই ছবিটা আমরা হাড়ে হাড়ে চিনি সুতরাং এই পর্যন্ত গবেষণা জলবত্ তরলং৷ কিন্ত্ত এই চমত্কার ব্যবস্থা আমেদাবাদে অথবা অন্যত্র এমন জবরদস্ত হয়ে বসল কী ভাবে? লেখকের উত্তর এই: গণতন্ত্রের মহিমায় জনকল্যাণ সরকারের কর্মসূচীতে ঢুকেছে৷ কিন্ত্ত জনসংখ্যা ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের সংখ্যার তুলনায় জনসেবার পরিকাঠামো ও অর্থব্যয় এখনও অতি সামান্য৷ সে জন্য অর্থব্যয় করতে সরকার অনিচ্ছুক না হলেও অপারগ৷ সুতরাং জনকল্যাণের দৌলতে যা বিতরিত হয় জনসাধারণের কাছে তার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেক সময় সব লোক সেটা পায় না, কেউ কেউ পায়৷ ঠিক যেমন বাজারে কোনও মাল না পাওয়া গেলে ব্ল্যাক মার্কেট হয়, তেমনই অবস্থা৷ অভাবের দেশে সকলেই যদি প্রাপ্য না পায় তবে কে কে পাবে এটা মধ্যস্থতার দ্বারা নির্ণীত হয়৷
অনেক সময় আমরা ইউরোপ আমেরিকা ইত্যাদি নাম আওড়ে বলি যে সেখানে এই রকম দালালি তো নেই৷ তার মানে কি সাহেবরা এ সব নীতি -বিগর্হিত ব্যাপারের বিরুদ্ধে, তাদের আমাদের চেয়ে উচ্চতর নীতিবোধ রয়েছে? তা নয়, তাদের দেশে এমন অভাবটা নেই, জনসেবার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত, পাইয়ে দেওয়ার দালালদের জায়গা বিশেষ নেই, এবং এই ব্যবস্থা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বলে লোকেরা সাময়িক অভাব হলেও দালাল-চামচাদের দেখা পায় না৷ ও সব দেশে আরও উঁচু স্তরে নীতিবিহীন কাজ যথেষ্ট চলে, যেমন ব্যাঙ্ক ও বড়ো মাপের লগ্নির ব্যবসায়, কিন্ত্ত হাসপাতাল অথবা সরকারি ইস্কুলে ভর্তি হতে দালাল-টালাল দরকার হয় না৷ এই হল পার্থক্য৷
আমেদাবাদের কতকগুলি স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের কথাও লেখক বলেছেন৷ মোঘল আমলের থেকে পুরনো এই শহরে একটা স্থানীয় আত্মশাসন ব্যবস্থা ছিল, দালাল আর চামচাদের অভ্যুদয়ের আগে৷ শহরে ছিল অনেকগুলি 'পোল' (পল্লি ), প্রতিটির নির্বাচিত পঞ্চায়েত ছিল, তাদের কাজ ছিল জল সরবরাহের জন্য কুয়ো , টোল-পাঠশালা, পাড়ার সুরক্ষার জন্য পাহারাদারি ইত্যাদি দেখাশুনা করা৷ পাশাপাশি ছিল নির্বাচিত মহাজন -সঙ্ঘ যারা ব্যবসায়িক ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী৷
লেখক এই ব্যবস্থাটিকে বাড়াবাড়ি করে প্রশংসা করেছেন, স্পোডেক, জিলিয়ন, ইত্যাদি লেখকদের গবেষণায় অন্য রকম ছবি পাওয়া যায় --- বিশেষ ওই ব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক চরিত্র৷ যাই হোক বেরেনশট-এর মতে স্বাধীনতার পর থেকে প্রাচীন ব্যবস্থার অবক্ষয় ঘটতে থাকে, নূতন স্বায়ত্ব শাসন ও নূতন জনসেবার প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সঙ্গে দালাল ও চামচাদের উত্থান হল আমেদাবাদে৷ তার মতে আগে যারা মহাজন সঙ্ঘ এবং পঞ্চ (পঞ্চায়েত)-এর মোড়ল ছিল তারা ব্যবসা, আইন, প্রশাসন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করে গণ্যমান্য হয়ে থাকত, কিন্ত্ত এখন আমেদাবাদের পোলগুলিতে গণ্যমান্য যারা তাদের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি কেবল বহিঃস্থ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মাখামাখির জন্য৷
অর্থনৈতিক অভাব এবং আমেদাবাদের পল্লীর ইতিহাস, এই দুই কারণ বেরেনশট তুলে ধরেছেন দালাল-চামচাদের রাজত্ব ব্যাখ্যা করতে৷ কিন্ত্ত এর সঙ্গে দাঙ্গার সম্পর্ক কি? 'পারস্পরিক সুবিধাদানের রাজনীতি', 'অর্থশক্তি ও পেশি-শক্তি' এবং 'মধ্যস্থতা ও আইডেনটিটি পলিটিক্স্' পরিচ্ছেদগুলিতে বেরেনশট সেটা ব্যাখ্যা করেছেন৷ রাস্তার একটা রাজনীতি আছে --- প্রতি পোলে বা 'চণ্ডলে' (শ্রমিকদের বাসস্থান), রাস্তার ধারে 'ওটলা' (রোয়াক গোছের, বা পাথরের বেঞ্চি) দালালদের কর্মক্ষেত্র , 'দাদা' এবং 'মাথাভারি' (গুন্ডা) দলের সঙ্গে সেখানেই তাদের যোগাযোগ, সরকারের ছোটোখাটো কর্মচারীর 'চা-পানি' (বকসিস) পায় তাদেরই হাত থেকে, সাধারণ লোক রাস্তা থেকে নেতাদের 'প্রভাব' ব্যবহার করতে পারে চামচাদের মাধ্যমে, ইত্যাদি৷ অপর দিকে বিধানসভার, নেতৃবৃন্দের, ভারতীয় জাতীয় দলগুলির একটা রাজনীতি রয়েছে৷ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, বেরেনশট দেখেছেন, কেননা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থার প্রয়োজন, সুবিধার ভার অনুসারে, উচ্চ থেকে উচ্চতর 'প্রভাব'৷ আর প্রভাবশালীদের প্রয়োজন রাস্তার রাজনৈতিকদের, নির্বাচনে সময় কেবল নয়, ক্ষমতা সংগ্রহ ও ব্যবহারের প্রাত্যহিক ক্ষেত্রে৷ উঁচু মহলে রাস্তার দালালদের 'হফ্তা' না-ও পৌঁছতে পারে, কিন্ত্ত দালাল -চামচাদের লোক জড় করার ক্ষমতা, কিংবা 'দাদাদের' যে ক্ষমতা আছে 'ধক্' (সাধারণ মানুষের মনে ভীতি) সৃষ্টি করার, সেগুলি প্রয়োজন৷ কেবল দাঙ্গার সময় এটা সত্য নয়, প্রতি দিনের জীবনে এটা সত্য৷
এই যে যৌথ কারবার সেটা কংগ্রেস যখন আমেদাবাদে প্রতাপশালী তখনও ছিল৷ ১৯৫৬ সাল থেকে কংগ্রেস আমেদাবাদে হটে যেতে শুরু করে --- তখন 'মহা গুজরাট' আন্দোলনের বিপক্ষে কংগ্রেস পার্টি, কিন্ত্ত গুজরাটের জনতা ইন্দুলাল যাজ্ঞিক-এর নেতৃত্বে বোম্বাই থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র গুজরাট প্রদেশ চায়, শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে হল সেই দাবি, কিন্ত্ত কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা সেই থেকে নিম্নগামী৷ তা ছাড়া বহু গুজরাট নেতা মোরারজি দেশাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দিরা কংগ্রেসের বিরোধিতা করে, তখন অন্তর্দ্বন্দ্বে দলের ক্ষতি হয়৷ মাধবসিং শোলাংকি জাতপাতের রাজনীতি করে ১৯৮০-৮৫ সালে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন কিন্ত্ত হয়তো নৈতিক ক্ষতি হয়েছিল এবং সেই একই কৌশলে সঙ্ঘ পরিবার কংগ্রেসকে শীঘ্রই টেক্কা দেয়৷ ১৯৮৫-এর পর থেকে কংগ্রেস গুজরাটে কোনও নির্বাচনে চল্লিশ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে ভোট ১৯৮০ সালে ১৪ শতাংশ থেকে ১৯৯৫ সালে ২২ শতাংশে পৌছায়৷
সরকার দখল করার পর সঙ্ঘ পরিবার ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা বাড়িয়েছে, সেটাই তো ব্যবস্থা ক্ষমতার সমীপবর্তী মধ্যস্থ আর সুযোগ-সুবিধা প্রার্থীদের মধ্যে৷ স্বার্থের সম্বন্ধ -বন্ধন আরও জোরদার হতে বাধ্য, রাজনৈতিক আদর্শ বন্ধন যদি না-ও থাকে৷ লক্ষনীয় যে বেরেনশট লিখেছেন যে সমস্যাটা কেবল কংগ্রেস বনাম ভাজপা হিসেবে ভাবলেই চলবে না, ভাবতে হবে যে ব্যবস্থা, যে রাজনৈতিক কাঠামো, যে প্রাত্যহিক জীবনের মধ্যে সুবিধা ও সমর্থনের আদান-প্রদান চালু রয়েছে সেই বিষয়ে৷ সেখানেই রয়েছে আসল সমস্যা, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব তার বাহ্যিক প্রকাশ মাত্র৷এই গবেষণা দু'এক বিষয়ে সমালোচনার উদ্রেক করতে পারে৷ যথা সরকারি প্রশাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগের জায়গাটা অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে, বোধ হয় এর কারণ আমেদাবাদ রাজধানী নয় এবং উচ্চ স্তরের আমলা মঞ্চে অনুপস্থিত৷ লেখক বর্ণিত প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতির মধ্যে গরিব মানুষদের কথাটা আরও ভাবার দরকার ছিল৷ লেখক যে দু'পাতা লিখেছেন এ বিষয়ে সেটা যথেষ্ট নয়৷ জনসেবার যেটুকু ব্যবস্থা সরকার করে, গরিবদেরই সেটা দরকার সবচেয়ে বেশি, তারাই মধ্যস্থতার রাজনীতিতে সহজ শিকার, তাদেরই চোখে দালাল আর দাদারা সবচেয়ে শক্তিমান, শিক্ষার অভাবে গরিবদের পক্ষে সরকারি দপ্তর আর আমলাদের কাছে দস্ত্তর মতন চিঠি আর আবেদন করা সহজ নয় , তাদের প্রাপ্য দাবি আদায় করতে দালাল ভিন্ন তাদের গতি নেই --- এ সব মনে না রাখলে মনে হতে পারে যে গরিব মানুষেরা স্বেচ্ছায় এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার অংশীদার৷ রাজনীতির এই ধরনের নৃতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজন ছিল এবং প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতি বিষয়ে এই বইটি পথপ্রদর্শক৷হিন্দু-মুসলিম ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান স্টেট ওয়র্ড বেরেনশট ৷ রেনলাইট / রূপা৷ ৪৯৫ টাকা৷
No comments:
Post a Comment